রবিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধে অবৈধ বালু পাইপলাইন উচ্ছেদ   কানসাটে অসময়ের কাটিমন আম, মণপ্রতি ১৬ হাজার টাকা   ওসমান হাদির উপর হামলার প্রতিবাদে মৌলভীবাজারে বিক্ষোভ   ওসমান হাদির ওপর গুলির প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে বিএনপির বিক্ষোভ   হাদিকে গুলি করার প্রতিবাদে তিতাস উপজেলা বিএনপি বিক্ষোভ   ঝিকরগাছায় জমি নিয়ে চাচা ভাতিজার বিরোধ, কবরস্থান দখলের পর স্থাপনা নির্মাণে বাধা    ভুরুঙ্গামারীতে মইদাম মহাবিদ্যালয়ে নবীন বরণ   
http://www.dailyvorerpata.com/ad/1763085968.gif
এরদোয়ানের গদি টলিয়ে দিতে পারে তুরস্কের জেন-জি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: সোমবার, ২ জুন, ২০২৫, ১:২১ পিএম

গত মার্চে উত্তাল হয়ে ওঠে তুরস্ক। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে দেশটির হাজার হাজার জনতা। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিবিদ একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে ইস্তাম্বুলসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করে তারা। ওই সময় ব্যাপক আকারে ধরপাকড় চলে; এখনো অনেকে জেলে বন্দী। তবে ওই সময় নতুন করে আলোচনায় আসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের নতুন হুমকি। আর তা হলো–‘জেন জি’ বা জেনারেশন জেড। তবে আগেও এমন আলোচনা ছিল এই প্রজন্ম ও তুরস্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকনোমিস্ট বলছে, ২০০৩ সাল থেকে তুরস্কের ক্ষমতায় এরদোয়ান। গত মার্চে তাঁর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা জনতার একটা বড় অংশই তখন রাজনীতির মানেই বুঝত না, অনেকের তো জন্মই হয়নি। তারাই এখন এরদোয়ানের অন্যতম হুমকি। গত ১৯ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় একরেম ইমামোগলুকে। এরপর এরদোয়ানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা বেশির ভাগই তরুণ। আর এখন অধিকাংশই বন্দী জেলে, বিচারের মুখোমুখি। এই মূহূর্তে বিচারের মুখোমুখি গ্রেপ্তার অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী ও সদ্য গ্র্যাজুয়েট। এর বাইরে ১২ জনকে গৃহবন্দী রাখা হয়েছে।

রাস্তায় রাস্তায় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি। জনতা জড়ো হতে দেখলেই সেখানে বাড়তে থাকে আইন‑শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। কিন্তু বিভিন্ন শহরের রাস্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে আটকানো যাচ্ছে না ‘জেন জি’দের। বয়কট আর ছোট আকারের প্রতিবাদ এখন প্রতিদিনকার চিত্র। গত ১৩ মে দেখা যায় এমনই দৃশ্য। ওইদিন বিতর্কিত এক ইসলাম প্রচারকের আগমণের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে তরুণেরা। ওই সময় বিক্ষোভ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ৬ শিক্ষার্থীকে।

দ্য ইকনোমিস্ট বলছে, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান চাইছেন, এমন একটি তরুণ প্রজন্ম তৈরি করতে, যারা কেবল ধর্মীয় পথে থাকবে। কিন্তু তুরস্কের তরুণেরা সেই পথে হাঁটছে না। শুধু তাই নয় রীতিমতো এরদোয়ানের বিরোধী শিবিরে পরিণত হয়েছে তারা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, জেনারেশন জেড-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো জেন‑জি। ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের ভেতর যাদের জন্ম, তারাই জেন‑জি। তাহলে ২০২৪ সালের হিসাবে সবচেয়ে বড় জেন‑জি সদস্যের বয়স ২৭, আর সর্বকনিষ্ঠ জনের চলছে ১২ বছর। তুরস্কে রাস্তায় নামা এসব তরুণের বয়স ১৮ থেকে ২৯‑এর মধ্যে। এদের বেশির ভাগই এরদোয়ানের ক্ষমতায় আরোহণই দেখেনি। তবে ভোটের মাঠে বড় একটা অংশ দখল করে আছে তারা; প্রায় চারভাগের একভাগ।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের বরাতে দ্য ইকনোমিস্ট বলছে, এই ‘জেন জি’দের মাত্র ১১ শতাংশ এরদোয়ানের একে পার্টিকে ভোট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। কারণ হিসেবে তারা সবচেয়ে বেশি বলছে–শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এরদোয়ান সরকারের নিজেদের কব্জায় রাখার চেষ্টা। এ কারণে সুশিক্ষা মিলছে না বলে অভিযোগ তাদের। মাঠে প্রতিবাদ করার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলছে ব্যাপক প্রচার।

এই তরুণদের কল্যাণে রাজনীতির মাঠে খাবি খেতে থাকা বিরোধী দল পিপলস রিপাবলিক পার্টি (সিএইচপি) হালে পানি পেল। সরকারের সমালোচকেরা বলছেন, ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের পর তরুণ বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছে–এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সিএইচপির মধ্যে যেন প্রাণসঞ্চার হয়। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তুরস্কে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় এ বিক্ষোভে লাখো মানুষ যোগ দেয়। এই বিক্ষোভের মাত্রাই সম্ভবত সরকারকে ইমামোগলুর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা এবং ইস্তাম্বুল পরিচালনার জন্য সরকারি কর্মী নিয়োগ থেকে বিরত রেখেছে।

