শনিবার ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: ঝিনাইদহে অবৈধ পলিথিনসহ পিকআপ জব্দ।   এন্ডোসকপির পর খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ বন্ধ, শাশুড়িকে দেখে মায়ের বাসায় জোবাইদা   আগামীর বাংলাদেশ হবে কুরআনের বাংলাদেশ: জামায়াত আমির   খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়ার আয়োজন রাষ্ট্রপতির   খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে জার্মানি থেকে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স    বাংলাদেশে এলো তারেক রহমানের বুলেটপ্রুফ গাড়ি, দাম কত?   হেলিকপ্টারে বিমানবন্দর যাবেন খালেদা, মধ্যরাতে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফর: উন্মোচিত হচ্ছে অপার সম্ভাবনার দুয়ার
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ৭:৩০ পিএম আপডেট: ১৭.০৯.২০২৫ ৯:৩৩ PM

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

প্রথম দ্বিপক্ষীয় তিন দিনের সফর শেষে চীন থেকে দেশে ফিরেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তার এই সফরকে ঘিরে কাছের-দূরের বেশ কয়েকটি দেশের কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট-পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে নজিরবিহীন টানাপোড়েন, এই অঞ্চলকে ঘিরে ভূরাজনীতির কারণেই সফরটা ঘিরে এমন মনোযোগ।

সফরকালে গত বুধবার একটি মিডিয়া গ্রুপকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, তার সফরে বাণিজ্য ও উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ এই বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে। রাজনৈতিক কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের সরকার অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার তো দীর্ঘ মেয়াদে থাকবে না। এটা নিয়ে হয়তো কারও মনে দ্বিধা থাকতে পারে যে সরকার কত দিন থাকবে। এই সময়ে বিনিয়োগ বা চুক্তিতে যাওয়া কতটুকু লাভজনক হবে, কিংবা টেকসই হবে ইত্যাদি। আমার মনে হয়, আমার এই সফরের মাধ্যমে এই ধরনের যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল, সেগুলো খুব সহজে দূর করা গেছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীর বছর ২০২৫-এ দুই দেশের নানামুখী পারস্পরিক পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বেইজিং সফরকে ঘিরে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন প্রস্তাব পেয়েছে ঢাকা। চীনের দেওয়া ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১০ বছর বাড়িয়ে ৩০ করতে ঢাকার অনুরোধে সাড়া দিয়েছে বেইজিং; সুদহার কমানোর বিষয়ে বিবেচনারও আশ্বাস এসেছে। আগামী ২৭ ও ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে অনুষ্ঠেয় বাও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দিতে ইতোমধ্যে ড. ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন। ড. ইউনূস তাতে যোগ দিলে অপার সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন বিষেশজ্ঞরা।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, অনেকটা অনানুষ্ঠানিকভাবেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত খোঁজখবর নিয়েছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কতটা নিবিড় হতে চলেছে, তা দেশ দুটি জানাবোঝার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পরিম-লসহ কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিস্তৃত হতে পারে, সেটা বুঝতে চেয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন চীনের উদ্দেশে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার রওনা হওয়ার আগের দিন তিনি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসার আগে ও পরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা দিল্লি সফর করেছিলেন। পরে ঢাকা ও ওয়াশিংটনে নানা স্তরে আলোচনাগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি ঢাকা-দিল্লির দূরত্ব কমাতে মার্কিন কর্মকর্তারা নিজেদের আগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ করেন। ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে দূরত্ব দূর করার পাশাপাশি ওয়াশিংটন এটিও চাইছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে দিল্লির সাথে সম্পর্কের অবনতির সুযোগে চীনের প্রভাব যাতে ঢাকায় না বাড়ে। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরের আলোচনায় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ যাতে বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে না পড়ে, সে বার্তাটি যুক্তরাষ্ট্র দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গত ২০ জানুয়ারি থেকে চীন সফর শেষে গতকাল শুক্রবার দেশে ফিরেছেন। তিনি ২১ জানুয়ারি বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে চায়না মিডিয়া গ্রুপ বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মো. তৌহিদ হোসেন জানান, দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা ও ব্যাপ্তি অনেক বেশি। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা ও সম্পর্ক আছে। আলোচনায় সব বিষয় এসেছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য ও উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ এই বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে। 

