প্রকাশ: বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৪৯ AM আপডেট: ২৯.১২.২০২১ ১:৫০ এএম

নিয়ম মেনে ঢাকা নগর পরিবহন চলাচল করলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে মনে করেন যাত্রীরা। যে কোন কাজের শুরুতে নানান চ্যালেঞ্জ থাকে। তাই বলে গতি থামিয়ে দিলে চলবে না বলেও তারা মনে করেন। প্রাথমিক ভাবে অনেকেই বাস রুটের ক্ষেত্রে ত্রুটি খুঁজে পাবেন যা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কারণ, নতুন যেকোন কিছুই আমাদের প্রচলিত বিশ^াসের উপর আঘাত হানে। যা মেনে নেওয়া একটি কঠিন ব্যাপার। তবে ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরিয়ে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষ জানালে তার সমাধান হবে বলেই মনে করেন নগর পরিবহন কর্তৃপক্ষ। সে সব দোষ সারিয়ে মোহাম্মদপুর ঘাটারচর-মতিঝিল-কাঁচপুর রুটের যাত্রীসেবা বাড়ানো যাবে বলেই মনে করেন যাত্রীরা। এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নে গত রোববার চালু কারা হয়েছে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। এমনটিই মনে করেন এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা।
লাল-সবুজ রঙের এই বাস চলাচল পরিস্থিতির তৃতীয় দিনে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মতিঝিল ও প্রেসক্লাব বাসস্টপেজ সরেজমিনে নতুন এই পরিবহন চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রীরা এসব অভিমত দেন। তারা জানান, যথাযথ নিয়ম নেমেই চলছে লাল-সবুজ রঙের বাসগুলো। টিকেট ও নির্ধারিত বাস স্টপেজ ছাড়া কোন যাত্রী উঠা-নামা করতে দেখা যায়নি। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলাচল করবে এই বাস সার্ভিস। যদি এই নিয়ম ধরে রাখা যায় তাহলে পরিবহনের শৃঙ্খলা অনেকটা ফিরে আসবে বলে যাত্রীরা জানানা। তবে নির্ধারিত বাস স্টপেজ পুরোপুরি চালু না ও বাসের পরিমাণ কম থাকায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা কারণে তেমন যাত্রীরা পাওয়া যাচ্ছে না বাস স্টাফরা জানান।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, চালু হওয়া পাইলটিং রুটে ৫০টি বাস চলছে। এর মধ্যে ৩০টি বিআরটিসির এবং ২০টি বেসরকারি মালিকানাধীন। তিনি ভবিষ্যৎ সফলতার জন্য আমাদের এ রুটকে সফর করতে হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি মেট্রোরেল রুট নির্মাণের কাজ করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। মেট্রোরেল রুট-৬, বিআরটি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে ঢাকাবাসী অধিকতর স্বস্তি পাবে বলে সেতু মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আমরা বিশে^র অন্যান্য জনবহুল নগরীর গণপরিবহনের যে সক্ষমতা তার তুলনায় আমরা পিছিয়ে রয়েছি। এ উপর রয়েছে শৃঙ্খলার অভাব। বাস রুট রেশনালাইজেশনের মাধ্যমে কমিউটারদের স্বস্তি দেওয়ার কাজ আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। গণপরিবহনের সক্ষমতা বাড়লে ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহারও কমে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এতে কমবে যানজট। মহানগরীকে আমরা পরিবহন-বান্ধব শহর হিসেবে রুপ দেয়ার যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নে সফল কামনা করেন।
সরেজমিনে এই রুটের বাসে ভ্রমণের সময় যাত্রী ও বাস স্টাফরা বলেন, অনেক স্থানের ভাড়া অন্যান্য বাস থেকে কিছুটা কম নেওয়া হচ্ছে। ঘাটারচর-কাঁচপুর পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুটে প্রতিকিলোমিটার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২ টাকা ১৫ পয়সা। নিয়ম ঠিক থাকলে যাত্রীদের ভ্রমণের চাহিদা বাড়বে। এই রুটে দ্রুত আরও বাস নামানোর দাবি জানান অনেক যাত্রীরা। মিজান নামের মতিঝিলের এক যাত্রী বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে উঠেছি। এই বাসের জন্য প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে। অনেকে এই অপেক্ষা করতে চায় না। সামনে যে বাস পাবে তাতে চলে যাবে। তাই যাত্রী অপেক্ষা কমাতে দ্রুত আরও বাস নামানোর দাবি জানান তিনি। সায়লা বেগম নামের এক মহিলা যাত্রী বলেন, সিট কম থাকায় বাসের ভেতরের ডেকরেশন বিদ্যমান বাস থেকে অনেক ভালো। তবে সিটগুলো আগের মতো পুরানো। মহিলাদের জন্য নির্ধারিত ৯টি সিটে স্টিকার দিয়ে চিহ্নিত করার দাবি জানান তিনি। ঢাকা নগর পরিবহন বাসে ভাড়াও ১০ টাকা কম নেওয়া হচ্ছে বলে জানান শনিরআখড়া থেকে মতিঝিলে আসা এক যাত্রী। তিনি বলেন, অন্যান্য বাসে শনিরআখড়া থেকে মতিঝিলের ভাড়া নেওয়া হয় ২০ টাকা। কিন্তু এই বাসে নিলো ১০ টাকা। অনেকে জানেই না, এই নতুন বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। এভাবে চললে কিছু দিন গেলে যাত্রী হবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর প্রেসক্লাব এলাকায় তাইফুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি সাইন্সল্যাব থেকে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছি। প্রথমে ভেবেছিলাম ভাড়া কত নেবে! তারপর দেখলাম স্টুডেন্ট পরিচয় দিতেই হাফ ভাড়ার একটি টিকেট দেয়া হলো। টিকেটে শিক্ষার্থী উল্লেখ করা হয়েছে। ২০ টাকা ভাড়া তার কাছে ১০ টাকা নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা নগর পরিবহনের সব বাস স্টপেজ এখনো পুরোপুরি চালু না হওয়া তেমন যাত্রী হচ্ছে না বলে জানান আল-আমিন নামের এক টিকেট বিক্রেতা। রাজধানীর দৈনিক বাংলামোড়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যাত্রী সার্ভিস লিমিটেড’ কোম্পানির অধীনে তারা কাজ করছেন। টিকেট বিক্রয় করেন তারা দুইজন স্টাফ। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা একজন। অন্যজন দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করেন।’ সোমবার দুপুর ২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ২০ টিকেট বিক্রয় হয় বলে জানান তিনি। ঢাকা নগর পরিবহন সার্ভিস প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ‘পিক টাইম’ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময় ৫ মিনিট পর পর যাত্রীছাউনিতে বাস এসে দাঁড়াবে। অন্য সময় আসবে প্রতি ১০ মিনিট পর পর। নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারবেন না এবং তা করাও হচ্ছে না। যাত্রীরা যত্রতত্র উঠতে বা নামতে চাইলেও তাদের নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া ওঠানো বা নামানো নিষেধ। ৩৬ সিটের মিনিবাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহনে যথেষ্ট জায়গা রাখা হয়েছে সংশ্লিষ্টরা জানান। এ বিষয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ’র (ডিটিসিএ) বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, বেসরকারি একটি কোম্পানির মাধ্যমে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। জনবল কম থাকায় সব বাস স্টপেজ চালু করা যায় নি। লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। দুই-এক মাসের মধ্যে অন্যান্য বাস স্টপেজ চালু করা হবে বলে জানান তিনি।