
০ ১৭ জুলাই শুরু
০ প্রতিটি কোচে ১৬ গরু
০ ভাড়া নির্ধারণ আট হাজার টাকা
এবারও ট্রেনে কোরবানির পশু ঢাকায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী ১৭ জুলাই থেকে ঢাকায় কমলাপুর স্টেশনে আনা শুরু হবে। এ জন্য ঈদের ৩ দিন আগ থেকে ‘ক্যাটল স্পেশাল সার্ভিস’ পরিচালনা করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রাথমিকভাবে এই সার্ভিস দুই দিন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদি চাহিদা থাকে তাহলে আরও একদিন বাড়ানো হবে। তাই আগামী ১৭, ১৮ ও ১৯ জুলাই পর্যন্ত এই সার্ভিস পরিচালনা করা হবে। গত বছরের মতো এবারও ঈদের আগের ৩ দিন ‘ক্যাটল স্পেশাল ট্রেনের’ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার সিরাজগঞ্জ ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ বাজার থেকে ঢাকার মধ্যে এই ট্রেন চলবে। দেওয়ানগঞ্জ বাজার থেকে বেলা সাড়ে ৩টায় ট্রেন ছেড়ে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাবে পরের দিন সকাল ছয়টায়। গতকাল মঙ্গলবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. শফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দেওয়ানগঞ্জ ও জামালপুর অঞ্চলের কোরবানির পশু পরিবহনের এই সার্ভিস পরিচালনা করা হবে। একটি কোচে ১৬টি গরু উঠানো যাবে। প্রতিটি গরুর ৫শ’ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এ হিসেবে একটি কোচের ভাড়া হবে ৮ হাজার টাকা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, একটি ট্রেনে ৪০০টি পর্যন্ত পশু পরিবহন করা যাবে। ব্যবসায়ীদের চাহিদার ভিত্তিতে এ বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। চাহিদা বেশি থাকলে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। ব্যবসায়ীদের আগ্রহ থাকলে সেখান থেকেও স্পেশাল ট্রেন চালানো হবে। গত বছর জুলাইয়ের প্রথম দিকে কোরবানি উপলক্ষে দেশের উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রেনে করে কোরবানির পশু পরিবহনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তেমন সাড়া পায়নি রেলওয়ে। এর আগে ২০০৮ সালে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ঘাট থেকে সাতটি কোরবানির পশুবাহী ট্রেন পরিচালনা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রাজধানী ও বিভাগীয় শহরসহ অনেক জেলায়ই ট্রেন চলাচল করে। এতে পশু পরিবহনে ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি জানান, চলতি বছর কোরবানির পশু পর্যাপ্ত থাকায় বৈধ বা অবৈধভাবে কোনো পশু দেশের বাইরে থেকে আসবে না। কোরবানির পশু পরিবহনে স্পেশাল ট্রেন। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই কোরবানি নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া বিক্রেতাদের রাস্তায় নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান শ ম রেজাউল করিম।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে এখন ছোট বড় প্রায় ৭ লাখ গবাদিপশুর খামার রয়েছে। এসব খামারে কোরবানি উপযোগী পশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৯ লাখ। অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে নওগাঁ জেলায় লকডাউনের মধ্যে জনসমাগম ঠেকাতে স্থায়ী পশুর হাট আপাতত বন্ধ রয়েছে। যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন খামারিরা। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. আজিজুর রহমান জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পশুর হাটে থাকবে পশু ডাক্তারদের মোবাইল টিম। তিনি মুঠোফোনে জানান, সারাদেশে ছোট বড় মিলিয়ে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ১১৫টি কোরবানির পশুর খামার আছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৯২ হাজার, খুলনায় ১ লাখ ৭ হাজার, রংপুরে ২ লাখ ২২ হাজার, রাজশাহীতে ১ লাখ ২৭ হাজার, চট্টগ্রামে ৭৪ হাজার, ময়মনসিংহে ৪০ হাজার, বরিশালে ২০ হাজার ও সিলেটে ১২ হাজারের বেশি পশুর খামার আছে। গবাদিপশুর খামারগুলোতে কোরবানিযোগ্য ৪৪ লাখ ৪৭ হাজার গরু ও মহিষ আছে। ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল, খাসি ও ভেড়া আছে। আর উট ও দুম্বা রয়েছে ৪ হাজার ৭শ’র বেশি। যদিও সরকার ঈদে কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য একই সঙ্গে মানুষের ঈদ উৎসব পালনে চলমান লকডাউন শিথিলে ঘোষণা দিয়েছে। তারপরেও স্থানীয় প্রশাসন কেরোনা প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান এখনো শিথিল করেনি। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নওগাঁয় চলমান বিধিনিষেধের পাশাপাশি জেলার সব পশুর হাট বন্ধ রেখেছে জেলা প্রশাসন। তবে খামার ও গৃহস্থের বাড়ি থেকে এবং অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। নওগাঁ প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ জানান, নওগাঁ জেলায় করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় জারি করা চলমান বিশেষ বিধিনিষেধের পাশাপাশি জেলার সব পশুর হাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। তবে খামার ও গৃহস্থের বাড়ি থেকে এবং অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। এছাড়া জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার, পতœীতলা ও ধামইরহাট থেকে জেলার অভ্যন্তরে এবং জেলার বাইরে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য পরিববহন, জরুরি কাজে ব্যবহৃত সরকারি গাড়িসহ অন্য জরুরি সেবা-পরিষেবা কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না।
নওগাঁ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ জেলায় ছোট-বড় ১০৪টি হাট-বাজার রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে ৩৮টি। জেলার মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া ও সতিহাট, নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া বাজার, পোরশা উপজেলার মশিদপুর, মহাদেপুরের মাতাজীহাট, বদলগাছীর কোলাহাট ও রাণীনগরের আবাদপুকুর বৃহৎ পশুর হাট। প্রতিবছর কোরবানির ঈদ মৌসুমে এসব হাটে স্থানীয় ক্রেতা ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা গরু কিনতে আসেন।
নওগাঁ পৌরসভার শিবপুর এলাকার খামারি সাইফুল ইসলাম ফোনে জানান, এ বছর কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য খামারে ১২টি গরু লালন-পালন করেছি। গরু কেনা ও লালন-পালন খরচ বাবদ প্রতিটি গরুর পেছনে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। গরু যে রকম হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে তাতে প্রতিটি গরু ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রির আশা আছে। কিন্তু পশুর হাট বন্ধের যে ঘোষণা শুনলাম তাতে তো চিন্তার বিষয়। হাটে দর-কষাকষি করে গুরু বিক্রি করলে একটু বেশি লাভের আশা থাকে। কোরবানির আগ পর্যন্ত হাট বন্ধ থাকলে মনে হয় বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে।
ভোরের পাতা/পি