শনিবার ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
নজরুলের অলৌকিক সৃষ্টি বিদ্রোহী কবিতা
#প্রেমের ব্যাঘাত থেকেই বিদ্রোহী কবিতার সৃষ্টি: এ এফ এম হায়াতুল্লাহ। #নজরুলের অনুপম নিদর্শন বিদ্রোহী কবিতা: সুজিত মোস্তফা। #বিদ্রোহী কবিতার মাধ্যমে নজরুল নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন: অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস।
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:০৫ পিএম আপডেট: ২৬.১২.২০২১ ১১:১০ PM

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি বাক বধল আছে। একটি হচ্ছে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৯৬১ সালে মেঘনাদবধ কাব্য গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। মূলত এই দিয়ে আধুনিক কাব্যগ্রন্থের শুরু। তারপর ১৮৮৩ সালের দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ কবিতাটি লিখেছিলেন। এরপর সর্বশেষ বাক হচ্ছে ১৯২১ সালের নজরুলের এই বিদ্রোহী কবিতা। ২১ বছরের একজন যুবক কিভাবে এতো সুন্দর করে এই কবিতাটি লিখেছিলেন সেটা আজও আমাদের তাড়না দেয়। গ্রীক পুরান, কোরআন এবং হিন্দু পুরানের উপমা, রূপকল্পকে তিনি সংযুক্ত করে কিভাবে এই কবিতাটি সৃষ্টি করেছেন তা আসলেই আশ্চর্যপূর্ণ। এইটুকু বয়সে তিন এইগুলোকে কিভাবে সংযুক্ত করে এই অনবদ্য সৃষ্টি করেছেন তা আমাদের ভাবিয়ে তুলে।

দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৬৫তম পর্বে রোববার (২৬ ডিসেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও নজরুল গবেষক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, সংগীত শিল্পী, নজরুল গবেষক, নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুজিত মোস্তফা, সেক্টর কমান্ডরস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ একাত্তরে কেন্দ্রীয় নারী কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সংগীত শিল্পী, অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।

এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বলেন, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি বাক বধল আছে। একটি হচ্ছে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৯৬১ সালে মেঘনাদবধ কাব্য গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। মূলত এই দিয়ে আধুনিক কাব্যগ্রন্থের শুরু। তারপর ১৮৮৩ সালের দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ কবিতাটি লিখেছিলেন। এরপর সর্বশেষ বাক হচ্ছে ১৯২১ সালের নজরুলের এই বিদ্রোহী কবিতা। এই কবিতার ১৪১ চরণ আছে যা একটি মানুষের ১৪১টি সত্তা। এই সত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই কবিতার মাধ্যমে। নজরুলের এই কবিতায় ১৪১টি চরণে যে ১৪১ বার আমি শব্দটির মাধ্যমে তার বিদ্রোহ ও তার প্রেম; এই দুইটি প্রধান ভাব তুলে ধরেছেন। মানব জীবনে প্রেম হচ্ছে সকল সৃষ্টির মূল আর বিদ্রোহটাকে আমরা এভাবে বলতে পারি তিনি তার জীবনের শেষ অভিভাষণে এইরকম কথাটি লিখেছেন যে, আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম- ‘সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।’ এই যে প্রেমের আকাক্সক্ষা, মানুষের মধ্যে মানুষের যে সম্প্রীতি এই আকাক্সক্ষা পূর্ণ হয়নি বলেই তিনি আসলে বিদ্রোহ করেছেন। তিনি সমসাময়িক সমাজ থেকে অনেক ধরনের অন্যায়, বৈষম্যের পার্থক্য দেখেছেন, অনেক ধরনের ধর্মীয় পার্থক্য দেখেছেন, সামাজিক পার্থক্য দেখেতে দেখতে তিনি মনে করেছেন আসলে মানব সমাজে সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হচ্ছে প্রেম। তো এই প্রেম যেহেতু পৃথিবীতে এতো অপ্রাপ্য হয়ে গিয়েছে তখন তিনি মূলত বিদ্রোহ শুরু করেছেন। এই যে নজরুলের জীবনের শ্রেষ্ঠ রচনা বিদ্রোহী কবিতা সেটা আসলে কেন? এই যে বিদ্রোহী কবিতার মাধ্যমে তিনি এই নিঃস্ব মানব চূড়ান্ত ইস্তেহার ঘোষণা করেছেন। 

