
দুবাইয়ের নাইট ক্লাবে পরিচয় বাংলাদেশি যুবক সাজ্জাদ মজুমদার আর পাকিস্তানি তরুণী মাহা বাজোয়ার। এরপর দীর্ঘদিন চুটিয়ে প্রেম আর অবশেষে পরিণয়। কিন্তু তাদের সেই পরিণয় বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ৬ বছর সংসার জীবন শেষে প্রেম গড়িয়ে যায় হামলা আর আদালতের মামলা দিকে।
স্বামীর দাবি নিয়ে প্রথমবার হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে এসে নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে যান দেশে। এবার এক বছর পর পাকিস্তান থেকে এসে স্বামী, বিয়ের কাজী ও সতীনসহ ১৪ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন মাহা। মামলা দায়েরের পর সাজ্জাদের পুরো পরিবার এখন এলাকা ছাড়া। এদিকে পুলিশ বলছে, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
গত ৬ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি মামলাটি দায়ের করলে বিচারক কামরুল হাসান তা এফআইআরভুক্ত করার জন্য চুনারুঘাট থানা পুলিশকে আদেশ দেন।
দুবাইয়ে কাপড় ব্যবসায়ী মাহা বাজোয়া পাকিস্তানের লাহোরের গাজীরোডের পাঞ্জাব সোসাইটির বাসিন্দা মকসুদ আহমেদের মেয়ে। অপরদিকে স্বামী হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পৌরসভার বড়াইল গ্রামের সফি উল্লা মজুমদারের ছেলে সাজ্জাদ হোসাইন মজুমদার ওরফে হিরা।
মাহার অভিযোগ করে বলেন, দুবাইয়ের একটি ক্লাবে তাদের দুজনের পরিচয় ও প্রেম হয়। দীর্ঘদিন প্রেমের পর ২০১৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে ১০ লাখ পাকিস্তানি রুপি দেনমোহরে মাহাকে বিয়ে করেন হিরা। এছাড়া শর্ত থাকে যে, হিরা যদি মাহাকে তালাক দিতে চায় তাহলে ২০ লাখ রুপি পরিশোধ করবেন এবং প্রতিমাসে আরও ৫০ হাজার রুপি ভরণপোষণ বাবদ দিতে হবে।
বিয়ের পর ২০১৮ সালে হিরা মাহাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং পরে মাহা পাকিস্তান এবং সাজ্জাদ দুবাইয়ে চলে যান। সেখানে ২০১৯ সালে নাসির উদ্দিন সেলিম নামে এক ব্যক্তির গাড়িচালকের চাকরি নেন সাজ্জাদ। এই সুবাধে নাসিরের স্ত্রী সোনিয়ার সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে ওই নারীকেও বাংলাদেশে এনে বিয়ে করেন এবং তারা সংসার করছেন। সোনিয়া সেলিমের স্ত্রী থাকা অবস্থায় সাজ্জাদকে অবৈধভাবে বিয়ে করেছেন উল্লেখ করে এই বিয়ের সাথে জড়িত সবার বিচার চেয়েছেন পাকিস্তানি মাহা বাজোয়া।
এর আগে মাহা ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর স্বামীর খোঁজে চুনারুঘাটে আসেন। সেখানে স্বামী সাজ্জাদের ভাইয়ের বাড়িতে তিনি অবস্থান নেন। এসময় তাকে মারপিট করা হয়। পরে স্বামীর বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ আদালতে দুটি মামলা এবং চুনারুঘাট থানায় মারপিটের অভিযোগে আরও একটি মামলা দায়ের করেন মাহা।
এ ব্যাপারে মাহা জানান, তিনি সাজ্জাদকে কখনো ডির্ভোস দেন নাই। এমতাবস্থায় সে আরেকটি বিয়ে করেছে। তাই সাজ্জাদসহ প্রতারণায় সাথে জড়িত সকলের বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। আদালত যদি বলে যে- সে সাজ্জাদকে আর পাবে না, তাহলে পাকিস্তান চলে যাবে। তবে ইনশাআল্লাহ আদালত ন্যায়বিচার করবে।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক তদন্তে মাহার অভিযোগের কিছু সত্যতা পাওয়া গেছে। মামলা দায়েরের পর আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে।