
বর্ষার শুরুতে নতুন পানির সঙ্গে খাল-বিল, নদ-নদীতে দেখা মেলে দেশীও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আনাগোনা। আর এসব মাছ শিকারে ব্যবহার হয় চাই বা দুয়ারীর অথবা খাদোইন। পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে জমে উঠেছে এসব মাছ ধরা যন্ত্রের ফাঁদ। উপজেলা শ্রীরামকাঠী, বাবুরহাট, দীঘিরজান বাজারে ঘুরে দেখা গেছে হাজার হাজার মাছ ধরার চাই খুচরা ও পাইকারী বিক্রী করা হচ্ছে।
নাজিরপুর উপজেলা শ্রীরামকাঠী নদীর তীরে সড়কের পাশে জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত সপ্তাহের রবি ও বুধবার দুই দিন চাঁইয়ের হাট বসে। প্রতি হাটে পাঁচ থেকে সাত হাজার চাঁই বিক্রি হয়। সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরে চাঁই সাঁজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। হাটে চাঁই কিনতে এসেছেন কাউখালী, পিরোজপুর সদর, নেছারাবাদ, পাথরঘাটা, বরগুনাসহ বরিশাল অ লের বিভিন্ন জেলা- উপজেলার পাইকার ও খুচরা ক্রেতা এবং আশপাশের কৃষক ও জেলেরা। স্থানীয় চায়ের দোকানদার জানান, শনিবার বিকাল আসা শুরু করে চাই রাতেই বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। ভোর হতেই ক্রেতা বাড়তে থাকে এবং বেলা একটার মধ্যে বেচাকেনা শেষ হয়।
এ সময় সদর উপজেলার কলাখালী গ্রামের পাইকারী ক্রেতা মো. সাইফুল ইসলাম (৪৫) জানান, আমি এক কুড়ি চাই এগাড়,বারো,তেরোশত টাকায় কিনে পনের শত টাকা থেকে শুরু করে আঠারোশত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করবো। তিনি এ চাই কাউখালী, ভান্ডারিয়া, আউম্মা, পাথরঘাটা, বরগুনা সহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। তবে চায়না জালে বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ার কারনে চাইয়ের দাম কম।
ট্রলার যোগে হোগলা গ্রাম থেকে খুচরা চাই কিনতে আসা কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, তিনি চাঁই কেনার জন্য হাঁটে এসেছেন। দুই জোড়া চাই চারশত টাকায় কিনেছেন গত বছরের তুলনায় দাম কম। দাম কম হওয়ার কারন তিনি বলেন, সব পানি কম তাই মাছও কম এজন্য চাইয়ের দাম কম। তিনি আরো জানান, দাম যতই হোক প্রতিবছর বর্ষাকালে চাঁই দিয়ে মাছ ধরার চাই কিনি।
স্থানীয় চাঁই ব্যবসায়ীরা জানান, উপজেলার বিভিন্ন হাটে বর্ষা মৌসুম শুরু হলে চাঁই বিক্রি হয়। সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে চাঁইয়ের হাটে বেচাকেনা বেশি হয়। এ সময় হাটগুলোয় প্রচুর চাঁই ওঠে। তবে এবছর পানি কম, মাছও কম তাই চাই তেমন বিক্রি হচ্ছে না। চাহিদা মত দাম পাচ্ছি না। ঋণ নিয়ে এ কাজ শুরু করি। ঋণের দেনা শোধ করার পর সংসার চালাতে সমস্যা হচ্ছে।
নাজিরপুর উপজেলার জয়পুর, আজালিবুনিয়া, দক্ষিন শ্রীরামকাঠী, আমতলা গ্রামসহ বেশকিছু গ্রামের নারী-পুরুষেরা বাড়িতে বাঁশ দিয়ে চাঁই তৈরি করেন। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে থেকে চাঁই তৈরি শুরু হয়। গ্রাম থেকে ব্যবসায়ীরা চাঁই কিনে হাটে বিক্রি করেন। অনেকে নিজের তৈরি চাঁই হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। বাঁশ, নাইলন বা প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে চাঁই তৈরি করা হয়। প্রতি জোড়া চাঁইয়ের দাম ২০০-৩০০ টাকা।
চাঁই ব্যবসায়ী আজালিয়া বুনিয়া গ্রামের অমল মন্ডল (৩৬) বলেন, সব কিছুর বাঁশের দাম বাড়ায় চাঁইয়ের উৎপাদনব্যয় বেড়ে গেছে। দূর্গাপুর গ্রামের রিপন ডাকুয়া (২৮) বলেন, তল্লা বাঁশ কিনে এনে বাড়িতে তাঁরা চাঁই তৈরি করেন। পরিবারের পাঁচজন এ কাজ করেন। প্রতিদিন একজন চার-পাঁচটি চাঁই তৈরি করতে পারেন। বাড়িতে তৈরি করা চাঁই নাজিরপুরের বিভিন্ন হাটে নিয়ে বিক্রি করেন।
চাঁই ব্যবসায়ী কমল কৃষ্ণ ব্যাপারী (৪৫) বলেন, বর্ষা মৌসুমে জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ তিন মাস চাঁইয়ের হাট জমজমাট থাকে। আষাঢ়ের শুরুতে চাঁই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। এ অ লের হাটগুলোয় চাঁইয়ের পাইকারী ক্রেতাসহ কৃষক, জেলে ও গৃহস্থ পরিবার।