এ নিয়ে সাবানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বার্ক এসেন দ্য ইকনোমিস্টকে বলেন, ‘তরুণেরা সিএইচপিকে সরকারি চাপ প্রতিরোধের শক্তি জোগাচ্ছে। বিরোধী দল এখন মনে করে, প্রয়োজনে তারা বিশাল জনতাকে একত্রিত করতে পারবে।’

কিন্তু সিএইচপি এরদোয়ান সরকারের এই দমন-পীড়ন রোধ করতে পারেনি। গত ২৬ মে দুর্নীতির অভিযোগে সিএইচপি পৌরসভার কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীসহ প্রায় ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মে দিবসের বিক্ষোভের সময় দলটির প্রায় ৪০০ জনকে আটক করা হয়।

সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স ২৪ বলছে, মার্চে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভেই এরদোয়ান সরকারের ভিত নড়বড়ে হয়ে যায়। রাস্তায় নামা জনতাকে এরদোয়ান তখন ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। এ কারণে আরও ক্ষেপে যায় জনতা। ওই সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। একটা সময় এভাবেই মেয়র থাকাকালে একরেম ইমামোগলুর মতো গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল এরদোয়ানকে। তাহলে কি এই বিরোধী নেতা এরদোয়ানের মতোই সামনে এগিয়ে যাবেন?

সেই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে এরদোয়ানের কিছু কার্যক্রম দেখে নেওয়া যাক। ২০০৩ সাল থেকে এরদোয়ান তুরস্কের রাজনীতিতে কর্তৃত্ব ধরে রেখেছেন—প্রথমে প্রধানমন্ত্রী, পরে ২০১৪ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে। তাঁর শাসনামলে তুরস্ক অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক উন্নতি করেছে। একাধিকবার তাঁর দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। কিন্তু সমালোচকদের মতে, গত এক দশকে তিনি ক্ষমতা দৃঢ় করতে গণতন্ত্রকে দুর্বল করেছেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগে নিজের অনুগতদের বসিয়েছেন, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে এনেছেন, বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রসিকিউটর ও বিচারকদের ব্যবহার করেছেন।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর বলছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সম্প্রতি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বা অন্য কোনো সরকারি পদের নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা তাঁর নেই। সম্প্রতি হাঙ্গেরি থেকে ফেরার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এরদোয়ান বলেন, ‘আবার নির্বাচিত হওয়া বা প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। দেশের সুনাম বৃদ্ধি করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’

এর আগে ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ই এরদোয়ান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। দেশটির বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, তাঁর তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে সে জন্য নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আনতে হবে।

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করলেও এরদোয়ানের ক্ষমতা ছাড়ার ইচ্ছা নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। কারণ, গত মার্চে নিজের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের পর এরদোয়ানের মনোভাব নিয়ে জনমনে সংশয় বেড়েছে। গ্রেপ্তারের পর ইমামোগলুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিভিন্ন জরিপে তাঁর সমর্থন বেড়ে চলছে।

এরদোয়ানকে নিয়ে সম্প্রতি একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট। তাতে বলা হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সময়টা বেশ ভালোই যাচ্ছে। আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে নিজেদেরকে আরও শক্তিশালী করতে নিচ্ছেন একের পর এক উদ্যোগ। এক্ষেত্রে তিনি বেশ এগিয়েও গেছেন। এই সপ্তাহে এরদোয়ান ইস্তাম্বুলের ডলমাবাহচে প্রাসাদে সিরিয়ার বর্তমান অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে আতিথ্য দিয়েছিলেন। সিরিয়ায় ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এটি ছিল শারার তৃতীয় তুরস্ক সফর। সিরিয়ার নেতা তাঁর দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আঙ্কারার গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন হিসেবে এরদোগানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে সামনে এগিয়ে আসছে তুরস্কে, বিশেষ করে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চলমান আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী এই তুরস্ক। এসব করে এরদোয়ান পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। তবে এ অবস্থান কতদিন ধরে রাখতে পারেন, সেটিই দেখার বিষয়। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে হয়তো এরদোয়ান কোনো সংকটে পড়বেন না।

বাস্তব চিত্র এখনো বেশ ঘোলাটে। সরকারের অনুরোধে ইমামোগলুর অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া এক্স, যেখানে তাঁর প্রায় ১ কোটি ফলোয়ার রয়েছে। এদিকে বিরোধীরা উত্তেজনা বাড়াতে প্রস্তুত। আর তরুণরা সেই পালে হাওয়া দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ অবস্থায় তুরস্কের সামনের দিনগুলো কোনদিকে যাবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে তা যে খুব একটা মসৃণ নয়, তা স্পষ্ট।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »





http://www.dailyvorerpata.com/ad/1763086027.gif

  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/1765376223.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/1763085829.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/1763085901.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/1763091212.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com