#শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ: নজরুল ইসলাম বাবু। #বিজয় আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়: ড. শাহিনুর রহমান। #শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সেই দ্বিতীয় বিপ্লব প্রতিষ্ঠিত হবে: ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া।

যে ভূখণ্ডের মানুষ কখনোই বাসস্থানের কথা চিন্তা করতে পারেননি, যে ভূখণ্ডের মানুষ কখনোই ভাত-কাপড়ের কথা চিন্তা করতে পারেননি, যে ভূখণ্ডের মানুষগুলোর কোন কিছুতেই যাদের কোন পরিচয় ছিলো না, সে মানুষগুলো আজ জাগ্রত হয়েছে, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আজ বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিশ্বকে জয় করেছে। একটি দারিদ্র্যপীড়িত, অনাহারেপৃষ্ঠ একটি জাতি আজ উন্নয়নের আলোকে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আজ এই জাতি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে জানান দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। শিক্ষা খাতে, স্বাস্থ্য খাতে সব জায়গায় আজ বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেকগুণ বেশি।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৫৪তম পর্বে বুধবার এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিনূর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, যে ভূখণ্ডের মানুষ কখনোই বাসস্থানের কথা চিন্তা করতে পারেননি, যে ভূখ-ের মানুষ কখনোই মোটা ভাত কাপড়ের কথা চিন্তা করতে পারেননি, যে ভূখ-ের মানুষগুলোর কোন কিছুতেই যাদের কোন পরিচয় ছিলো না, সে মানুষগুলো আজ জাগ্রত হয়েছে, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আজ বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিশ্বকে জয় করেছে। এদেশে শিক্ষার অভাব ছিল, আজ এদেশের ছেলে-মেয়েরা বিদেশে লেখাপড়া করছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে জিয়া-মোশতাকের নীল নকশায় আমরা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হারালাম, তবে বেলজিয়াম থাকার সুবাদে অলৌকিকভাবে ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর এদেশের মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার সকল উদ্যম রহিত হয়, মানসিকভাবে হতোদ্যম এদেশবাসী ২১ বছর সামরিক শাসকদের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হতে থাকে। এরপর ১৯৯৬ সাল; প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা যখন বাঙালির অহংকার হয়ে উঠলেন, তখন থেকেই তিনি জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি নিয়ে মানুষের সামনে দাঁড়ালেন। দেশের রাজনীতিতে সমাজ সংস্কার আর অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়ে উঠল মূলমন্ত্র; বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মঙ্গল চিন্তায় ব্যাপিত হলেন। এরপর থেকে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগুতে শুরু করলো। ১৯৮১ সাল থেকে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিকভাবে চারদশক দলীয় সভাপতি, টানা তৃতীয় মেয়াদসহ প্রায় ১৮ বছর সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। শুধু বাংলাদেশ নয় বর্তমান বিশ্বের আর কোন রাজনৈতিক নেতার এমন ইতিহাস নেই। দেশরতœ শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন অগ্রগতির সব সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেল। অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রের বেশির ভাগ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করছে। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বে অনুকরণীয় রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। তারই দক্ষ নেতৃত্বে এ বছর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠার মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও টেকসই ব-দ্বীপে রূপান্তর করার লক্ষ্য রয়েছে।
ড. শাহিনুর রহমান বলেন, বিজয় দিবসের প্রাক্কালে আমরা আমাদের বিজয়ের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে অর্জনগুলো আমাদের হয়েছে সেগুলো নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা যায়। বিশেষ করে গত ১২ বছরে এতো অল্প সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা যতগুলো উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন সেই জায়গাটার মধ্যদিয়ে আজকে বাংলাদেশ যে অবস্থানে দাঁড়িয়েছে, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা আজ গর্ব করি এর জন্য। ৭৫’র পরবর্তী পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘ ৬ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে হাল ধরেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির। বিপন্ন সেই সময়ে দলীয় সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে দেশে ফিরেন ৮১ সালে। পিতার ঐশ্বর্যময় রাজনীতির সিঁড়িতে পা রেখে শুরু নতুন অধ্যায়ের। সীমাহীন অনিশ্চয়তা আর প্রতিকূলতার মধ্যে বাঙালির ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে লড়াই করেন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে। ১৯৯৬ সালে দলকে আনেন ক্ষমতায় দীর্ঘ ২১ বছর পর। আর ২০০৮ সালে বিজয়ের পর থেকে এখনো অধিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকায় নারী রাজনীতিকের পালকও এখন তার মুকুটে। জিডিপির ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধিসহ সবখাতে অভূতপূর্ব সাফল্য, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দমন, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক কড়া বার্তা তুলে ধরে তাঁর দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব। নানা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি মিলছে আন্তর্জাতিক পরিসরেও। এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ছিলেন গৃহবন্দি। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাকে কারানির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বার বার তাঁর জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২১ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ’৭৫ পরবর্তী বাঙালি জাতির যা কিছু মহৎ অর্জন, তা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই অর্জিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সুযোগ্য ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছেন। বাঙালি জাতি তাঁর নেতৃত্বে সমৃদ্ধশালী উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। শেখ হাসিনা মানেই উন্নয়ন, শেখ হাসিনা মানেই বাংলার আধুনিক রূপ।
ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, আসলে কি বিস্ময়কর ভাবে বাংলাদেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। একটি দারিদ্র্যপীড়িত, অনাহারেপৃষ্ঠ একটি জাতি আজ উন্নয়নের আলোকে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আজ এই জাতি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে জানান দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। শিক্ষা খাতে বলুন, স্বাস্থ্য খাতে বলুন সব জায়গায় আজ বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেকগুণ বেশি। এই পঞ্চাশ বছরে আমাদের প্রাপ্তি অনেক। কিন্তু আমরা কি এটা চিন্তা করি যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যদি নির্মমভাবে হত্যা না করা হতো তাহলে আমাদের অর্জন আজকে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা পেয়েছি স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত। ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের অসামান্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। আজ তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এখন, অপুষ্টির অভিশাপ দূর হতে যাচ্ছে; দারিদ্র্যের লজ্জা ঘুচেছে, নিরক্ষরতা দূর হচ্ছে, শিক্ষিত দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠছে, শিল্প-সভ্যতার ভিত্তি রচিত হয়েছে; প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বেকারত্বের অবসান ও কোটি কোটি যুব সমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে; যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হচ্ছে, পরিকল্পিত নগর-জনপদ গড়ে উঠছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ সমৃদ্ধির সোপানে পা রাখছে। রাজনীতি থেকে হিংসা, হানাহানি, সংঘাতের অবসান হচ্ছে, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের ধারা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে এসেছে; গড়ে উঠেছে একটি সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নমূলক অনেক কাজ ত্বরান্বিত হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে জাতিকে উপহার দেওয়া হবে নতুন ভিশন- নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা রূপকল্প-২১০০। আর ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের পর্যায় পেরিয়ে এক শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদ। সুশাসন, জনগণের সক্ষমতা ও ক্ষমতায়ন হবে এই অগ্রযাত্রার মূলমন্ত্র। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি জীবিত থাকেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকেন তাহলে আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।