মঙ্গলবার ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ   তফশিল ঘোষণার তারিখ নিয়ে যা জানালেন ইসি মাসউদ!   প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকের পর যা বললেন সিইসি   কোরআনের মাহফিলে হৃদয়বিদারক ঘটনা: স্ট্রোকের পর হাসপাতালে মৃত্যু হুজুরের   বেগম রোকেয়ার আদর্শে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আহ্বান: প্রধান উপদেষ্টা   বিএনপির সঙ্গে জোট করার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি: রাশেদ খান   প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে ভুরুঙ্গামারীর কৃষি   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ঝিকরগাছায় মাটি-বালুখোরদের দৌরাত্ম্য থামছেই না
রফিকুল ইসলাম, ঝিকরগাছা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫, ৮:০৫ পিএম

কপোতাক্ষ নদের উত্তোলিত বিপুল অবৈধ বালুর গোপন মজুদের সন্ধান মিলেছে। এসব গোপন আস্তানায় মজুদ করা হয়েছে লাখ লাখ সিএফটি বালু। নদের সংলগ্ন সাড়ে চারবিঘা আয়তনের একটি পুকুর ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ বালুর গোপন মজুদ। এর পার্শবর্তী আরও কয়েকটি স্থানের বালুর ডিপোথেকে এর আগে পর্যায়ক্রমে লাখ লাখ টাকার বালু বিক্রি হয়ে দেদার। 

কপোতাক্ষ নদের বালু-মাটি বিক্রি করে কোটিপতি বনে যাওয়ার খবর চাউর হয়েছে এলাকাজুড়ে। এসব চিহ্নিত বালুমাটি খোররা কপোতাক্ষ নদের পাশাপাশি সমতল ভূমির আবাদি জমির উপরের অংশের উর্বরমাটি ছাড়াও ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করেই চলছে। কিছুতেই এদের লাগামটানা যাচ্ছে না। 

অভিযোগ রয়েছে, দিনেরপর দিন রাতেরপর রাত এই বালু মাটি ব্যবসায়ী নামধারী দুর্বৃত্তরা উর্বর ফসলি জমির উপরের অংশের মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করছে। উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের মিশ্রীদেয়াড়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় হদিস মিলেছে এই অবৈধ বালুর বিশাল গোপন মজুদ। এ যেন বালুর অফুরন্ত খনি। আর এসব খনি থেকে বালু মাটি ভর্তি সারিবদ্ধ কিংবা বিচ্ছিন্নভাবে ট্রাক্টর সংযুক্ত ট্রলি ও ট্রাক ভর্তি করে দিনরাত পাচার  হয়ে এসেছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এমনটাই দাবি করছেন স্থানিয়রা। এতে গ্রামীণ অবোকাঠামো বিশেষ করে কাঁচাপাকা সড়ক মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইটভাটার পাশাপাশি এক শ্রেণির সুযোগসন্ধানি এই বালুমাটির বড় ক্রেতা। এরা কম দামের নিচু শ্রেণির জমি খরিদ করে তা ভরাট করছে বেশি মূল্যে বিক্রির উদ্দেশ্যে। বালুখোরদের ব্যাপারে এক শ্রেণির অসাধু পুলিশ অবগত থাকলেও রহস্যজনক কারণে এরা ধরাচরার বাইরে থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। তাছাড়া সুবিধাভোগী উপরিমহলের তদবিরও একটি বড় কারণ। বালুখোরদের গোপন মজুদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এবার উঠে এসেছে ঝিকরগাছা পৌরসদর ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শরিফুল ইসলামের নাম। 

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পৌরমহাশ্মশান ঘাটের অপরপাড়ে কপোতাক্ষনদের বিশাল জায়গা দখল করে কয়েক লাখ সিএফটি বালুর মজুদ গড়ে তুলেছেন। পাশে রয়েছে বিশাল এলাকা জুড়ে মাছের ঘের। যদিও তিনি দাবি করে থাকেন পৈত্রিক ও ক্রয়সূত্রে তিনি ওই জমির মালিক। 

জানাগেছে, মাগুরা ইউপির ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্মর জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ওই এলাকায় গড়ে ওঠে একটি শক্তিশালি মাটিবালুখোর সিন্ডিকেট। বালুখোরদের মূলহোতা এই ইউপির মেম্বর জামাল উদ্দিন। তিনি ৮৬ যশোর-২ চৌগাছা-ঝিকরগাছা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল(অব) অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন এই ইউনিয়নের বাসিন্দা হওয়ায় দোদন্ড প্রতাবশালি হয়ে ওঠেন। তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে বালুমটি উত্তোলন ও বিক্রির সিন্ডিকেট। তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে তাদের ভয়ে স্থানিয়রা টুশব্দটি করার সাহস পাইনি। এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্যরা হলো, পাশ্ববর্তী আঙ্গারপাড়া গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে এমপির জামাতা পরিচয়দানকারী আলামিন, মিশ্রীদেয়াড়া গ্রামের হাতেম মেম্বরের ভাই সাত্তারের ছেলে বাপ্পি, হামেম মেম্বরের বড় ভাই কাঠুর ছেলে টিক্কা, আঙ্গারপাড়ার আবু হোসেনের ছেলে মোরশেদ আলম, বহিরামপুর গ্রামের আমজেদ আলির ছেলে আজাদসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন। 

বলাবাহুল্য কপোতাক্ষনদের পুরো ঝিকরগাছা উপজেলা অংশ জুড়ে বালুমাটি উত্তোলন ও বিক্রির হিড়িক পড়েছে দীর্ঘদিন ধরে। একইসাথে সমতলের মাটিকাটাও চলছে সমানে। উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের রাজাপুর ঢালিপাড়া গ্রামের রাজ্জাক মেম্বরের ছেলে ইয়াদ আলী ওরফে ইদেল, বাবুল ঢালির ছেলে বাবু লূতফর ঢালির ছেলে তরিকুল ও হাজিরআলি গ্রামের আহম্মদ আলীর ছেলে সাহেব আলী অবৈধ মাটিবালুর কারবারি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

এ ব্যাপারে জামাল মেম্বরের সাথে তার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। 

আলোচিত গোপন বালুমজুদের পুকুর মালিক সাবেক ইউপি মেম্বর হাতেম আলী জানান, গেল ৫ বছর আগে বার্ষিক ৫০ হাজার টাকায় ৫ বছরের চুক্তিতে সাড়ে ৪বিঘা পুকুরটি তিনি একই গ্রামের মেম্বর জামাল উদ্দিনকে ইজারা প্রদান করেন। ইজারার টাকা পরিশোধ ও লীজের মেয়াদ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, পুকুরটি তিনি নিজ টাকায় ভরাট করে নিয়েছেন। ভরাটকৃত পুকুরটির সমুদয় বালু কপোতাক্ষ নদ থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করা তা তিনি স্বীকার করেছেন। তবে স্থানীয়দের দাবি মাটিবালুখোর জামাল মেম্বরকে দায়মুক্তিদেবার অপচেষ্টা হিসাবে তার পক্ষ অবলম্বন করেছেন পুকুরমলিক হাতেম আলী। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়দের অভিযোগ, গত জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লব পরবর্তী পটপরিবর্তনের ফলে অবৈধ বালুমাটি কারবারিদের ব্যবসায় ধস নামে। তবে তা একেবারে থেমে যায়নি। কপোতাক্ষ নদ থেকে উত্তোলিত অবৈধ এই বালুর মজুদ তারা এখনো বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com