ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় এখন শকুন ও হায়েনাদের জয়জয়কার মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ‘জেনারেল লাইসেন্স’ দেওয়ার কারণে দেশজুড়ে পৈশাচিক, লোমহর্ষক ঘটনার এক ভয়াবহ দুর্দিন বিস্তার লাভ করেছে।
তিনি কক্সবাজারে গৃহবধূর ওপর নির্মম পাশবিকতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে বেড়াতে আসা গৃহবধূকে দলবেঁধে শ্লীলতাহানির ঘটনা শুধু মর্মান্তিকই নয়, দেশবাসীকে বেদনাহত ও আতঙ্কিত করে তুলেছে। এ নারকীয়তা যেন বর্তমান দুঃশাসনেরই একটি চালচিত্র। দেশবাসী যেন অন্ধকার প্রতিক্রিয়া, দাসত্ব ও মৃত্যুপুরীর আবহের মধ্যে বসবাস করছে। স্থানীয় এমপি সাইমুন সারোয়ার কমল এবং জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে ওইসব দুষ্কৃতিকারীদের ছবি পাওয়া গেছে। দুষ্কৃতিকারীদের একজনের নাম জয়, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামও স্বীকার করেছে জয় ছাত্রলীগ কর্মী। সে সংগঠনের নানা কর্মসূচিতে অংশ নেয়। সরকারি দলের এই নিকৃষ্ট নমুনা নিয়ে আর কীইবা বলা যেতে পারে। নির্যাতিত নারীর আর্তনাদ, হাহাকার ক্ষমতাসীনদের বোধোদয় ঘটাতে পারবে কি? বিরোধীদলের প্রতি পেশীশক্তি প্রদর্শন, উগ্রচণ্ড হয়ে ওঠা, মামলা-হামলা, গুপ্তহত্যার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ওপরও প্রতিনিয়ত নির্মমভাবে নির্বিচারে নেমে আসছে পাশবিকতা।
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়েছেন বহু যাত্রী। বহু লোকের প্রাণহানি হয়েছে। অগ্নিদগ্ধরা হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। মর্মান্তিক এ ঘটনা হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী। আমরা শোকের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
এ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, জাতি এ বেদনার্ত ঘটনায় বিমূঢ় ও শোকাচ্ছন্ন। চারশো যাত্রী নিয়ে যাত্রা করা লঞ্চটিতে অগ্নিকাণ্ডের সময় হাজারখানেক যাত্রী ছিল, এটি কীভাবে সম্ভব? নৌ-পরিবহনে দুর্বৃত্তদের দাপটের কারণেই নিয়ম-শৃঙ্খলার তোয়াক্কা নেই। সে কারণেই জীবনহানি হচ্ছে নিরীহ যাত্রীদের। আমরা নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
সরকারের প্রতি অভিযোগ করে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সরকার এবার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর পায়তারা করছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ১২ বছরে বিদ্যুতের দাম বর্তমান সরকার ১০ বার বাড়িয়েছে। এসময়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১১৮ ভাগ। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের এ দামবৃদ্ধির উদ্দেশ্য অশুভ। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে শিল্প, কৃষি ও সাধারণ মানুষের গৃহস্থালি কাজে। মূল্যস্ফীতির মাত্রা তীব্র রূপ নেবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ, সার ও গ্যাসের দামবৃদ্ধির উদ্দেশ্য জনগণকে নিঃশেষ করা, জনগণের টাকা হরিলুট। যা সঞ্চয় ও ভোগ কাঠামোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কদিন আগেই জ্বালালি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ক্রমাগতভাবে কমছে। এখন দেশে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে মানুষের জীবনযন্ত্রণা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। দেশের অর্থনীতিতে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব।
রিজভী বলেন, বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নামে চট্টগ্রামে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তিন বছর আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে উসকানির মিথ্যা অভিযোগে এ চার্জশিট দেয়া হয়। এটি সম্পূর্ণভাবে চক্রান্তমূলক। সরকারের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে বলেই এখন বিএনপির ওপর অত্যুগ্র মাত্রায় নিপীড়ন-নির্যাতনের খড়গ নামিয়ে আনা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে তার নামে মিথ্যা চার্জশিট দেওয়া হলো।
তিনি বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকার চারিদিক থেকে ব্যর্থ হয়ে দেশের মানুষের কাছ থেকে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন নানা চক্রান্তজাল বুনতে শুরু করেছে। বিএনপি নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা ও চার্জশিট দিয়ে নিজেদের অপকর্ম ঢাকার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় লিপ্ত সরকার।
এসময় তিনি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নামে চার্জটিট দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে চার্জশিটসহ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।