
শীতের তীব্রতা যখন হাড়ে গিয়ে লাগে, তখন মানুষের আরামদায়ক জীবনের চেয়ে কষ্টটাই বড় হয়ে ওঠে। গরম পোশাক, কম্বল, আর উষ্ণ পরিবেশে নিজেদের গুটিয়ে রাখার সুযোগটা সবার হয় না। বিশেষ করে পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা এই সময় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়। সমাজের অবহেলিত এই শ্রেণি প্রতিদিন ঠান্ডার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে।
পথে প্রান্তরে ব্যস্ত সড়কগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় কাঁপতে থাকা শিশুদের। রাস্তার পাশের ফুটপাত, বাস টার্মিনাল, কিংবা রেলস্টেশনের কোণে কোণে এদের অগোছালো জীবন। পুরনো কিংবা ছেঁড়া জামাকাপড় গায়ে দিয়ে এরা শীতের বিরুদ্ধে লড়াই করে। পেটের ক্ষুধা মেটাতে তারা বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষাবৃত্তি করে কিংবা ছোটখাটো কাজ খুঁজে বেড়ায়। শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে ঘুমাতে গিয়ে তাদের কষ্টের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
উপকূলীয় এলাকাগুলোতে নদীর পাশে গড়ে ওঠা দরিদ্র পরিবারগুলো শীতের তীব্রতায় আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের সামান্য ঝুপড়ি ঘরে ঠান্ডা বাতাস ঢুকে যায়, আর শরীরে জড়ানোর মতো যথেষ্ট উষ্ণ পোশাক থাকে না।
শুধু শিশুরাই নয়, বৃদ্ধরাও শীতকালে দুর্বিষহ অবস্থায় পড়ে। বৃদ্ধ বয়সে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় ঠান্ডার প্রভাব তাদের জন্য আরও ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তাদের অনেকের কোনো স্থায়ী আশ্রয় নেই, আর যারা আছে, তাদের ঘরও শীত প্রতিরোধের উপযুক্ত নয়। কিছু মানুষ শীত নিবারণের জন্য আগুন জ্বালিয়ে বসে থাকে, কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়।
এই শীত মৌসুমে সমাজের সামর্থ্যবান মানুষদের এগিয়ে আসার সময় হয়েছে। পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এখনই সবচেয়ে বেশি জরুরি। একটুখানি সহযোগিতাই তাদের জীবনে এনে দিতে পারে আশার আলো। কিছু করণীয় হতে পারে:
১. শীতবস্ত্র বিতরণ: অপ্রয়োজনীয় কিংবা অতিরিক্ত গরম কাপড় দান করা।
২. তহবিল সংগ্রহ: স্থানীয় সংগঠন বা ব্যক্তি উদ্যোগে তহবিল গঠন করে কম্বল বা প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ।
৩. আশ্রয়ের ব্যবস্থা: বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী শীতকালীন আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা।
৪. খাবার বিতরণ: পথশিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ।
আমাদের একটু মানবিক উদ্যোগ তাদের অনেকটা কষ্ট লাঘব করতে পারে। সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসে, তবে এই শীতের তীব্রতাও আর অসহনীয় থাকবে না।
শীতের তীব্রতা মোকাবিলা করা পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সত্যিই কঠিন। আসুন, আমরা সবাই মিলে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিই। অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তাদের দান করি। এক মুহূর্তের সামান্য দয়া হয়তো তাদের জন্য হতে পারে জীবনের আশীর্বাদ। আমাদের ছোট্ট প্রচেষ্টাই তাদের জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। সমাজকে সুন্দর করতে আমাদের এই দায়িত্ব ভুলে গেলে চলবে না।