#বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্ম যার যার দেশ সবার: মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার। #যারা আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করছে তারা দেশ ও সকল ধর্মের শত্রু: ড. মো. আফজাল হোসেন। #অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগের শত্রু হচ্ছে সাম্প্রদায়িক পক্ষের লোকেরা: ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। #পরিবার থেকেই মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে: আয়শা জাহান নূপুর।

বাংলাদেশ নামে রাষ্ট্র সৃষ্টি করার মূল উদ্দেশ্য ছিল যে ধর্ম যার যার বাংলাদেশ সবার। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের সংগ্রাম, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আর সেই যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে। এই সংগ্রাম ও স্বাধীনতার যুদ্ধের পেছনে অনেক কারণ ও ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু আমরা যদি একেবারেই মূল প্রেক্ষাপটে যাই, সেটা হচ্ছে আজকে আপনারা এই সংলাপের যে বিষয় নির্ধারণ করেছেন সেটা। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। মূলত পরিকল্পিতভাবে যারা আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করছে তারা দেশ, জাতি ও সকল ধর্মের শত্রু। সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই শত্রুদের মোকাবেলা করতে হবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫০১তম পর্বে শনিবার (২৩ অক্টোবর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পিএসসি, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, গবেষক ও লেখক মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, কবি ও শিক্ষক আয়শা জাহান নূপুর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, আজকের যে বিষয়বস্তু আপনারা নির্ধারণ করেছেন সেটা কিন্তু এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রটার সৃষ্টি করবার মূল উদ্দেশ্য ছিল এটি যে ধর্ম যার যার বাংলাদেশ সবার। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের সংগ্রাম, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আর সেই যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে। এই সংগ্রাম ও স্বাধীনতার যুদ্ধের পেছনে অনেক কারণ ও ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু আমরা যদি একেবারেই মূল প্রেক্ষাপটে যায় সেটা হচ্ছে আজকে আপনারা এই সংলাপের যে বিষয় নির্ধারণ করেছেন সেটা। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। ১৯৭২ সালের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধান প্রণয়ন কিমিটি করলেন তখন সেই কমিটির উদ্দেশ্যে তিনি একটা বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি একটি কথা স্পষ্ট বলেছিলেন যে বাংলাদেশে যদি অসাম্প্রদায়িক দর্শন প্রতিষ্ঠিত না হয় এবং অসাম্প্রদায়িক দর্শন যদি বাংলাদেশে না থাকে তাহলে স্বাধীনতা রক্ষা করা যাবে না। এই কথাটি কিন্তু আমরা ১৯৭৫ সালের পর হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি যে কতো বড় সত্য কথা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন। আজকে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাটি ঘটেছে এবং পরে সারা দেশে সেটা ছড়িয়ে পড়েছে সেটার বৃত্তান্ত আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি। আমরা সবাই সেটা কম বেশি জানি। আমি আমার জায়গা থেকে সেই ঘটনার একটা সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ দিচ্ছি যে এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা মোটেও অচিহ্নিত শত্রু বা পক্ষ নয়। তারা সবাই চিহ্নিত শক্তি অপক্ষ। আমরা সবাই তাদেরকে চিনি কারণ পূর্বেও তারা একই ঘটনা ঘটিয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে তারা সেই ঘটনার ফের পুনরাবৃত্তি করেছে। এখানে কিন্তু ব্যক্তি বা পক্ষ সেটা কিন্তু মূল বিষয় নয় মূল বিষয়টি হচ্ছে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এই ঘটনার বারংবার ঘটানো হচ্ছে। আমরা সবাই কিন্তু একটি কথাই বার বার আলোচনা করছি যে কে বা কারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে কিন্তু আমরা ঐদিকটা নিয়ে আলোচনা করছি না যে কেন এই ঘটনা ঘটছে। এর মূল কারণ কি। আমাদের আসলে সেটাই আগে খুঁজে বের করতে হবে তাহলেই আমরা এই সমস্যার সঠিক সমাধান বের করতে পারবো।
