রবিবার ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৬ মাঘ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ভোলা আওয়ামী লীগে গ্রুপিংয়ের নাটের গুরু নোমান!
উৎপল দাস
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:২২ পিএম আপডেট: ২৩.০২.২০২৩ ১১:২৫ PM

বাংলাদেশের সকল জেলার রাজনীতির চেয়ে ভোলার রাজনীতি যথেষ্ট আলাদা। ওখানে আওয়ামী লীগ চলে অন্য নীতিতে। এক সময় বিএনপির দূর্গ হলেও ভোলা ৩ আসনে জনপ্রিয়তা সংসদ সদস্য ও লালমোহন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনকে চাপে রাখতে গত ৭ মাস ধরে পুরো আওয়ামী লীগকেই গ্রুপিয়ের মাধ্যমে ধ্বংস করার পথে নিয়ে যাচ্ছেন শেয়ার কেলেংকারি থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইঞ্জিনিয়ার নোমান হাওলাদার। ভোলার স্থানীয় সূত্র বিষয়গুলো ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করেছে। 

সূত্র আরো জানিয়েছে, ভোলা ৩ আসনের এমপি হওয়ার জন্য গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তোরজোর চালাচ্ছেন বিবিএস ক্যাবলের চেয়ারপারসন ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হওলাদার, সিআইপি। শেয়ার বাজারে আইপিও মূল ভিত্তি মূল্য নিয়ে কারসারি করে শত কোটি টাকার বেশি লুটে নেয়া এই নোমানকে সহায়তা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ জসিম এবং আরেক আওয়ামী লীগ নেতা  প্রকৌশলী মোবাশ্বর আলী স্বপন। এক সময় বিএনপির দূর্গ হলেও বর্তমান এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের নেতৃত্ব যখন উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় লালমোহন-তজমুদ্দিনের জনগণ যেখানে ভালো আছেন, সেখানে শাওনকে পিছনে ফেলতে জনবিচ্ছিন্ন এই  ইঞ্জিনিয়ার নোমান হওলাদার কালো টাকার প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং করে দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছেন বারবার। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলা ৩ আসনের সংসদ সদস্য  নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধে নামে বেনামে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়ার কাজটিও নিয়মিত করে যাচ্ছেন যারা, তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে কাজ করছেন  ইঞ্জিনিয়ার নোমান হওলাদার। 

তবে স্থানীয় জনগণ সুস্পষ্ঠভাবে জানিয়েছে, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সিনিয়র নেতা হাফিজ উদ্দিন আহম্মদকে হারাতে হলে সেখানে  নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের কোনো বিকল্প নেই। কেননা, রাজনৈতিক ও মানবিকভাবে তিনি অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। লালমোহন ও   তজমুদ্দিনের সাধারণ মানুষের পাশে সব সময়ই দাঁড়িয়েছেন শাওন। করোনা মহামারি থেকে শুরু করে যেকোনো বিপদে আপদে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সাধারণ মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে। 

লালমোহন ও   তজমুদ্দিনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে,  শেয়ার কেলেংকারি, মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষক নোমানের পক্ষে আওয়ামী লীগের কোনো জনবল নেই। তিনি রাজনৈতিক মাঠে টিকতে না পারলেও নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ভালোভাবেই চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরণের ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে যেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়, সেটির দাবিও তুলেছেন তারা। 

লালমোহন ও তজুমুদ্দিন থানার নিভৃত গ্রামেও যেখানে সেখানে বসছে মদ, গাঁজার আসর, চলছে ইয়াবা ধুম কেনাবেচা। মাঠেঘাটে, নৌকায় বসছে জুয়ার আসর। কোত্থেকে আসছে এতো টাকার জোগান? উত্তরে জানা গেছে, টাকা দিচ্ছে কোম্পানি। নোমান হাওলাদারের মালিকানাধীন বিবিএস কোম্পানিটি এলাকাবাসীর কাছে ‘কোম্পানি’ নামেই সমধিক পরিচিত। ওই কোম্পানি কেন, কিভাবে টাকা ছড়ায় হাতে হাতে?  সে প্রশ্নের জবাবে জানা গেছে, সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের গ্রুপ পরিত্যাগ করা যুবকেরা কোম্পানির টাকা পায়, শাওনের ঘোষিত বিভিন্ন শাখা কমিটিতে বিরোধ বাধিয়ে নিস্ক্রিয় করতে পারা নেতা কর্মিরাও উপহার স্বরুপ টাকা পায়, গ্রামেগঞ্জে এমপি শাওনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের হেনস্তা করতে পারলেও কোম্পানির বিশেষ বরাদ্দ যায় তাদের কাছে। মূূলত ‘গালি দিলেও টাকা মেলে’ এমন এক অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে ভোলা-৩ আসনে। এসব নিয়ে এমপি শাওন শিবিরেও অসন্তোষ, উত্তেজনা চরম আকার ধারন করেছে। যে কোনো মুহূর্তে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যতা নিয়েও বড় ধরনের সংঘাত সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক সচেতন বাসিন্দারা।

