বিদ্রোহী কবিতার মাধ্যমে নজরুল নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন: অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস
প্রকাশ: রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:০৪ পিএম

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি বাক বধল আছে। একটি হচ্ছে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৯৬১ সালে মেঘনাদবধ কাব্য গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। মূলত এই দিয়ে আধুনিক কাব্যগ্রন্থের শুরু। তারপর ১৮৮৩ সালের দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ কবিতাটি লিখেছিলেন। এরপর সর্বশেষ বাক হচ্ছে ১৯২১ সালের নজরুলের এই বিদ্রোহী কবিতা। ২১ বছরের একজন যুবক কিভাবে এতো সুন্দর করে এই কবিতাটি লিখেছিলেন সেটা আজও আমাদের তাড়না দেয়। গ্রীক পুরান, কোরআন এবং হিন্দু পুরানের উপমা, রূপকল্পকে তিনি সংযুক্ত করে কিভাবে এই কবিতাটি সৃষ্টি করেছেন তা আসলেই আশ্চর্যপূর্ণ। এইটুকু বয়সে তিন এইগুলোকে কিভাবে সংযুক্ত করে এই অনবদ্য সৃষ্টি করেছেন তা আমাদের ভাবিয়ে তুলে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৬৫তম পর্বে রোববার (২৬ ডিসেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও নজরুল গবেষক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, সংগীত শিল্পী, নজরুল গবেষক, নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুজিত মোস্তফা, সেক্টর কমান্ডরস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ একাত্তরে কেন্দ্রীয় নারী কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সংগীত শিল্পী, অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, ধন্যবাদ ভোরের পাতাকে আজ আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার যে শতবর্ষ উপলক্ষে আজকের এই সংলাপটি সাজানো হয়েছে। প্রথমেই আমি আমার কবির প্রতি গভির শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে আবেদন জানাচ্ছি পরপারে যেন তাকে আল্লাহ জান্নাত দান করুক। কবি নজরুল ইসলাম আমাদের জন্য যা কিছু রেখে গিয়েছেন তা যদি আমরা অনুসরণ করি অর্থাৎ বিদ্রোহী কবিতার মাধ্যমে তিনি নিজের যে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন যে, একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ হিসেবে সেখানে আমি বলবো যে তার সব কবিতা গানে কিন্তু তিনি এই অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেছেন। কুসংস্কার, বৈষম্য অর্থাৎ অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক বৈষম্যের বিষয়গুলোও কিন্তু এই কবিতার মধ্যে এসেছে। কবি তার সাড়া জীবনে যে কয়টা বছর সুস্থ স্বাভাবিক ও প্রাণময় ছিলেন সেসময় তিনি যা কিছু রচনা করেছেন তার মধ্যে যদি তিনি কিছুই রচনা না করতেন শুধু এই বিদ্রোহী কবিতাটি রচনা করতেন তাহলেও আমি বলবো যে তিনি নোবেল বিজয়ী হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের দুঃখ এটাই যে আমরা তাকে সে পর্যন্ত রাখতে পারেনি। কিন্তু তারপরেও আমি বলবো বিদ্রোহী কবিতা এমন একটি কবিতা যা মানুষের রক্তের মধ্যে মানুষের মনের মধ্যে যে একটা স্প্রিট ও একজন মানুষের মধ্যে যে আমিত্ব আছে সেটা জাগ্রত করে এই বিদ্রোহী কবিতার দ্বারা। উনি কিভাবে এই সমাজটাকে বদলে দিতে চেয়েছিলেন, এই সমাজের প্রত্যেকটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে চেয়েছিলেন। সবার মধ্যে তিনি একটি বন্ধন এনে দিতে চেয়েছিলেন, একটি সম্প্রীতি এনে দিতে চেয়েছিলেন, সেটাই মূলত তিনি তার কবিতায় সমসময় ব্যাপ্ত করেছেন।