ড. মো. আফজাল হোসেন বলেন, আমি মূলত মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার সাহবের কথার সূত্র ধরেই কিছু বলতে চাই যে, ১৯৭২ সালের সংবিধানে বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট করে চারটি মূল স্তম্ভের বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ। একটি সংবিধানে হাজার রকমের নীতিমালা থাকতে পারে কিন্তু বঙ্গবন্ধু আসলে এই চারটি মূল নীতির উপরে ১৯৭২ সালের সংবিধান তৈরি করেছিলেন। এবার দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বীভৎস সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস আমরা দেখেছি। এ ধারা চলতে পারে না। কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের হৃদয়ে আঘাত করেছে। তারা দায়ীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু বিক্ষোভ করা আর মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এক নয়। যারা হামলা করেছে তারা কিছুতেই ধর্মপ্রাণ মুসলমান হতে পারে না। ইসলাম কিছুতেই মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট সমর্থন করে না। এটা ভয়ংকর শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং কঠোর শাস্তির মতো পাপ। একজন ভালো মুসলমান কিছুতেই ভিন্নধর্মের নিরপরাধ মানুষের ওপর আঘাত করবে না। একজনের অপরাধে আরেকজনকে শাস্তি দেবে না। কুমিল্লার ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তির শাস্তি আমরা সবাই চাই। কিন্তু কুমিল্লার ঘটনায় পীরগঞ্জে আগুন, নোয়াখালীতে লুটপাট হবে কেন? উগ্রবাদীরা যে ধর্মেরই হোক, তাদের মাঝে মিল অনেক। শেখ হাসিনা সরকারের সম্প্রীতি রক্ষার শত চেষ্টা এবং সম্প্রীতি বাংলাদেশের একাধিক ইতিবাচক কর্ম তৎপরতা সত্ত্বেও এদেশে ধর্ম নিয়ে এখনো খেলা চলছে। মনে রাখতে হবে এই খেলা ২০১৬ সালে কেবল নয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও চলেছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন যদি আমাদের লক্ষ্য হয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিকাশ যদি আমাদের আকাক্সক্ষা হয়, তা হলে সাম্প্রদায়িকতাকে আমাদের দূরে সরিয়ে রেখে এগোতে হবে। মূলত পরিকল্পিতভাবে যারা আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করছে তারা দেশ, জাতি ও সকল ধর্মের শত্রু। সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই শত্রুদের মোকাবিলা করতে হবে।
ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি আসলে দুইভাগে বিভক্ত। একটা হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগ আরেকটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক আওয়ামী বিরোধী শক্তি। আওয়ামী বিরোধী শক্তিতে কিছু সাম্প্রদায়িক থাকলেও তারা কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সাম্প্রদায়িক শক্তির সমর্থন পায়। কারণ একটাই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রধান শত্রু হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগ। কিন্তু আমি একেবারেই বলব না যে আওয়ামী লীগে কিছু সাম্প্রদায়িক আবর্জনা রয়েছে সেটা স্বাভাবিক কারণ যেখানে পুরো সমাজটা সাম্প্রদায়িকতায় জর্জরিত সেখানে আওয়ামী লীগে কিছু সাম্প্রদায়িকতা থাকতেই পারে। কিন্তু এর সূত্রটা কোথায় আসলে। বাংলাদেশে যখন স্বাধীন হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে তখন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে কিন্তু ১৯৭৫ সালের সেই কাল রাত্রিতে বাংলাদেশকে চুরমার করে দিয়ে বাংলাদেশের পিছনে যে শত্রুরা