শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শিরোনাম: বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর    কুমিল্লায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ৫    শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ    মালয়েশিয়ান শ্রমবাজারে জনশক্তি পাঠানো বন্ধ হবে না     নির্বাচন কমিশনের প্রতি ভোটার ও প্রার্থীদের বিশ্বাস জন্মেছে : ইসি     বৈদেশিক ঋণের প্রকল্প দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী    দেশের ১৫৭টি উপজেলায় আগামী ২১ মে সাধারণ ছুটি   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
উন্নত দেশে পৌঁছতে প্রয়োজন বিচক্ষণতা
ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ১২.০৩.২০২১ ১:৩৮ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ

উন্নত দেশে পৌঁছতে প্রয়োজন বিচক্ষণতা

উন্নত দেশে পৌঁছতে প্রয়োজন বিচক্ষণতা

দক্ষ হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনা করায় বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্বজুড়ে চমক সৃষ্টি করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর বাংলাদেশের ৫০ বছরের প্রায় ৩০ বছর বা তিন দশক ক্ষমতায় ছিল বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী। যারা স্বাধীনতার ঘোষণা মানে না। ৭ই মার্চ মানে না। অস্বীকার করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে। এদের ৩০ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ অতিক্রম করে এসেছে এক অন্ধকার যুগ। গণতন্ত্রের মানস কন্যা শেখ হাসিনা যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় এলেন, তারপর ক্রমাগত বাংলাদেশের প্রতিটি স্তরে উন্নতির স্পর্শ লাগতে শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে বাংলাদেশ জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে সম্প্রতি। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ এক বড় বিজয়। তবে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশ উত্তরণ ঘটালে তৈরি পোশাক ও ওষুধ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদীয় কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে এবং নেতিবাচক প্রভাবের যে শঙ্কা প্রকাশ করেছে, তা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নেবে এটা ধরে নেওয়া যায়।

বিগত দিনে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটার পরেও কোনো কোনো দেশ উন্নত দেশে পৌঁছাতে পারেনি বরং স্বল্পোন্নত দেশের যে অবস্থান ছিল, সেখান থেকে আরও অবনতি ঘটে। ফলে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। যেসব দেশ অতীতে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে, ওইসব দেশের অভিজ্ঞতার দিকে আমাদের সরকারের নজর দেওয়া উচিত। সংসদীয় কমিটির শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এ দুটি খাত আমাদের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ফলে তৈরি পোশাক এবং ওষুধ শিল্পে বিপর্যয় ঘটলে বাংলাদেশের উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হবে।

এদিকে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে দুর্নীতি হয়, তা বিশ্বের অন্যদেশে হয় বলে কারোর জানা নেই। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি রোধ যেকোনো উপায়ে বন্ধ করতেই হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে আইনের পরিবর্তন ঘটাতে হলেও জনস্বার্থে সেটাই সরকারের করে দেখাতে হবে। পাশাপাশি বলা চলে, ৫০ বছরের বাংলাদেশের ৩০ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল যে বিএনপি, জাতীয়। এই দলগুলো সর্বস্তরে যে দুর্নীতির বিষবৃক্ষ রোপণ করে গেছে, তাকে উপড়ে ফেলতে কিছু সময় প্রধানমন্ত্রীর লাগবেই। তিনি দুর্নীতি বিরোধী জিরোটলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন এবং তা কঠোর প্রয়োগে কাজ করছেন। ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। টানা একযুগ ক্ষমতায় থেকে অনন্য এক বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন, নিউইয়র্ক টাইমসের এক লেখায় তা ফুটে উঠেছে।
প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশ ব্যতিক্রমী অগ্রগতি অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অবিছিন্নভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, বর্তমান করোনা মহামারির আগে চার বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রতি বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৭ থেকে ৮ ভাগ। এটা ছিল চীনের চেয়েও দ্রুত প্রবৃদ্ধির গতি। বাংলাদেশে গড় আয়ুষ্কাল এখন ৭২ বছর। মিসিসিপির ১০টি কান্ট্রিসহ যুক্তরাষ্ট্রের অল্প কয়েকটি জায়গার চেয়ে বাংলাদেশের গড় আয়ুষ্কাল বেশি। বাংলাদেশ হয়তো এক সময় হতাশার রূপ ধারণ করেছিল। কিন্তু কিভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতে হয় তা বিশ্বকে শিখাতে বাংলাদেশের কাছে যথেষ্ট কিছু আছে। বাংলাদেশে এর গোপন রহস্য কি? এর উত্তর শিক্ষা এবং বালিকারা।



