
ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের মহড়া নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে ইসরায়েলে। মহড়ার আড়ালে মিসাইল হামলা চালানো হতে পারে বলে শঙ্কা দখলদার দেশটির। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে সতর্ক করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে খবরও পাঠানো হয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম এক্সিওস।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস হামলা চালানোর পর হামলার ঝুঁকি নিয়ে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সতর্ক ইসরায়েল। তারা যেকোনও কিছুকে এখন হুমকি হিসেবে নেয়।
এক্সিওস জানিয়েছে, ছয় সপ্তাহ আগেও বিপ্লবী গার্ড মিসাইল হামলার মহড়া দিয়েছে। তখনও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইরানের হামলার সম্ভাব্যতা ৫০ শতাংশেরও কম। ইরান শুধুমাত্র মহড়া চালাচ্ছে, এমন কিছু ভেবে কেউ ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক নয়।
তবে, মার্কিন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরান এখনই মিসাইল হামলা চালাবে তারা এমন কোনো ইঙ্গিত পাননি।
মূলত, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ১২ দিনের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের পর থেকেই ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে গভীর উৎকণ্ঠায় ভুগছে ইসরায়েল। যেকোনোভাবে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের অগ্রগতি বন্ধ করে দিতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে মার্কিন মদদপুষ্ট দেশটি।
সম্প্রতি ইসরায়েলের পার্লামেন্টে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
এদিকে কয়েকটি সূত্র এক্সিওসকে বলেছে, এ মুহূর্তে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটু ‘ভুল বোঝাবুঝি’ থেকেই যুদ্ধ বাঁধতে পারে। এ ধরনের মহড়াকে দুই পক্ষই হামলার প্রস্তুতি হিসেবে ধরে নিয়ে হামলা চালাতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন ইসরায়েল ‘রাইজিং লায়ন’ অভিযানে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এতে ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও বিজ্ঞানীরা নিহত হন। জবাবে ইরান ‘ট্রু প্রমিস ৩’ অভিযানে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হলে শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে প্রকাশ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রও। ২২ জুন ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালানো হয় ট্রাম্পের নির্দেশে। এরপর ইরানও কাতারের আল উদেইদে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা করে। টানা ১২ দিনের উত্তেজনার পর ২৪ জুন যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।