প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২১, ২:৩৮ AM

গত কয়েক দিনে করোনা সংক্রমণ একেবারেই কমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আবার সংক্রমণের হার বাড়ছে। এমন অবস্থায় যেন দেশে করোনার আরেকটি ঢেউ না আসতে পারে। সেজন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে গত এক সপ্তাহে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২২৭ জন নতুন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে; মৃত্যু হয়েছে আরও ২ জনের। ফলে এক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে ৭ শতাংশ। এর মধ্যে করোনার চেয়েও আরো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হচ্ছে। আরো এক চেনা উদ্বেগ আমাদের মধ্যে নতুন করে দেখা দিয়েছে- আর তা হলো করোনা ভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট- ওমিক্রন। এই ভ্যারিয়েন্টটি মাত্রই তার যাত্রা শুরু করেছে, যদিও এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রদেশে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে এটি অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এই ভ্যারিয়েন্টটির বিপুল সংখ্যক মিউটেশন রয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে এই ভ্যারিয়েন্টে পুনঃসংক্রমণিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। ফলে ছয়টি দেশের সাথে মোজাম্বিক এবং মালাউই থেকেও সব ফ্লাইট বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে ভ্রমণ সতর্কতা জারির পাশাপাশি সব ধরনের সমাবেশে জনসমাগম সীমিত করার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
গত এক সপ্তাহে দেশে মোট ১ হাজার ৬৯৬ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ৫৮৭ জন। অর্থাৎ, এক সপ্তাহে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর গত সাত দিনে মারা গেছেন আরও ২৫ জন, আগের সপ্তাহে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩১ জন। অর্থাৎ, এক সপ্তাহে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। এই ২৫ জনের মধ্যে ১৩ জনেরই কোনো না কোনো ধরনের দুরারোগ্য অসংক্রামক ব্যাধি বা কোমরবিডিটি ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ ডায়াবেটিসে, ৫০ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে এবং ২৫ শতাংশ বক্ষব্যাধিতে ভুগছিলেন। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১১ জনে। তাদের মধ্যে ২৭ হাজার ৯৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় সেরে উঠেছেন ২৮০ জন। তাদের নিয়ে মোট ১৫ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৭ জন এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত একদিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ১৭৫ জনই ঢাকা বিভাগের, যা মোট শনাক্তের ৭৭ শতাংশের বেশি। আর যারা মারা গেছেন, তাদের দুজনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। গত একদিনে দেশের ৩৬টি জেলায় নতুন কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। দেশের সাত বিভাগ থেকে কোনো মৃত্যুর খবর আসেনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ১৬ হাজার ৮৯১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৪৯টি নমুনা। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা আগের দিন ১ দশমিক ০৩ শতাংশ ছিল। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ; মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২ জনই পুরুষ। দুজনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। সরকারি হাসপাতালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। এ বছর ৩১ আগস্ট তা ১৫ লাখ পেরিয়ে যায়। এর আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ বছর ১৪ সেপ্টেম্বর তা ২৭ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ আগস্ট ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারির মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা। বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫২ লাখ ১ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২৬ কোটি ১৫ লাখের বেশি রোগী।