বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ঘটনা একাত্তরের বিজয়গাঁথা: মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল
প্রকাশ: শনিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২১, ১০:৩৪ পিএম

যে কোন স্বাধীন রাষ্ট্রে জন্ম নেওয়াই একটি বড় ঘটনা। কিন্তু বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করাটা একটু বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমার কাছে মনে হয়। এক নাম্বার কারণ হচ্ছে ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সামরিক কমান্ডের কাছে ৯০ হাজারের বেশি পাকিস্তানি সেনার আত্মসমর্পণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে বৃহত্তম আত্মসমর্পণ। একই সাথে এটি পৃথিবীর ইতিহাসেও অন্যতম বৃহৎ আত্মসমর্পণ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলার পথে দিনকে দিন এগিয়ে যাচ্ছে। বিজয়ের মাস এলে সেই স্বপ্ন আরো বেশি করে তাড়না সৃষ্টি করে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৪৩তম পর্বে শনিবার (৪ ডিসেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, জার্মান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল, জার্মান-বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি খান লিটন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল বলেন, বাংলাদেশের বুকে স্বাধীনতার রক্তলাল সূর্যোদয়ের ভিত্তি সূচিত হয়েছিল বেশ আগেই। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুুর ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্দীপ্ত বাঙালি জাতি দৃঢ় শপথ নিয়েছিল স্বাধীনতা অর্জনের। ২৫ মার্চের নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তারা রুখে দাঁড়িয়েছিল শোষণের বিরুদ্ধে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বীর বাঙালি বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে। একাত্তরের এই মাসেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিলো। বাঙলার ঘরে ঘরে স্বাধীন স্বমহিমায় উড়তে শুরু করছিল লাল-সবুজ পাতাকা। বাঙালি রচনা করেছিলো নতুন এক ইতিহাস। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছিল নতুন দেশ বাংলাদেশ। একাত্তরের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে’ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি জাতি। দীর্ঘ নয়মাস ব্যাপী ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে পেয়েছিলাম স্বাধীন দেশ। অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে কিনেছিলাম স্বাধীন মানচিত্র। এই ডিসেম্বর মাসেই বাঙালিরা হাজার বছর ধরে লালন করা স্বাধীনতার স্বপ্ন ছুঁয়ে দিয়েছিল। তবে এই ডিসেম্বর মাসেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর আল শামসদের সহযোগিতায় জাতির মেধা, শ্রেষ্ঠ সন্তান-বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংসযজ্ঞে মেতে ওঠেছিল। সমগ্র জাতিকে মেধাহীন করে দেওয়ার এমন ভয়াবহ হতাযজ্ঞ বিশ্ব ইতিহাসে আরো কোনো নজির নেই। এমনকি স্বাধীনতা অর্জনের পরেও সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি থেমে থাকেনি। পঁচাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর জেলখানায় হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। এভাবেই দফায় দফায় বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা হয়েছে। তবে স্বাধীনতাবিরোধীদের কোনো ষড়যন্ত্রই পুরোপুরি সফল হয়নি। মুক্তিকামী বাঙালিরা সব সময়ই সামনে এগিয়েছে। সব ষড়যন্ত্রকে রুখে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলার পথে দিনকে দিন এগিয়ে যাচ্ছে। বিজয়ের মাস এলে সেই স্বপ্ন আরো বেশি করে তাড়না সৃষ্টি করে।