তেসরা নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই: ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ
প্রকাশ: বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১, ১১:২২ পিএম

বাঙালি জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য যে কয়টি কলঙ্কতম দিন রয়েছে তার মধ্যে ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসটি অন্যতম একটি। ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর এবং ৭ নভেম্বর যেভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয় এটি আসলে সবই একইসূত্রে গাঁথা। এই ঘটনাগুলো যারা ঘটিয়েছে সেটার উৎপত্তি ও পরিকল্পনা একই জায়গা থেকে হয়েছে এবং এটির মাধ্যমে যে তাদের যে লক্ষ্য ছিল সেই লক্ষ্য অর্জনে তারা সেসময় অনেকদূরে অগ্রসর হয়েছিল এবং এখন পর্যন্ত কিন্তু সেটা তারা করে যাচ্ছে। তাদের ওই ছকে দুটি কার্ড থাকে। একটা হচ্ছে ধর্মের কার্ড আরেকটা হচ্ছে ভারত বিরোধিতা কার্ড। তারা এই দুটি কার্ডকে ব্যবহার করে আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায়।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫১২তম পর্বে বুধবার (৩ নভেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পিএসসি, নিরাপত্তা বিশ্লেষক গবেষক ও লেখক মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এই রকম নিকৃষ্টতম হত্যাকাণ্ড যেটা ১৯৭৫ সালের আজকের দিনে অর্থাৎ তেশরা নভেম্বরে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে জেল খানায় জাতীয় চার নেতাকে এইরকমভাবে হত্যা হয় সেটা আসলে পৃথিবীতে নজিরবিহীন। ১৫ আগস্টের বেদনাদায়ক অধ্যায়ের আড়াই মাস পর তৎকালীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (বর্তমানে জাদুঘর) একই বছরের ৩ নভেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। নির্মম এই ঘটনার ঠিক আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর তার ঘনিষ্ঠ এই চার সহকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দ্রুত যে পট পরিবর্তন এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান, সে উত্থানকালে মুক্তবুদ্ধির মানুষ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন- বঙ্গবন্ধুর পর তার বিশ্বস্ত সহকর্মী জাতীয় চারনেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটিকেই (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) নেতৃত্বশূন্য করে ফেলা হলো। তারা বুঝেছিল যে, জাতীয় চারনেতার যদি একজনও বেঁচে থাকেন, তাহলে যেকোনো ঘটনাই তারা ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। যে কারণে সেই হত্যাকাণ্ড শেষ করে জেলগেট থেকে আবার ফিরে গিয়ে গুলিবিদ্ধ তাজউদ্দীন আহমেদকে বেয়নেট চার্জ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে এসেছিল ঘাতকচক্র। স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও চারনেতাকে হত্যা করে। এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত সত্য যে, যারা পরিবারের সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, তারাই চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করেছে। জাতির পিতা হত্যার পর চার নেতা হত্যার বিষয়টি ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। স্বাধীন বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যই ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। জাতির পিতাকে হত্যা করে প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেই হত্যা করা হয়। যারা এই জঘন্য কাজ করেছিল তাদের শাস্তি হোক। তাদের দেশের বাইরে থেকে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা হোক। আমরা চাই যারা রাতের অন্ধকারে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হিসেবে বিবেচিত জেলখানায় এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছিল তাদের ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা হোক। বাঙালি জাতি কোনো কলঙ্ক বয়ে বেড়াতে চায় না।