১৯৮০‘র দশকের শুরুতে এক তৃতীয়াংশেরও কম বাংলাদেশি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতেন। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা ছিল বিরল। অর্থনীতিতে তাদের অবদান ছিল উপেক্ষিত পর্যায়ে। তারপর সরকার এবং নাগরিক সংগঠনগুলো বালিকাসহ শিক্ষাকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেয়। বর্তমানে বাংলাদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ শিশু স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে। আরও বিস্ময়কর খবর হলো এখানে ঐতিহাসিকভাবে লিঙ্গ বৈষম্য আছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখন হাই স্কুলগুলোতে ছেলেদের তুলনায় মেয়ের সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশ যেহেতু নারীদের শিক্ষিত এবং ক্ষমতায়িত করেছে, এর ফলে ওই সব নারী বাংলাদেশের অর্থনীতির স্তম্ভ হয়ে উঠেছেন। দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো নারীদের উন্নত সুবিধা দিয়েছে। চীনের পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তৈরি পোশাকের রফতানিকারক এখন বাংলাদেশ।

দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশকে একটি উৎসাহমূলক কাহিনী হিসেবে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। ১৫ বছরে এ দেশ থেকে দুই কোটি ৫০ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে তুলে আনা হয়েছে। শিশুদের অপুষ্টিতে ভোগার হার ১৯৯১ সাল থেকে প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে এই হার ভারতের চেয়েও কম। বাংলাদেশি নারীদের এখন গড়ে দুটি করে সন্তান আছে। আগে এই সংখ্যা ছিল ৭। সংক্ষেপে বলতে হয়, বাংলাদেশ তার সবচেয়ে অব্যবহƒত সম্পদ তার দরিদ্রদের পেছনে বিনিয়োগ করেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রান্তিকরা এবং অনুৎপাদনশীলরা সবচেয়ে বেশি নজরে পড়েছেন। কারণ, এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি রিটার্ন আসতে পারে। একই কথা সত্য হতে পারে আমেরিকার জন্যও। আমরা আমাদের বিলিয়নিয়ারদের কাছ থেকে অধিক পরিমাণ উৎপাদনশীলতা কমিয়ে আনতে যাচ্ছি না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সাতটি শিশুর মধ্যে একজন শিশু, যারা অর্থের অভাবে হাইস্কুলের গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করতে পারে না। যদি আমরা তাদেরকে সাহায্য করতে পারি, তাহলে এই দেশটি ব্যাপক সুবিধা পাবে। এ কারণেই জো বাইডেন শিশুদের দারিদ্র্য দূর করার উদ্যোগ নিয়েছেন। হয়তো তিনি সেটা পারবেন। এ জন্যই এটা একটি কেন্দ্রীয় ইস্যু হয়ে উঠেছে। রিফান্ডেবল চাইল্ড এন্ড ক্রেডিট স্থায়ীভাবে সৃষ্টি করা উচিত। বাংলাদেশ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা শিশুদের পেছনে বিনিয়োগ শুধুই সহানুভূতি জানানো নয়। একই সঙ্গে তা জাতিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহায্য করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এবার উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত করতে পুরোপুরিই সফল হবেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ক্রমশ যেভাবে উন্নতির শিকড়ে নিয়ে গেছেন, গণতন্ত্র এবং সুশাসনকে শক্তিশালী করে তুলছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এ দেশের ঘাতক জামায়াত ও তার দোসর বিএনপি যতো গণতন্ত্রের জন্য মায়া কান্না করুক, আসলে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে প্রকৃত কোনো প্রভেদ নেই। ফলে এদের পেছনে যারা আছে তারা ভ্রষ্ট চরিত্রের মানুষ। এরা শেখ হাসিনার বাংলাদেশের শক্তিশালী গণতন্ত্র, সুশাসন এবং উন্নত বাংলাদেশকে দেখতে পায় না। তাতে বাংলাদেশের উন্নতি এবং উন্নত দেশে পৌঁছার আকাক্সক্ষা থেমে থাকবে না বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


আরও সংবাদ   বিষয়:  উন্নত দেশ   বিচক্ষণতা   ড. কাজী এরতেজা হাসান  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]