একসময় হাওয়া ভবনের ঠিকাদার এবং লন্ডনে পলাতক বিএনপি নেতা তারেক রহমানের আশীর্বাদে বিত্তবৈভবে মোটাতাজা হওয়া আবু নোমান হাওলাদার এখন ভোলা আওয়ামীলীগের হর্তাকর্তা বনেছেন। তার সিদ্ধান্তেই থানা, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়েও আওয়ামীলীগ, যুবলীগের কমিটি গঠন করতে হয়। ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগও তার আওতার বাইরে নয়। তৃণমূল পর্যায়ে মূল দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিজের চাহিদা মাফিক সাজিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছেন। দলের ভেতরে তার এ অনধিকার চর্চার সুযোগ করে দিচ্ছেন আওয়ামীলীগেরই হেভিওয়েট এক নেতা। চাউর রয়েছে, শত কোটি টাকা সালামি দেয়ার বিনিময়ে ভোলা ৩ আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়নও হাতিয়ে নিতে চাইছেন নোমান হাওলাদার। এ কারণে, সংশ্লিষ্ট আসন এলাকায় সর্বস্তরে যোগাযোগ গড়ে তোলার চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছেন, এমনকি দলে গ্রুপিং, লবিং, বিরোধ বাধিয়েও নিজের পাল্লা ভারি করার কৌশলে মেতে উঠেছেন তিনি। এতে নোমান হাওলাদার ব্যক্তিগতভাবে কমবেশি লাভবান হলেও ভোলার লালমোহন ও তজুমুদ্দিন (ভোলা-৩ আসন) এলাকায় আওয়ামীলীগ খন্ড বিখন্ড হচ্ছে, নেতা কর্মিরা লিপ্ত হচ্ছে আত্মকলহে।
লুটেরা পিকে সাহা’র আদলে নানা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হাওলাদার। রাজনৈতিক ময়দানে সেসব টাকা ছড়িয়ে চরম বিতর্কের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন তিনি। তার ছড়ানো ছিটানো টাকাই এখন ভোলার রাজনীতিকে অস্থির করে তুলেছে, ভেঙ্গে দিয়েছে সামাজিক শৃঙ্খলাও। বেকার, বখাটেদের হাতে হাতে কাড়ি কাড়ি টাকা ছড়িয়ে মাদক, জুয়াসহ নানা অপরাধের বিস্তার ঘটানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের দিকে কয়েকজন পার্টনার নিয়ে স্প্রিং বিল্ডিং কন্সট্রাকশন নামের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন নোমান হওলাদার। ২০০০ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তৎকালীন স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ্ এর নিকটতম আত্মীয় গাজীপুর কাপাসিয়া এলাকার বাসিন্দা ডা. আক্তারুজ্জামানের কণ্যা মনিরাকে বিয়ে করে বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয় হয় নোমান। ২০০১ সালে জামাত-বিএনপি চারদলীয় ঐক্যজোট ক্ষমতায় আসার পর হাওয়া ভবনের আর্শিবাদপুষ্ট হয় অবৈধ সুবিধা ভোগ করে রাতারাতি ভাগ্য বদলাতে শুরু করে নোমান হাওলাদারের।

স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ করে যেন নোমান রুপকথার আলাদিনের চেরাগ প্রদীপের মতো জ্বলে উঠেন। নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন প্রাসাদসম বাড়ি। এলাকা জুড়ে বাবার নামে করেছেন আবদুল হান্নান মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তার নামে লালমোহন পৌরসভা এলাকায় কোটি টাকা মুল্যের ২০ শতাংশ জমি রযেছে। এলাকায় নামে-বেনামে রয়েছে বহু সম্পদ। মাত্র ২০ বছরের ব্যবধানে হাজার হাজার কোটি টাকার গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এত রাতারাতি এত বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ায় এলাকার মানুষের বিস্ময় প্রকাশ করেছে। ভোলা ৩ আসনে তিনি সরকার দলের এমপি হওয়ার টিকেট পেতে আওয়ামী লীগে দলীয় ট্যাগ লাগিয়ে ঘুরছেন। দলের মনোনয়ন পেতে লালমোহন ও তজুমদ্দিন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে কোটি টাকার মিশনে নেমেছেন নোমান হাওলাদার।

আওয়ামীলীগের কোনো পর্যায়ের সদস্য না হয়েও ব্যাংক লুটেরা খ্যাত ইঞ্জিনিয়ার নোমান হাওলাদার জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম, মৃত্যুবার্ষিকী পালন নিয়ে অতিরিক্ত দরদ দেখানোর নানা কর্মকান্ড আয়োজন করে ভোলায় আওয়ামীলীগকে দ্বিধাবিভক্ত করে চলছেন। তিনি বাছাইকৃত কিছু নেতা কর্মিদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতের নামে রাজকীয় ভ্রমণ আয়োজন করে থাকেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর মাজার জেয়ারতের কথা বলে তার কবর ছুঁইয়ে সবাইকে নোমান হাওলাদারের সঙ্গে থাকার শপথ করান বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বিবিএস ক্যাবলের চেয়ারপারসন  ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান হওলাদার, সিআইপিকে ভোরের পাতা অফিস থেকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com