বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫ ১ শ্রাবণ ১৪৩২

শিরোনাম: শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ   হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম   সিরিয়ার সেনা সদর দপ্তরে ইসরায়েলের হামলা   গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষ, নিহত ৩   সারা দেশে ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা   গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ৪ প্লাটুন বিজিবি   পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স, প্রথমবারের মতাে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রেমিট্যান্স
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫, ১২:৩১ AM

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স নতুন এক ইতিহাস গড়েছে। অর্থবছর শেষ হতে এখনো দুদিন বাকি থাকলেও ইতোমধ্যে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে হিসাব করা হয়েছে)। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে দেশের ইতিহাসে কোনো এক অর্থবছরে এত বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।

এর আগে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, যখন বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছিলেন ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। তবে চলতি অর্থবছরের রেমিট্যান্স সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে। রোববার (২৯ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম ২৮ দিনেই প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৫৪ কোটি বা ২.৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি টাকায় দাঁড়ায় প্রায় ৩১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। মাসের শেষ দিনগুলোতেও যদি একই গতিতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ অব্যাহত থাকে, তাহলে জুন মাস শেষে রেমিট্যান্স ২৭০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রেমিট্যান্সপ্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ, প্রবাসীদের জন্য বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া, প্রণোদনা বৃদ্ধি, এবং ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার উন্নয়ন। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এসব রেমিট্যান্স বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমেই এসেছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য স্বস্তি এনে দিয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই মাসে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। নতুন বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে এসেছে ২১৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি, মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি এবং মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মার্চ মাসে একক মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৩৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে এই বিপুল রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি দিয়েছে, ডলারের বাজারে চাপ হ্রাস করেছে এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই ধারা ধরে রাখতে হলে প্রবাসী শ্রমবাজার আরও বহুমুখীকরণ, অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, এবং প্রবাসীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। রেমিট্যান্স কেবল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উপায় নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার একটি কৌশলগত হাতিয়ার—এই উপলব্ধি থেকেই রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যমতে, জুলাই থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩ হাজার ৫ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৭৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ, চলতি বছর প্রবাসী আয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ।

এই সাফল্যের পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারের সচেতন নীতিমালা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতা রয়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। তারা বলছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে এবং সামষ্টিক অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষত, আমদানি ব্যয় মেটানো, ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা এবং বৈদেশিক দেনা পরিশোধে এই রেমিট্যান্স বড় ভূমিকা রাখছে।

সব মিলিয়ে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। এই ধারা বজায় রাখতে হলে প্রবাসীদের আস্থার জায়গা আরও দৃঢ় করতে হবে এবং হুন্ডি বন্ধে চলমান পদক্ষেপগুলোকে আরও জোরদার করতে হবে। তবেই দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান আরও সুদৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত হবে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com