
বরগুনার তালতলী উপজেলা পরিষদসহ,বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন একজন মৃত মানুষ। একজন সুস্থ সবল মানুষ যা যা করেন সবই করছেন ছালেহ হাওলাদার। মৃত থেকে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।
বড়বগী ইউনিয়নের নাওভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মৃত বাহার আলী হাওলাদারের ছেলে আবু ছালেহ বাস্তবে জীবিত থাকলেও ভোটার তালিকায় তিনি মৃত। ভোটার তালিকায় মৃত হওয়ায় বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এমনকি ভোট দিতেও পারছেন না তিনি।
কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই'। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'জীবিত ও মৃত' ছোটগল্পের বিখ্যাত উক্তি এটি। সৌভাগ্যবশত প্রত্যেকে কাদম্বিনীর মতো অভাগী নন, কাজেই জীবিতাবস্থার প্রমাণ দেওয়ার জন্য জীবনত্যাগের চূড়ান্ত পদক্ষেপ না করলেও চলে যায়৷ নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে এখন ঘুরছেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের দ্বারে দ্বারে।
জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচন অফিসে ছয়মাস ধরে ধর্ণা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি আবু ছালেহর। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম তালতলী উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। পার্শ্ববর্তী উপজেলা আমতলীর দায়িত্বে থাকার কারণে তালতলী নির্বাচন অফিসে তিনি নিয়মিত আসেন না।
আবু ছালেহ বলেন,আমি জানতাম না ভোটার তালিকা থেকে আমার নাম কর্তন করা হয়েছে। ভোট দিতে গিয়ে শুনি যে আমার নাম ভোটার তালিকা থেকে কেটে দেয়া হয়েছে। আমি জীবিত আছি। স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছি। ব্যবসা-বাণিজ্য করছি। আমাকে কেন মৃত হিসেবে ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তন করা হলো তার বিচার চাই। কে আমাকে মেরে ফেলেছে, এ বিষয়ে তদন্ত করা হোক।”
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের কথার মূল্য নাই। আমাকে ছয়মাস ধরে হয়রানি করেছে। ভোটার তালিকায় পুনরায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গত বছরে নভেম্বর মাসে তালতলী উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করেছি। ছয়মাস পরেও ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। কারা এ বিষয়ে সুষ্ঠু কোনও সমাধানের কথাও জানাতে পারেনি। বারবার যোগাযোগ করে এখন পর্যন্ত কাজ না হওয়ায় আমি হতাশ হয়ে পড়েছি।”
এরকম একাধিক ভুক্তভোগী জানান, তালতলী উপজেলায় নির্বাচন কর্মকর্তা নেই। আমতলী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অতিরিক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে তালতলীতে দায়িত্ব পালন করেন। সপ্তাহে দুদিন তালতলী উপজেলায় অফিস করার কথা থাকলেও কোনো কোনো সময় তিনি মাসেও একদিন আসেন না। এজন্য নির্বাচন অফিসে ভোটার তালিকা সংশোধন, আইডি কার্ড উত্তোলনসহ বিভিন্ন কাজে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. তারিকুল ইসলামের কাছে জানতে তার সরকারি মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বরগুনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দীলীপ কুমার হাওলাদার বলেন, আইডি নম্বর ভুল দেয়ার কারণে অথবা অপারেটরদের ভুলের কারণে এটি হতে পারে। তবে যেহেতু তিনি জীবিত আছেন তিনি সশরীরে অফিসে এসে আবেদন দিলে আবেদনটি আমরা ফরওয়ার্ড করে ঢাকায় পাঠিয়ে দিলে সেখান থেকে অ্যাড করে দেবে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলামের নিয়মিত তালতলী না যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমতলী উপজেলায় নির্বাচন চলছিল। সেজন্য হয়ত তিনি যেতে পারেননি।
ভোরের পাতা/এএম