বাংলাদেশকে মেধাগতভাবে বিকলাঙ্গ করার নীল নকশা ছিল ১৪ ডিসেম্বর: ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১০:৫৭ পিএম

পরাজিত শক্তিরা শেষ মরণ কামড় দিয়েছিল এই ১৪ ডিসেম্বরে। আমাদেরকে মেধাশূন্য করবার স্থায়ী পরিকল্পনা থেকে এই শেষ আঘাতটি তারা করেছিল। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে পরিকল্পনা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বাংলাদেশকে মেধাগতভাবে বিকলাঙ্গ করার নীল নকশা ছিল ১৪ ডিসেম্বর। শিশু যেন জন্মগতভাবেই মনস্তাত্ত্বিক ত্রুটি নিয়ে বড় হয় এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। সে সময়ে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে যে নতুন দেশটি সংযুক্ত হবে তখন যাতে মেধাগত দিক থেকে এই দেশটি কখনো মেরুদণ্ড সোজা করে না দাঁড়াতে পারে সেটাই ছিল আসলে তাদের লক্ষ্য।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৫৩তম পর্বে মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ) এর চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, এই ভূখণ্ডের বাঙালিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ২৩ বছর আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ও ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের নেতৃত্বদানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেছিলেন এবং এই ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লখি মানুষ শহীদ হয়েছিলেন এবং ২ লাখ মা-বোনদের ইজ্জত হারাতে হয়েছিল। আজকে এই ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিল তারপরেও আমরা প্রতি বছর আজকের দিনটাকে আলাদা করে পালন করি। কারণ আজকের দিনটার আলাদা একটা প্রেক্ষাপট আছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষদিকে দেশের শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও নানা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পেশাজীবীদের টার্গেট করে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা। যদিও মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা জুড়েই তারা সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বুদ্ধিজীবীদেরও হত্যা করেছে। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে তারা আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তালিকা করে নির্মূল করার ঘৃণ্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং সে অনুযায়ী আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়। নিশ্চিত পরাজয়ের আগমুহূর্তে চূড়ান্ত আঘাত হানে অদূর ভবিষ্যতের স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার অভিপ্রায়ে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিস্ব করার উদ্দেশ্য থেকে। তারা চেয়েছিল, স্বাধীনতা পেলেও এ জাতি যেন কোনোভাবেই মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, লেখক, বুদ্ধিজীবীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- ইত্তেফাকের সিরাজউদ্দিন হোসেন, দৈনিক পূর্বদেশের গোলাম মোস্তফা, সাপ্তাহিক শিলালিপির সম্পাদক সেলিনা পারভীন, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী , ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আ ফ ম আলিম চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার প্রমুখ। এদের সবাইকে বিভিন্ন ক্যাম্পে ধরে নিয়ে অত্যাচার করার পর রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমিতে মৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। ঢাকার বাইরেও অসংখ্য নামিদামি বুদ্ধিজীবী ও সমাজসেবককে আগেই হত্যা করা হয়। বাংলাদেশকে মেধাগতভাবে বিকলাঙ্গ করার নীল নকশা ছিল ১৪ ডিসেম্বর। শিশু যেন জন্মগতভাবেই মনস্তাত্ত্বিক ত্রুটি নিয়ে বড় হয় এটাই ছিল তাদের লক্ষ্য। সে সময়ে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে যে নতুন দেশটি সংযুক্ত হবে তখন যাতে মেধাগত দিক থেকে এই দেশটি কখনো মেরুদণ্ড সোজা করে না দাঁড়াতে পারে সেটাই ছিল আসলে তাদের লক্ষ্য।