বুধবার ২১ মে ২০২৫ ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শিরোনাম: ইশরাকের মেয়র পদ নিয়ে রিটের আদেশ কাল   সামিট গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরের চেষ্টা, আজিজ খানের সহযোগীর এনআইডি ব্লক   জাফলংয়ে হঠাৎ পাহাড়ি ঢল   স্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার   কত টাকার সম্পদ জব্দ করেছে সরকার, জানালেন প্রেস সচিব   নুসরাত ফারিয়া গ্রেপ্তার: ফারুকীর মন্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া   গৃহবন্দি লেকশোর হোটেল মালিককে হাজির করতে সন্তানদের রিট   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বিএনপি কেন মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি?
মোঃ ফিরোজ আলম
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৫৮ পিএম

আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় বিএনপির যুদ্ধটা ছিল আওয়ামী লীগের অপপ্রচার এবং মিডিয়া ট্রায়ালের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ তখন তাদের অপকর্ম ঢাকতে বিএনপি'র বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যা তথ্য ছড়াতো। কখনো তাদের গুম, খুন, অর্থপাচার, দুর্নীতি, দুঃশাসনের খবর থেকে মানুষের মনোযোগ অন্যদিকে ফেরাতে পরিকল্পিতভাবে ইসু তৈরি করত। একটি ইস্যুতে ধামাচাপা না পড়লে একের পর এক ইস্যু তৈরি করতো। এতে লাভ আওয়ামী লীগের হতো দু’দিক থেকে, প্রথমত মানুষ আওয়ামী লীগের সকল অন্যায়গুলোর খবর চাপা পরতো, দ্বিতীয়ত - নিত্য নতুন চমকপ্রদ অঘটন আসায় পূর্বের ঘটনার তথ্য কিংবা বিচার মানুষ ভুলে যেত। একই সাথে নতুন অঘটনের বিষয়ে মানুষ কথা বলাবলি করতো। বিএনপির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো তখন আওয়ামী লীগ।  সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মিথ্যা এবং অন্যায়, এমনকি মিডিয়া ট্রায়ালের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। 

একদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছিলো নির্যাতিত অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অধিকাংশই অবৈধ উপায়ে উপার্জনের আচ্ছন্ন ছিলো। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কয়েকটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বিএনপির বিরুদ্ধে তখন মিডিয়া ট্রায়ালের জন্য কাজ করত। বর্তমানে পলাতক আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীরা দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে আছেন। তাদের কোন কাজকর্ম না থাকায় এখন সময় কাটাচ্ছেন বিভিন্ন নিউজ দেখে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাঁদের কাছে কারি কারি অর্থ থাকায়, এই অলস সময় একজোটে বিএনপির বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়ালে নেমেছে। তাদের একেকজনের অনেকগুলো বট আইডি রয়েছে যা দিয়ে প্রতিনিয়ত বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে চলেছে। বিএনপির বদনাম করতে কৌশল করে আওয়ামী লীগের থেকে বিভিন্ন সুবিধাভোগী, পদ-পদবি নেই কিন্তু বিএনপির সাথে সম্পর্ক আছে এমন নেতাকর্মীদের বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছে । সুবিধাবাদী চক্রের দ্বারা অপকৌশলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তুচ্ছ অপকর্ম ঘটিয়ে, বিএনপির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রচারণা করে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে বিএনপির সুনাম ক্ষুন্ন করতে মরিয়া।

সাংবাদিক হিসেবে বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিও এমনকি অনলাইন মিডিয়া হাউজগুলোতে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে তাদের পরিক্ষীত নেতাকর্মীদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। এইসব সাংবাদিক নামধারী আওয়ামী লীগের কুবুদ্ধিজীবী চক্র বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। তারা ফ্যাসিবাদী সময়ে আওয়ামী লীগের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে সামান্য তথ্যই জাতির সামনে উপস্থাপন করত। বাস্তবতার আলোকে এই চক্র উপলব্ধি করতে পেরেছে এখন আওয়ামী লীগের পক্ষে গুণগান করলে, সেটা তাদের উপর ওই নেগেটিভ ইমেজ তৈরি করবে। তার চেয়ে বরং বিএনপি'র দোষ ত্রুটি তুলে ধরতে পারলে জনগণের বাহবা পাবে।‌ একই সাথে তাদের দীর্ঘদিনের দূর্নীতি, অপকর্মের দায়ে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে গেলে তখন তারা একটি তত্ত্ব দিতে পারবে। এই সহজ তত্ত্ব হলো- তারা বিএনপির অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় তাদের হয়রানি করা হচ্ছে! এই কুচক্রী মহল বিএনপির বিরুদ্ধে তিলকে তাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে, নতুন নতুন ইস্যু তৈরি ও প্রচার করে বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালে ব্যস্ত। ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে সোচ্চার এবং প্রতিষ্ঠিত বিরোধী দল ছিলো বিএনপি। ফ্যাসিবাদের পতন এবং বিদেশে পলায়নের পর তারা আবারো সংগঠিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এমন উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশে হয়নি। এমনকি পৃথিবীর ইতিহাসেও এমন পূণরায় ফিরে এসে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব ফ্যাসিস্টরা গ্রহণ করেছে এমন ঘটনা বিরল ।

অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে বিএনপি ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে এটা বাস্তবতার আলোকে সর্বমহলে স্বীকৃত। তখন বিএনপির প্রকৃত বিরোধী দল কে/কারা হবে এটা নিয়ে চলছে নানান প্রতিযোগিতা। এমনকি বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণায় নেমেছে এতো দিন লড়াই সংগ্রামে বিএনপির সাথে প্রকাশ্যে/ অপ্রকাশ্যে থাকা, এক/একাধিক চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী/দল। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী কিংবা ছাত্রশিবিরের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যে বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য কিংবা লেখালেখির মাধ্যমে দ্বন্দ্বে জড়িত হয়নি। কিন্তু জামায়াত শিবিরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিংবা পরিচয় গোপন করে বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি করছে এমন অভিযোগ সুস্পষ্ট। তারা পরিচয় গোপন করে ফেসবুকে অসংখ্য ফেক আইডি দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে এই অভিযোগ এখন সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। ব্যক্তির নাম কিংবা দলীয় পরিচয় গোপনকারী এই আইডি গুলোকে বলা হয় বট আইডি। বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অপপ্রচারে নিয়োজিত এই বট আইডি গুলোর প্রকৃত মালিকদের বের করে পরিচয় প্রকাশ না করায় বিএনপির বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়াল আরো বেশি হচ্ছে। বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী ধারণা, বট আইডিগুলো জামায়াত ইসলামীর লোকজন চালায়, তাই জামায়াত ইসলামীকে দোষারোপ করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত ইসলামী দুই পাকিস্তানকে একত্রিত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তখন তারা পাকিস্তানের পক্ষে গড়ে তুলেন “আল বদর বাহিনী”। তারা আলোকে একটি গোষ্ঠী বর্তমান সময়ের এই বট আইডিগুলোকে অবহিত করেছে “আল বটর বাহিনী” হিসেবে। আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মী, প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ সাইবার যোদ্ধা গোষ্ঠী কৌশলে বিএনপির বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়াল করে গণঅভ্যুত্থানের সকল গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে এমন করছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা এখন মূখ্য বিষয়। বট আইডিগুলো খুঁজে তাদের উদ্দেশ্য এবং তথ্য প্রকাশ করাটাও এখন বিএনপির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বিএনপির বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়ালে ব্যস্ত গোষ্ঠীর মুখোশ উন্মোচন করতে না পারলে তারা বিএনপির বিরুদ্ধে আরও মিথ্যা প্রচারণায় লিপ্ত হবে। এরকমই একটি ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে ধানমন্ডিতে পার্কিংয়ের বৈধ ইজারা  ন্যায় জেড এস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সকল বৈধ ডকুমেন্টস থাকা সত্ত্বেও পার্কিং চার্জ না দিয়ে উল্টো চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলেন দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশ না করে এমনকি গাড়ির নম্বর গোপন রেখে বিএনপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা ভিডিও ভাইরাল করে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি করেন। এখানে প্রসাশনেরও রয়েছে দূরদর্শিতার অভাব, তাঁরা তথ্য যিনি ছড়িয়েছেন তাঁকে আইডেন্টিফাই না করে, কোনো অভিযোগ না নিয়ে মিডিয়া ট্রায়ালের উপর ভিত্তি করে ইজারাদার ভিক্টিম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় অপরাধী হিসেবে গ্রেফতার করেন। আদালতও মুক্তি না দিয়ে উল্টো তাকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরকম মিডিয়া ট্রায়ালের জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা এমনকি দল হিসেবে বিএনপি প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এন.সি.পি. এবং অন্যান্যরা কীভাবে বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি করছে, বাকি অংশ জানতে পরবর্তী লেখা প্রকাশের সময় পর্যন্ত পাঠকদের অপেক্ষা করতে অনুরোধ করছি। 

লেখক: সাবেক গণসংযোগ সম্পাদক, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। এম.ফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com