টিউলিপের ক্ষমা চাওয়া উচিত: ড. ইউনূস

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া এবং সেটির তথ্য গোপন করে ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। ব্রিটিশ এ মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে দেশটির বিরোধী দল।
এরইমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ অভিযুক্ত টিউলিপকে নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমসকে তিনি বলেছেন, “লন্ডনের যে ফ্ল্যাট টিউলিপ ব্যবহার করছে, সেটির তদন্ত করা উচিত। যদি তদন্তে পাওয়া যায় তিনি এটি ‘ডাকাতির’ মাধ্যমে পেয়েছেন, তাহলে ফ্ল্যাটটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে ফেরত দেওয়া উচিত।”
অপরদিকে টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ। তিনি বলেছেন ‘কেয়ার স্টারমার! টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার সময় এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার তার ব্যক্তিগত বন্ধুকে দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছেন এবং তিনি নিজেকেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।’
টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য, তিনি ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। কিন্তু তার জন্মভূমি বাংলাদেশেই এখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, যেখানে তিনি এবং পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
অর্থনীতিবিদ এবং শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের ৮ আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সানডে টাইমসকে বলেন, ‘ব্রিটিশ সরকারের ট্রেজারি ও সিটি মিনিস্টার হিসেবে আর্থিক দুর্নীতি মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনের বাড়িগুলো অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে তৈরি করা কিনা, তা তদন্ত হওয়া উচিত।’
সানডে টাইমস জানিয়েছে, তারা তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে যে টিউলিপ সিদ্দিক বছরের পর বছর ধরে একটি বাড়িতে বাস করেছেন, যে বাড়িটি দুই বাংলাদেশি ব্যবসায়ী একটি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কিনেছিলেন। অথচ এ ধরনের আর্থিক অস্বচ্ছতা এড়াতে তিনি বরাবর কথা বলতেন।
টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। ভারতে পালোনোর আগে অভ্যুত্থান ঠেকাতে তিনি শত শত মানুষকে পুলিশ বাহিনী দিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, জোরপূর্বক গুম ও দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে।
সানডে টাইমস আরও জানিয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের পারমাণবিক শক্তি চুক্তিতে টিউলিপ মধ্যস্থতা করেছিলেন এবং আর্থিকভাবে উপকৃত হয়েছিলেন। তাঁর দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে টিউলিপ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ব্রিটিশ সরকারের দুর্নীতি দমন মন্ত্রী হয়েছেন টিউলিপ এবং তাঁর বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছু হয় না।
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘তিনি যখন কাজটি (দুর্নীতি) করেছেন, তখন হয়তো বুঝতে পারেননি। কিন্তু এখন তো বুঝতে পারছেন। এখন আপনার বলা উচিত, আমি দুঃখিত। আমি তখন বিষয়টি (দুর্নীতির) জানতাম না। এখন আমি জনগণের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং পদত্যাগ করছি। কিন্তু তা বলছেন না। বরং নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।’
এরপর সঙ্গে সঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘তাঁর (টিউলিপের) পদ করা উচিত—এমন বলাটা আমার কাজ না।’