প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:২৩ পিএম

নির্বাচনী সহিংসতায় পুরুষশূন্য গ্রাম। প্রসব বেদনায় কাতর গৃহবধূকে হাসপাতালে পৌঁছে দিল পুলিশ। এমন ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্নি ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামে। মঙ্গলবার সকালে গোপালগঞ্জ আড়াইশো শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন লুবনা খাতুন নামের এক নারী। তিনি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গজালিয়া গ্রামের ইউসুফ হোসেনের স্ত্রী।
জানা যায়, গত ২৬ ডিসেম্বর টুঙ্গিপাড়ার বর্নি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে সোমবার রাতে ১ নং ওয়ার্ডের পরাজিত দুই ইউপি সদস্য প্রার্থী খায়রুল আমিন ও মনির শিকদারের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এতে গ্রেফতার আতঙ্কে গজালিয়া গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে।
এই অবস্থার মধ্য রাত ২ টায় ওই গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ প্রসব যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েন। ঐ পরিস্থিতিতে এলাকায় পরিচিত কোন ইজিবাইক ও ভ্যান চালকদের পাওয়া যাচ্ছিলো না। এমন অবস্থায় একটি গাড়ির অপেক্ষায় প্রসবজনিত ব্যাথায় কাতর নারী সহ তার স্বজনরা দেড় ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়ানো। তখন টুঙ্গিপাড়া থানার পুলিশদের সাথে নিয়ে টহল কাজে নিয়োজিত ছিলেন উপ-পরিদর্শক কামরুল ইসলাম।
গভীর রাতে রাস্তায় নারী সহ কয়েকজনকে দেখে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তখন জানতে পারেন প্রসবজনিত ব্যাথায় আক্রান্ত নারী গাড়ি না পাওয়ায় হাসপাতালে যেতে পারছেন না। তখন তিনি পুলিশের গাড়িতে প্রথমে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। গর্ভবতী নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় টুঙ্গিপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ আড়াইশো শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়। পরে পুলিশের গাড়িতেই গর্ভবতী নারীকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার সকালে লুবনা খাতুন নামের ওই গৃহবধূ একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান প্রসব করেন।
প্রসূতি মহিলার স্বামী ইউসুফ হোসেন বলেন, পুলিশের এই মহতী উদ্যোগের কারণে দুইটি প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। আমাদের সংসারে হাসি ফুটেছে। এজন্য পুলিশের প্রতি আমরা বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
গোপালগঞ্জ আড়াইশো শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ অসিত কুমার মল্লিক বলেন, মঙ্গলবার ভোরে ঐ প্রসূতি মহিলা হাসপাতালে ভর্তি হন। কন্যা সন্তান প্রসব করার পরে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ রয়েছেন।
টুঙ্গিপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক কামরুল ইসলাম বলেন, আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথম টুঙ্গিপাড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ গোপালগঞ্জে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তখন পুলিশের গাড়িতেই তাকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে পৌঁছে দেই। মূলত মানবিক কারণে ও সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমি এই কাজটি করেছি।