অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগের শত্রু হচ্ছে সাম্প্রদায়িক পক্ষের লোকেরা: ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া
প্রকাশ: শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২১, ১১:০৭ পিএম

বাংলাদেশ নামে রাষ্ট্র সৃষ্টি করার মূল উদ্দেশ্য ছিল যে ধর্ম যার যার বাংলাদেশ সবার। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের সংগ্রাম, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আর সেই যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে। এই সংগ্রাম ও স্বাধীনতার যুদ্ধের পেছনে অনেক কারণ ও ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু আমরা যদি একেবারেই মূল প্রেক্ষাপটে যাই, সেটা হচ্ছে আজকে আপনারা এই সংলাপের যে বিষয় নির্ধারণ করেছেন সেটা। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। মূলত পরিকল্পিতভাবে যারা আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করছে তারা দেশ, জাতি ও সকল ধর্মের শত্রু। সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই শত্রুদের মোকাবেলা করতে হবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫০১তম পর্বে শনিবার (২৩ অক্টোবর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পিএসসি, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, গবেষক ও লেখক মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, কবি ও শিক্ষক আয়শা জাহান নূপুর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি আসলে দুইভাগে বিভক্ত। একটা হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগ আরেকটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক আওয়ামী বিরোধী শক্তি। আওয়ামী বিরোধী শক্তিতে কিছু সাম্প্রদায়িক থাকলেও তারা কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সাম্প্রদায়িক শক্তির সমর্থন পায়। কারণ একটাই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রধান শত্রু হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগ। কিন্তু আমি একেবারেই বলব না যে আওয়ামী লীগে কিছু সাম্প্রদায়িক আবর্জনা রয়েছে সেটা স্বাভাবিক কারণ যেখানে পুরো সমাজটা সাম্প্রদায়িকতায় জর্জরিত সেখানে আওয়ামী লীগে কিছু সাম্প্রদায়িকতা থাকতেই পারে। কিন্তু এর সূত্রটা কোথায় আসলে। বাংলাদেশে যখন স্বাধীন হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে তখন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে কিন্তু ১৯৭৫ সালের সেই কাল রাত্রিতে বাংলাদেশকে চুরমার করে দিয়ে বাংলাদেশের পিছনে যে শত্রুরা রয়েছিল তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীরা সেই পাকিস্তানিরা বলেন, স্বৈরাচারীরা বলেন তারা কিন্তু এই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টা বাদ দিয়ে আমাদেরকে সেই পাকিস্তানি ভাবধারায় নিয়ে গেল। দীর্ঘ ২৮ বছর পর আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসলো তারা আবার চেষ্টা করলো বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য। আমি বলব না যে পুরোপুরি তারা সফল হয়েছে কিন্তু যে করুন অবস্থা ছিল তখন সেখান থেকে তুলে আনার চেষ্টা হচ্ছে কিন্তু সেটা এখনো সম্ভব হয়ে উঠেনি। কুমিল্লার পূজামণ্ডপে যে ব্যক্তি কোরআন শরিফ রাখে, তাকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মাধ্যমে মন্দিরে কোরআন শরিফ রাখার যে গল্পটি প্রচারিত হয়- সেটি এবং এর পরবর্তী ঘটনাগুলো নিয়ে মোটামুটি সব পক্ষই এ উপসংহারে পৌঁছেছে যে, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সুকৌশলে কাজটি ঘটানো হয়। পূজা ছিল উপলক্ষ মাত্র। মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া একটি দেশে- যে দেশটিকে এর স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক ও সব মানুষের দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন, সেখানে এমন ঘটনা শুধু দুঃখজনকই নয়, দেশের মূল চেতনা আর নীতিরও পরিপন্থি। তবে একটু দেরিতে হলেও সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার চেষ্টা করছেন এই দেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার একটি প্রতিচ্ছবি হবে কিন্তু গুটি কয়েক মানুষ এই ভাবধারাকে নষ্ট করতে চাচ্ছে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেরকে মোকাবেলা করতে পারি তাহলে অচিরেই প্রধানমন্ত্রীর সেই চেষ্টার সফলতা আমরা ভোগ করতে পারবো।