
বিশ্বজুড়ে রেকর্ডসংখ্যক সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে গত বছর ২০২৪ সালে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সাংবাদিক ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন।
সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে সংগঠনটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বের ১৮টি দেশে অন্তত ১২৪ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। সিপিজে’র হিসাবে, এটি তাদের তিন দশকের তথ্যসংগ্রহের ইতিহাসে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর।
এর আগে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে রক্তাক্ত বছর ছিল ২০০৭। ওই বছর ১১৩ জন সংবাদকর্মী নিহত হন, যাদের প্রায় অর্ধেকই ইরাক যুদ্ধের শিকার হয়েছিলেন।
সিপিজের প্রধান জোডি গিন্সবার্গ বলেন, সিপিজের ইতিহাসে আজকের সময় সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। তিনি আরও বলেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ সাংবাদিকদের ওপর নজিরবিহীন প্রভাব ফেলেছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সংবাদকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে বৈশ্বিক মানদণ্ডের বড় ধরনের অবনতি ঘটিয়েছে। তবে সাংবাদিকদের জন্য হুমকি কেবল গাজায় সীমাবদ্ধ নয়।
সিপিজের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অন্তত ৮৫ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৮২ জনই ছিলেন ফিলিস্তিনি।
সংগঠনটির অভিযোগ, ইসরায়েল সাংবাদিক হত্যার তদন্তে বাধা দিয়েছে এবং মৃত্যুর জন্য উল্টো ভুক্তভোগীদেরই দায়ী করছে। এছাড়া, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনতেও ব্যর্থ হয়েছে তারা।
২০২৪ সালে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হিসেবে যৌথভাবে দ্বিতীয়স্থান দখল করেছে সুদান ও পাকিস্তান। সেখানে ছয়জন করে সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন।
সিপিজে আরও জানায়, অন্তত ২৪ জন সাংবাদিককে তাদের পেশাগত কাজের কারণে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, যা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ‘টার্গেট কিলিং’ বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা ও লেবাননে ১০ জন সাংবাদিককে হত্যা করেছে। এছাড়া হাইতি, মেক্সিকো, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মোজাম্বিক, ভারত, ইরাক ও সুদানে আরও ১৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। ২০২৪ সালে নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে ৪৩ জন ছিলেন ফ্রিল্যান্সার, যা মোট সংখ্যার ৩৫ শতাংশের বেশি। তাদের মধ্যে ৩১ জনই গাজার বাসিন্দা ছিলেন।
সিপিজে জানিয়েছে, ২০২৫ সালেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে।
গত ১৫ জানুয়ারি গাজার খান ইউনিসে একটি দাতব্য সংস্থার কার্যালয়ে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ছয়জন নিহত হন, যাদের মধ্যে সাংবাদিক আহমাদ আল-শায়াহও ছিলেন।