রয়েছিল তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীরা সেই পাকিস্তানিরা বলেন, স্বৈরাচারীরা বলেন তারা কিন্তু এই সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টা বাদ দিয়ে আমাদেরকে সেই পাকিস্তানি ভাবধারায় নিয়ে গেল। দীর্ঘ ২৮ বছর পর আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসলো তারা আবার চেষ্টা করলো বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য। আমি বলব না যে পুরোপুরি তারা সফল হয়েছে কিন্তু যে করুন অবস্থা ছিল তখন সেখান থেকে তুলে আনার চেষ্টা হচ্ছে কিন্তু সেটা এখনো সম্ভব হয়ে উঠেনি। কুমিল্লার পূজামণ্ডপে যে ব্যক্তি কোরআন শরিফ রাখে, তাকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মাধ্যমে মন্দিরে কোরআন শরিফ রাখার যে গল্পটি প্রচারিত হয়- সেটি এবং এর পরবর্তী ঘটনাগুলো নিয়ে মোটামুটি সব পক্ষই এ উপসংহারে পৌঁছেছে যে, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সুকৌশলে কাজটি ঘটানো হয়। পূজা ছিল উপলক্ষ মাত্র। মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া একটি দেশে- যে দেশটিকে এর স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক ও সব মানুষের দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন, সেখানে এমন ঘটনা শুধু দুঃখজনকই নয়, দেশের মূল চেতনা আর নীতিরও পরিপন্থি। তবে একটু দেরিতে হলেও সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার চেষ্টা করছেন এই দেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার একটি প্রতিচ্ছবি হবে কিন্তু গুটি কয়েক মানুষ এই ভাবধারাকে নষ্ট করতে চাচ্ছে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেরকে মোকাবেলা করতে পারি তাহলে অচিরেই প্রধানমন্ত্রীর সেই চেষ্টার সফলতা আমরা ভোগ করতে পারবো।
আয়শা জাহান নূপুর বলেন, আমি শুরু করবো একটু ভিন্নআঙ্গিকে। আসলে আজকে সংলাপের যে বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে যে ধর্ম যার যার বাংলাদেশ সবার। কিন্তু আমি বলবো ধর্ম যার যার বাংলাদেশ কারোই নয়। আমি আসলে কেন এই কথাটি বললাম সেটার ব্যাখ্যাও দিচ্ছি। আমরা যারা বাংলাদেশের মুসলিম আছি তারা কিন্তু ঈদটা পালন করি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে সৌদি আরবের চাঁদ দেখাকে কেন্দ্র করে। আবার আমরা যারা বাংলাদেশের হিন্দু রয়েছি তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন পালন করছি ভারতের দিনপঞ্জিকার তারিখ অনুসারে। তাহলে আমি কি আসলেই বাংলাদেসী? যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে স্বাধীন দেশটি পেয়েছিলাম সেখানে কিন্তু ধর্ম মূল বিষয় হয়ে দারায়নি। তাহলে তো আমরা পাকিস্তানি থাকতে পাড়তাম। আমি কেন বাংলাদেশ চেয়েছি? এই বাংলাদেশ যারা চেয়েছে তারাও আছে যারা চায়নি তারাও আছে। যারা চায়নি তারা বিভিন্নভাবে মাথা উঁচু করে তাদের অপশক্তিকে জানান দিচ্ছে। আসলে আমরা যারা রয়েছি তারা সবাই কথা বলে একটা চেতনা জাগ্রত করতে পারবো কিন্তু এদেশে এখনো কিছুতেই ধর্মীয় সহিংসতা বন্ধ করা যাবে না। কেন বন্ধ করা যাবেনা সেটাও আমি বলছি। এই দেশের মধ্যে দেশ প্রেম বাদ দিয়ে ধর্ম প্রেম ঢুঁকে গিয়েছে। ধর্ম হচ্ছে প্রত্যেকটা মানুষের স্পরশকাতর বিষয়। প্রত্যেক ধর্মেই কিন্তু এই বিষয়টা বিস্তরভাবে উল্লেখ করা আছে। কিন্তু আমরা ধর্ম মানি না বলেই অধর্মের কাজ করি। সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে সেটার শুধু আমরা সাম্প্রতিক আঘাতটায় দেখছি কিন্তু এর পিছনে আরও অনেক বড় আঘাত বয়ে বেড়াচ্ছি আমরা। কুমিল্লার ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য কুচক্রী মহল এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। হিন্দু-মুসলিম উৎসবের ঐতিহ্য বাঙালি সমাজ ব্যবস্থার গৌরব। ঐতিহ্যবাহী এই সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টার প্রবণতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যিনি বা যারা এই কাজটি করেছে সে আসলেই কোণ ধর্মের হতে পারে না।