দুই দেশের সম্পর্কের ধারাবাহিকতার প্রসঙ্গ টেনে তৌহিদ হোসেন বলেন, এই সফরে যাদের (সরকারি পরিসরে) সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে, তাদের বলেছি-বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কোনো বিশেষ সরকার বা রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভর করে না। ১৯৭৫ সালে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর আমরা এ বছর সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী পালন করছি। আমাদের সরকার অনেক বার পরিবর্তন হয়েছে। সরকারের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কখনোই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। যেকোনো পরিস্থিতিতেই প্রতিটি সরকার চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি এটুকু সফলভাবে বোঝাতে পেরেছি (চীন সরকারকে) দুই দেশের সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় আমরা যেসব সিদ্ধান্ত নেব, সেগুলো পরবর্তী সরকার ঠিকমতো অনুসরণ করে যাবে। সম্পর্কের এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চীনে সরকারি সফররত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন ন্যায়সঙ্গত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য চীনের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির উপর জোর দিয়েছেন। সাংহাইয়ের সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (এসআইআইএস)-তে ‘শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি’-শীর্ষক এক সেমিনারে মূল বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বিশ্ব শান্তির জন্য একটি ভবিষ্যৎমুখী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন এবং টেকসই উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ভিত্তি হিসেবে অর্থনৈতিক সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর জোর দেন। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করে বলেন, শান্তি ও নিরাপত্তা হচ্ছে আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক কাঠামো ও প্রতিনিধিত্বহীন গোষ্ঠী বিশেষ করে যুব ও মহিলাদের ক্ষমতায়নের উপর আরও বেশি জোর দেওয়ার দাবি করে।

রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে, তৌহিদ হোসেন রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরির উপর জোর দেন।

তিনি বলেন, সংঘাতের সমাধানে বাংলাদেশ ও চীন উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে এবং সমাধানে আমাদের অবশ্যই আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। উপদেষ্টা বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে গভীর ঐতিহাসিক সম্পর্ক তুলে ধরেন, যা প্রাচীনকাল থেকে শুরু হয়েছে এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ সম্পর্ক একটি গতিশীল অংশীদারিত্বে রূপান্তরিত হয়েছে।

তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে চীনের উন্নয়ন সহায়তা ও বিনিয়োগের রূপান্তরমূলক ভূমিকার উপর জোর দেন, যা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মতো বাংলাদেশের সফল সামাজিক উদ্যোগগুলি তুলে ধরেন, যা গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন করেছে, সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তুলেছে। তিনি যুবসমাজের উন্নয়নে অনুরূপ রূপান্তরমূলক প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।

অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের জন্য, তিনি বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালীকরণ, বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, জনগণের সঙ্গে জনগণের আদান-প্রদান আরও গভীর করা এবং বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। এসআইআইএস সভাপতি ড. চেন ডংশিয়াওয়ের স্বাগত ভাষণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। তিনি বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিক ও ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের উপর আলোকপাত করেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও গবেষণা সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এবং বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে দুই দেশের ভূমিকা সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, তরুণ গবেষক, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, এসআইআইএস-এর ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব ও বিশেষজ্ঞবৃন্দ এবং সাংহাই পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে মূল অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এসআইআইএস -এর অ্যাকাডেমিক উপদেষ্টা বোর্ডের পরিচালক ডঃ ইয়াং জিমিয়ান বক্তব্য রাখেন এবং ছয়জন বিখ্যাত বিশেষজ্ঞের উপস্থাপনা ছিল উল্লেখযোগ্য। 

বিশেষজ্ঞরা অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন থেকে শুরু করে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন। পরবর্তী অধিবেশনে সমৃদ্ধ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলামের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com