অন্যদিকে নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সুনামগঞ্জ সদরের সুরমা ইউপিতে জয়ী হন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আমির হোসেন। তিনি এই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও দলের সদর উপজেলা শাখার সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের সদস্য ছিলেন। তাঁকে নির্বাচনের আগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার সিরাজুল ইসলাম। তৃতীয় স্থানে আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুস সাত্তার হয়েছেন ৪ নম্বর।
এছাড়া লক্ষণশ্রী ইউপিতে জয়ী হয়েছেন বিএনপি নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার আবদুল মান্নান। তৃতীয় অবস্থানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান।
এদিকে কাঠইর ইউপিতে জয়ী হয়েছেন জমিয়তে উলামে ইসলামের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শামসুল ইসলাম। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার প্রার্থী ফারুক মেনর, মাত্র ৫৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছেন আওয়ামী লীগের আরও দুই বিদ্রোহী। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বুরহান উদ্দিন আছেন ৫ নম্বরে।
মোহনপুর ইউপিতে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মঈন উল হক। এখানে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সীতেশ রঞ্জন তালুকদার ১৪২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। এই ইউপিতে তৃতীয় স্থানে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জাপার প্রার্থী নুরুল হক।
জাহাঙ্গীরনগর ইউপিতে জয়ী হয়েছেন জাপার প্রার্থী রসিদ আহম্মেদ। এখানে নৌকার প্রাথী বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকসেদ আলী আছেন তৃতীয় অবস্থানে।
রঙ্গারচর ইউপিতে জয়ী হয়েছেন বিএনপি নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল হাই। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাপার ফয়জুর রহমান। তৃতীয় অবস্থানে আছেন নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ।
কুরবান নগর ইউপিতে জয়ী হয়েছেন আবুল বরকত। তিনি গত নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী শামস উদ্দিন তাঁর চেয়ে ১৩১ ভোট কম পেয়েছেন।
গৌরারং ইউপিতে জয়ী হয়েছেন জাপার মো. শওকত আলী। এখানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছেন স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করা বিএনপির দুজন। চতুর্থ অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত ছালমা আক্তার চৌধুরী।
মোল্লাপাড়া ইউপিতে জয়ী হয়েছেন বিএনপির বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল হক। এখানে দ্বিতীয় অবস্থানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুছ সালাম। তৃতীয় স্থানে আছেন জাপার প্রার্থী শামীম আহমদে। ভোটের হিসাবে পঞ্চম অবস্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মনির উদ্দিন।
এদিকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পশ্চিমপাগালা ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জগলুল হায়দার জয়ী হয়েছেন। পূর্ব বীরগাঁও ইউপিতে আওয়ামী লীগের রিয়াজুল ইসলাম, জয়কলস ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল বাছিত ওরফে সুজন, পাথারিয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী শহীদুল ইসলাম, শিমুলবাক ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শাহিনুর রহমান, পশ্চিম বীরগাঁও ইউপিতে স্বতন্ত্র হিসেবে বিএনপির লুৎফুর রহমান জায়গীরদার, দরগাপাশা ইউপিতে বিএনপির সুফি মিয়া ও পূর্ব পাগলা ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুক মিয়া নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে সুনামগঞ্জ সদরে দলীয় প্রার্থীদের হারের বিষয়ে আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, প্রার্থী মনোনয়নে অনেক ইউপিতে ভুল আছে। আবার বিদ্রোহীদের পাশাপাশি দলের নেতাদের দ্বন্দ্ব পরাজয়ে ভূমিকা রেখেছে।
দেখা গেছে, প্রার্থী কোনো নেতার ঘনিষ্ঠ হলে দলে থাকা ওই নেতার বিরোধীপক্ষ প্রার্থীকে কোনো সহযোগিতা করেনি; বরং উল্টো কাজ করেছে।
এদিকে জেলার নেতাদের শুধু দোষ দিলে হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক কিছুই আমাদের হাতে নেই। তৃণমূল থেকে নাম দিয়েও কোনো কাজ হয় না। কেন্দ্রে নাম দেওয়া হয়নি, দলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, এমন লোকজনও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
অন্যদিকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম বলেছেন, একটি জেলার রাজনীতির কেন্দ্র হচ্ছে জেলা সদর। কিন্তু এখানে দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের এমপি নেই। দীর্ঘদিন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন বিএনপির। এ অবস্থায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততা নেই। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরাও দলের প্রতি বিমুখ। দল একজনকে মনোনয়ন দিলেও বিদ্রোহী থাকেন একাধিক-এমন নানা কারণে সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপর্যয় ঘটেছে।
ভোরের পাতা/অ