আজ সারা বিশ্বের বিস্ময়ে রূপান্তরিত হয়েছে বাংলাদেশ: মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৩৯ পিএম আপডেট: ১৮.১২.২০২১ ১১:৩২ PM

আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি এবং একই সাথে আমরা স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। সেখানে আজকে আমরা এমন একটা সময় উদযাপন করছি যেখানে আজকের ভোরের পাতা সংলাপের এমন একটি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে যেটা সত্যি সারা বিশ্বের মানুষ স্বীকার করছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিতার স্বপ্নকে হৃদয়ে লালন করে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য। গত ১২ বছরে তিনি তাঁর লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশে যে প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, উন্নয়নের এই গতি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৫৫তম পর্বে বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী, জার্মান দূতাবাসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনারারি কনস্যুলেট, ফর বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সন্তোষ কুমার দেব। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, এই বিজয়ের কথা বলতে গেলে আমার শুরুতেই যে কথাটা মনে পড়ে যে উন্নয়নের যে মহাসড়কে বাংলাদেশ উঠে গিয়েছে এবং সারা বিশ্বের যে বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা নিয়ে আর বিতর্কের কিছু নেই। এবং আগামী দিনে বাংলাদেশ যে জায়গায় পৌঁছাবে সেটাও আমরা আজ বিশ্বের অনে বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পাচ্ছি। আজ বাঙালি জাতির উৎবের দিন, আনন্দের দিন। বাঙালি জাতির হাজার বছরের বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিবস। একই সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের দিন। তাদের মাথা অবনত করার দিন। যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের দিন। আজকের দিনটি প্রতিটি বাঙালির কাছে বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। যে অস্ত্র দিয়ে বর্বর পাকবাহিনী দীর্ঘ নয় মাস ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে এক রাশ হতাশা এবং অপমানের গ্লানি মাথায় নিয়ে লড়াকু বাঙালির কাছে পরাজয় মেনে নেয় হানাদাররা। বাংলাদেশ এই বিজয় অর্জন করেছিল পৃথিবীর অনেক পরাশক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে। তো সেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানে এটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র ছিল। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সেদিন মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই মুক্তিযুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাহায্য-সহযোগিতা করে। অবশেষে বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বুকের উষ্ণ রক্তে রাঙিয়ে রাত্রীর বৃন্ত থেকে ছিনিয়ে আনে ফুটন্ত সকাল। ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আগে ছিল আরো অনেক দিনের আন্দোলন, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা। ১৯৪৮ ও '৫২ এর ভাষা আন্দোলন, '৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, '৬২ সালের ৬ দফা আন্দোলন, '৬৯-'৭০ সালে ব্যাপক রাজনৈতিক গণআন্দোলন এবং '৭১ সালের প্রথম দিনগুলোতে অভূতপূর্ব শান্তিপূর্ণ সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন-- এসবই বাঙালিকে প্রস্তুত করে তুলেছিল তাঁর মুক্তিযুদ্ধের জন্য।কিন্তু বাংলাদেশ যেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে না পারে সেজন্য স্বাধীনতাবিরোধী নরপিচাশরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিলো ২৭৮ ডলার। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মাথাপিছু আয় ২৭৮ ডলার থেকে প্রায় অর্ধেকে নেমে দাঁড়ায় ১৪১ ডলার। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)প্রবৃদ্ধি হয়েছিল স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন আমলে। ১৯৭৪ সালে দেশের মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৭ শতাংশ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তা নিচের দিকে নামতে থাকে। একই ভাবে খাদ্য জ্বালানীসহ সকল খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি তলানিতে নামে। ১৯৯৬ বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত কাজগুলো শুরু করেন।জাতির পিতার আদর্শকে সামনে রেখে আবার এদেশের জিডিপি’র উত্তরণ ঘটান। গত একযুগে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির দিক থেকে যে অকল্পনীয় সাফল্য অর্জন করেছে, তা বিশ্ববাসীর কাছেও বিস্ময়। বঙ্গবন্ধু যদি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার না হতেন, যদি আর দশটি বছরও বেঁচে থাকতেন, তাহলে এই বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর একটি হিসেবে গৌরবের আসন নিশ্চিত করতে পারত।