সুজিত মোস্তফা বলেন, নজরুল যখন প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ থেকে ফিরে কমরেড মোজাফফরের সাথে থাকা শুরু করলেন এবং ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে একরাতে তিনি পেন্সিল দিয়ে এই বিদ্রোহী কবিতাটি লিখেছিলেন। ২১ বছরের একজন যুবক কিভাবে এতো সুন্দর করে এই কবিতাটি লিখেছিলেন সেটা আজও আমাদের তাড়না দেয়। গ্রীক পুরান, কোরআন এবং হিন্দু পুরানের উপমা, রূপকল্পকে তিনি সংযুক্ত করে কিভাবে এই কবিতাটি সৃষ্টি করেছেন তা আসলেই আশ্চর্যপূর্ণ। এইটুকু বয়সে তিন এইগুলোকে কিভাবে সংযুক্ত করে এই অনবদ্য সৃষ্টি করেছেন তা আমাদের ভাবিয়ে তুঁলে। এইরকম ভাবধারণা থেকে তিনি এই রকম অসাধারণ কবিতা কিভাবে লিখেছেন সেটা আমার কাছে বোধগম্য নয়। এক অলৌকিক সৃষ্টি মনে হয় আমার কাছে। তিনি ছোট বেলা থেকে সংগ্রাম করেছেন, যুদ্ধ করেছেন প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে। কিন্তু তাকে সব থেকে পিরীত করেছিল সেটা হচ্ছে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির অভাব, ধনি-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য ও আরেকটি হচ্ছে পরাধীনতা; আমার কাছে এই তিনটি বিষয় প্রধান মনে হয়েছে। বিদ্রোহী কবিতাকে আমার কাছে মনে হয়েছে একটি সূচনা যাতে তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন যে আমি আমার বাকী জীবন এই এই কাজগুলো করবো এবং পরবর্তীকালে তিনি তার কবিতা, গানে এই বিষয়গুলো থেকে তিনি সরে আসেননি। আমি বুদ্ধিমান মানুষ বলতে বুঝি এমন একজন মানুষকে যার মধ্যে তথ্য আছে এবং সেই তথ্যের যৌক্তিক প্রয়োগ। এবং সেটিকে তিনি খুবই ক্রিয়েটিভভাবে কবিতার ছন্দে নিয়ে এসে এই যে ২১ বছরের একজন যুবা এই ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেললেন এটা এখন পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এইরকম একটি কবিতা বোধহয় এখন পর্যন্ত লেখা হয়নি।

অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, ধন্যবাদ ভোরের পাতাকে আজ আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার যে শতবর্ষ উপলক্ষে আজকের এই সংলাপটি সাজানো হয়েছে। প্রথমেই আমি আমার কবির প্রতি গভির শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে আবেদন জানাচ্ছি পরপারে যেন তাকে আল্লাহ জান্নাত দান করুক। কবি নজরুল ইসলাম আমাদের জন্য যা কিছু রেখে গিয়েছেন তা যদি আমরা অনুসরণ করি অর্থাৎ বিদ্রোহী কবিতার মাধ্যমে তিনি নিজের যে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন যে, একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ হিসেবে সেখানে আমি বলবো যে তার সব কবিতা গানে কিন্তু তিনি এই অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেছেন। কুসংস্কার, বৈষম্য অর্থাৎ অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক বৈষম্যের বিষয়গুলোও কিন্তু এই কবিতার মধ্যে এসেছে। কবি তার সাড়া জীবনে যে কয়টা বছর সুস্থ স্বাভাবিক ও প্রাণময় ছিলেন সেসময় তিনি যা কিছু রচনা করেছেন তার মধ্যে যদি তিনি কিছুই রচনা না করতেন শুধু এই বিদ্রোহী কবিতাটি রচনা করতেন তাহলেও আমি বলবো যে তিনি নোবেল বিজয়ী হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের দুঃখ এটাই যে আমরা তাকে সে পর্যন্ত রাখতে পারেনি। কিন্তু তারপরেও আমি বলবো বিদ্রোহী কবিতা এমন একটি কবিতা যা মানুষের রক্তের মধ্যে মানুষের মনের মধ্যে যে একটা স্প্রিট ও একজন মানুষের মধ্যে যে আমিত্ব আছে সেটা জাগ্রত করে এই বিদ্রোহী কবিতার দ্বারা। উনি কিভাবে এই সমাজটাকে বদলে দিতে চেয়েছিলেন, এই সমাজের প্রত্যেকটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে চেয়েছিলেন। সবার মধ্যে তিনি একটি বন্ধন এনে দিতে চেয়েছিলেন, একটি সম্প্রীতি এনে দিতে চেয়েছিলেন, সেটাই মূলত তিনি তার কবিতায় সমসময় ব্যাপ্ত করেছেন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com