
মিয়ান আরেফি নিজেকে শুধু আমেরিকার প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাই পরিচয় দেননি, তার ফেসবুকে ‘মেম্বার অব ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক কমিটি’ পরিচয় লেখা রয়েছে। তবে তা ভুল বানানে। এই পরিচয় দ্বিতীয় স্ত্রী ও সৎ সন্তানদের সাথে কেক কেটে জন্মদিনও পালন করেছেন তিনি। এ সংক্রান্ত ছবি ও ভিডিও ভোরের পাতার হাতে এসেছে।
তবে, লিংকডইন প্রোফাইলে তার পরিচয় লেখা, ‘Store Team Lead at Big Lots Stores’। অর্থাৎ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল চেইন শপ বিগ লটস স্টোর-এর একটি স্টোরের টিম লিড।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ান আরেফি সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি বিএনপি নেতা আকবর আলীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। হাটিকুমরুল ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি কাওসার আলী জানান, আকবর আলী আমেরিকায় গেলে আরেফির বাসাতেই উঠতেন। এ বিষয়ে কথা বলতে আকবর আলীকে বারবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
স্থানীয়রা জানান, উল্লাপাড়ার হাটিকুমরুলের মানিকদিয়ার গ্রামের রওশন মণ্ডল প্রায় ৪০ বছর আগে আমেরিকায় গিয়ে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হন। রওশন মণ্ডল আমেরিকাতেই মারা যান। মিয়ান আরেফিসহ তার ছয় ছেলে ও চার মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। সলঙ্গা থানার ওসি এনামুল হক জানান, জাহিদুল ইসলাম আরেফি এলাকায় বেল্লাল নামে পরিচিত। তিনি ছাত্রাবস্থাতেই পরিবারের সঙ্গে আমেরিকায় যান। গ্রামে এলে তিনি নিজেকে জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দেন। মানিকদিয়ার গ্রাম বা উল্লাপাড়ায় তার কোনো বাড়ি নেই। দাদা-দাদির জন্য দোয়া মাহফিল করতে গত জুলাইয়ে এলাকায় এসেছিলেন। তখন তিনি উল্লাপাড়া ডাকবাংলোয় অবস্থান করেন।
মিয়ান আরেফিকে আটকের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ওই ব্যক্তিকে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবির হেফাজতে দিয়েছে। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে ডিবিপ্রধান বলেন, তিনি আমেরিকার নাগরিক, ওয়াশিংটন ডিসিতে থাকেন। গত বছর দেশে এসে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর ৬ মাস ধরে বারিধারায় দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে ছিলেন। সেখানে হাঁটতে গিয়ে অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল হাসান সারওয়ার্দীর সঙ্গে তার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয়। তিনি তাকে বলেছিলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির বড় র্যালি হবে। শনিবার বিএনপির পার্টি অফিসে তিনিই তাকে নিয়ে যান।
বিএনপির কার্যালয়ে বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে মিয়ান আরেফি তথ্য দিয়েছেন জানিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন বলেন, মিয়ান আরেফি জানিয়েছেন, হাসান সারওয়ার্দী, বিএনপি নেতা ইশরাক ও অ্যাডভোকেট বেলাল বিএনপি পার্টি অফিসে তাকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তাকে যে জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া হয়েছে, এটা সত্য নয়। তারা মিথ্যাভাবে তাকে উপস্থাপন করেছেন।
হারুন আরও জানান, মিয়ান আরেফি বলেছেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দী তাকে শিখিয়ে দিয়েছেন, বিএনপি পার্টি অফিসে বক্তব্য দেওয়ার সময়ে যাতে বলা হয়, র্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিতে তিনি সহায়তা করেছেন। এখন পুলিশ, আনসার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্যাংশন দেওয়া হবে। তাকে বলা হয়েছিল, এ কথা বললে পুলিশের মনোবল ভেঙে যাবে এবং বাংলাদেশের মানুষের মনোবলও ভেঙে যাবে। এই কথা বলার পর সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা উৎসাহী হয়েছে বলেও ডিবিকে জানান মিয়ান আরেফি; কিন্তু তিনি জানতেন না যে, ওইদিন পুলিশ মারা গেছে, শত শত মানুষ আহত হয়েছে এবং প্রধান বিচারপতির বাসভবন আক্রান্ত হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা এখন মিয়ান আরেফির দ্বিতীয় স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তাকেও (মিয়ান আরেফি) জিজ্ঞাসাবাদ করব—টাকার বিনিময়ে এসব করেছেন কি না। এরপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, মিয়ান আরেফির জন্মদিনে গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, তার স্ত্রী ফারহানা ইতি এবং তার আগের সংসারের ছেলে মেয়ে। জন্মদিনের কেকে ভুয়া পরিচয় লেখার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে।