প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:৪৫ পিএম

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো লবণাক্ততা ও জলমগ্নতাসহিষ্ণু ধানের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিট (বিনা) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিজ্ঞানীরা। এর ফলে লবণাক্ততা ও জলমগ্নতাসহিষ্ণু ধান গবেষণায় নতুন দিগন্তের সূচনা হলো।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) এক অনুষ্ঠানে এই জিনোম উন্মোচন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
মন্ত্রী বলেন, দেশের ২ মিলিয়ন হেক্টর জমি লবণাক্ত। এসব জমিতে বছরে একটি ফসল হয়। খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করতে ও ভবিষ্যতে খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমরা লবণাক্ত জমি ও হাওরসহ এলাকাসহ প্রতিকূল পরিবেশে বছরে দুই-তিনটি ফসল উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। পূর্ণাঙ্গ জিনোম উন্মোচনের ফলে লবণাক্ততা ও জলমগ্নতাসহিষ্ণু জাতের ধান উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ সহজতর হবে।
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী প্রায় এক দশক ধরে কাজ করে চলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায়, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ইরি) থেকে সংগৃহিত ধানের বিভিন্ন এ্যাডভান্স লাইন থেকে নানাবিধ গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ব্রিডিং লাইন আরসি-২৫১ শনাক্ত করে।
বিনা এ ধানকে একদিকে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাসমূহের আকষ্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য জাত হিসেবে (বিনাধান-২৩) ছাড়করণের লক্ষ্যে নানামুখী গবেষণা পরিচালনা করেছে, অন্যদিকে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করে আরোপিত মিউটেশনের (Induced Mutation) মাধ্যমে এ ধানের কৌলিতাত্তিক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। এ গবেষণায় বিভিন্ন মাত্রার গামা রেডিয়েশন প্রয়োগ করে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মিউট্যান্ট সৃষ্টি করে তা থেকে নানামুখী পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে M6 জেনারেশনে ৩ টি উন্নত মিউট্যান্ট শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাপ্ত মিউট্যান্টগুলো প্যারেন্ট অপেক্ষা উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, লবণাক্ততা ও ১৫ দিন জলমগ্নতা সহিষ্ণু।
বিনা তার প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকেই আরোপিত মিউটেশনের মাধ্যমে ফসলের নানা জাত উদ্ভাবন করেছে। এসমস্ত গবেষণায় আরোপিত মিউটেশনের প্রভাবে ফসলের ফেনোটাইপের কাঙ্খিত পরিবর্তন দেখে উন্নত জাত শনাক্ত করা হতো কিন্তু জিনোমের কোথায় ডিএনএ বিন্যাসের পরিবর্তনের জন্য এমন কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হলো তার ব্যাখা প্রদান করা সম্ভব হতো না। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালে এই গবেষণায় প্যারেন্ট ও নির্বাচিত তিনটি মিউট্যান্ট ধানের জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন হয় যা বাংলাদেশে প্রথম।
ভোরের পাতা/কে