আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা দেশজুড়েই পরিচিত সুমিষ্ট আর নিরাপদ আম উৎপাদনের জন্য। এই জেলার উৎপাদিত আমের কদর বিদেশে থাকলেও, আসেনি কাঙ্খিত সাফল্য। বিদেশে নিরাপদ আম রপ্তানি করতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’।
চলতি বছরে চালু হওয়া এই প্রকল্পটির মাধ্যমে বিদেশে আম রপ্তানিতে আশা দেখাচ্ছে চাষীদের। অন্যান্য বছর নিজ উদ্যোগে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করলেও, সেই আম বিদেশে পাঠাতে না পেরে লোকসানের মুখে পড়েছিলেন চাষীরা। তবে এবার সরকারি প্রকল্প থাকায় আম রপ্তানির নিশ্চয়তা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে ভালো হলেও আম রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান অশানুরুপ নয়। বিদেশের মার্কেটে বাংলাদেশের আমের চাহিদা থাকলেও আইন কানুনের মাইর-প্যাঁচে চাষীরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারে না। আমের উৎপাদন বেশি হলেও, কাঙ্খিত মূল্য না পেয়ে হতাশায় ভুগে আম চাষীরা। ফলস্বরুপ বাগানের পুরাতন আম গাছ কেটে ফেলছেন তারা।
জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০১ জন চাষী এই প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ ও রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করছেন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৪১ জন, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৬৪ জন, গোমস্তাপুর উপজেলায় ৩২ জন, নাচোল উপজেলায় ৩৫ জন এবং ভোলাহাট উপজেলায় এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত আছেন ২৯ জন চাষী। ইতিমধ্যে এসব আম চাষীদের সার, কিটনাশক, ফ্রুট ব্যাগ, নগদ অর্থ প্রদানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল জাব্বার। তিনি চাঁপাই-পালশা এলাকায় রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের সহায়তায় আম চাষাবাদ করছেন। তিনি বলেন, প্রথম থেকেই গতানুগতিক আম চাষাবাদ করে আসছি। এবার কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ নিয়ে কম বালাইনাশক কম স্প্রে করে আম চাষাবাদ করছি। নতুন পদ্ধদিতে আম চাষাবাদ করে, ভালো ফলন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের এখন প্রতিটা আম চাষাবাদ হয়। দেশে যে পরিমাণ আমের চাহিদা, তার দু-তিন গুণ বেশি পরিমাণ আম উৎপাদন হয়। এই আমগুলো যদি আমরা বাহিরে রপ্তানি করতে পারি, তাহলে আমরা কাঙ্খিত মূল্য পাওয়া যাবে। এতে আমাদেরও লাভ, সরকারেরও লাভ।
বিদেশে আম রপ্তানি করতে গেলে বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের সাহাযের প্রয়োজন হয়, না হলে আম রপ্তানি করা যায়না। যেহেতু এই সরকারী ভাবে এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে, আশা করা যাচ্ছে এবার বিদেশে আম পাঠাতে আর সমস্যা হবেনা। খুব সহজেই আম পাঠানো যাবে বিদেশের বাজারে এমনই জানালেন আম চাষী আব্দুল জাব্বার।
বিপ্লব হোসেন নামে আরেক আম চাষি জানান, নিরাপদ আম উৎপাদন করতে জেলা কৃষি সম্প্রারণ অফিস প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তারা যে ভাবে বাগান পরিচর্যা করতে বলেছেন, সেভাবে বাগান দেখভাল করা হচ্ছে। মুকুলও ভালো হয়েছিলো, আমেরও ভালো ফলন হয়েছে।
আম দিয়েই চাঁপাইনবাবগঞ্জকে চিনে-জানে দেশের মানুষ। প্রথম থেকেই অনেক কৃষি উদ্যোক্তা নিরাপদ ভাবে আম উৎপাদন করে আসছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের বিদেশে আম রপ্তানি করার জন্য যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে, এ প্রকল্পে কৃষি উদ্যোক্তাদের আরও সম্পৃক্ততা বাড়ানোর মত দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি অ্যাশোসিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুঞ্জের আলম মানিক। তিনি বলেন, এতে করে যেসব উদ্যোক্তা আম নিয়ে কাজ করছে তারা কাঙ্খিত দামে আম বিক্রি করতে পারবেন। ফলে তারা আর্থিকভাবে সফল হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও নিরাপদ আম উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করবে।
সম্প্রতি সময়ে জেলার নাচোল উপজেলা থেকে বদরুদ্দোজা নামে এক বাগানি ইংল্যান্ড ও সুইডেনে এক হাজার ৪০০ কেজি আম রপ্তানি করেছেন। তিনি রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় না থাকলেও কৃষি সম্প্রসারণ থেকে তাকে সব ধরণের সহায়তা করেছে। এই উপজেলায় রফিকুল ইসলাম নামে এক আম বাগানি রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন। তিনি খুব শিগগির বিদেশে তার বাগানের নাবী জাতের আম্রাপালি আম রপ্তানি করবেন বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
উত্তম কৃষি চর্চা (গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস বা গ্যাপ) অনুসরণ করে নিরাপদ আম উৎপাদন করা হচ্ছে এই প্রকল্পের আওতায় বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার। তিনি বলেন, চলতি বছরই রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০১ জন আম চাষি রয়েছে। এদের সবাইকে একটি করে প্রদর্শনীসহ প্রশিক্ষণ, সার, কিটনাশক, বালাইনাশক ফ্রæট ব্যাগ দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই অ লের কৃষকরা নতুন পদ্ধতিতে আম চাষাবাদ করে বিদেশের রপ্তানি করতে করবেন।
তিনি আরও বলেন, জেলায় রপ্তানিকারকদের আকৃষ্ট করতে নানান পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলো থেকে এবার সব চেয়ে বেশি রপ্তানিকারক এখানে এসেছে এ জেলায়। আশা করছি এবার বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি আম রপ্তানি করতে পারবেন চাষিরা। আমাদের নির্ধারিত আম বাগানগুলো নিয়মিত মনিটরিং করছে। এই সব আম রপ্তানির নিশ্চয়তা রয়েছে। উৎপাদন ও চাহিদার ভিতরে একটি সম্পর্ক রয়েছে অর্থনিতীর ভাষায়। উৎপাদন বেশি হওয়ার সাথে সাথে চাহিদাও বাড়তে হবে। তখনই কাঙ্খিত দাম পাওয়া যাবে। সেই জিনিসটা খেয়াল রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বিদেশে আম রপ্তানিতে কৃষি মন্ত্রনালয়ের সুদৃষ্টি রয়েছে এবার। কোন ধরণের ঝামেলা ছাড়ায় এবার এই জেলার আম বিদেশে পাঠাতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তার।
কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব
নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি
পাল্টাপাল্টি হামলা-মামলায় উত্তপ্ত পাবনা ১: আসামীরা ঘুরছে প্রকাশ্যে!
মহাসমাবেশ স্থগিত করলো হেফাজতে ইসলাম
বিএনপির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
রিজার্ভে বাংলাদেশের উন্নতি
