শুরুতেই ঝরে যাওয়া একটি ফুলের নাম শেখ রাসেল: ডা. কামরুল হাসান খান
প্রকাশ: সোমবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ১১:১৩ পিএম

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন ১৮ অক্টোবর। ১৯৬৪ সালের এ দিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার ঘৃণ্য শত্রু-ঘাতক চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। সেদিন ঘাতকদের নির্মম বুলেট থেকে রক্ষা পায়নি শিশু রাসেল। কিন্তু সেদিন বিদেশে ছিলেন বলে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে গিয়েছিলেন এবং তাঁরা বেঁচে আছেন বলেই বাংলাদেশ এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত হচ্ছে। শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে একটি আদর্শ ও ভালোবাসার নাম।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪৯৬তম পর্বে সোমবার (১৮ অক্টোবর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস এন্ড রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিজের গভর্নিংবডির সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, স্বাধীন বাংলার জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম দলনেতা রকিবুল হাসান, জার্মান দূতাবাসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনারারি কনস্যুলেট, ফর বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, আজকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে শেখ রাসেল দিবস পালন করা হচ্ছে, এজন্য আমি সরকারকে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই। শেখ রাসেলকে নিয়ে আমাদের অনেক আলোচনা দরকার কারণ আমাদের সাধারণের মাঝে এই বিষয়টা আরও বিশ্লেষিত হওয়া দরকার যে কেন শেখ রাসেলকে সেদিন তার পুরো পরিবারসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আমরা যখন কারও জন্মদিন পালন করি তখন তার জন্মদিনে আনন্দের সাথে কেক কাঁটায় কিন্তু আজকে শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিনে আমার সামনে তার জন্মদিনের আনন্দের থেকে তার মৃত্যুর দিনটিই বেশি ভেসে আসে। শেখ রাসেলের শেষ কথাগুলো শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয় সারা বিশ্বের মানুষকে নাড়া দিয়ে উঠে। পরিবারের সবাইকে হত্যা করে ঘাতকরা খুঁজে বেড়ায় শেখ রাসেলকে। ঘাতকরা যখন তাকে খুঁজে পায় তখনও শেখ রাসেল জানে না পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই তার বাবা-মা। ভয় পেয়ে রাসেল কাঁদতে থাকে আর বলে, ‘আমাকে মেরোনা, আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাও’। ঘাতকরা টানতে টানতে নিয়ে যায় দোতলায়। বাবা মায়ের রক্তাক্ত লাশ দেখে চমকে উঠে সে, কাঁদতে থাকে অঝোরে। নিষ্ঠুর ঘাতকরা মায়ের কাছে নিয়ে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেয় শেখ রাসেলকে। রাসেলের নিথর দেহ ঢলে পড়ে মৃত মায়ের লাশের উপর। এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এবিষয়গুলো কিন্তু আমাদেরকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলে। আতঙ্কিত হয়ে শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমি মায়ের কাছে যাব’। পরবর্তীতে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিলেন, ‘আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দাও’। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক এএফএম মহিতুল ইসলামকে জাপটে ধরে সেদিন শিশু রাসেল বলেছিল, ভাইয়া ওরা আমাকে মারবে না তো? রাসেল তখন কান্নাকাটি করছিল আর বলছিল, ‘আমি মায়ের কাছে যাব, আমি মায়ের কাছে যাব’। এক ঘাতক এসে ‘চল তোর মায়ের কাছে দিয়ে আসি’ এই বলে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে শেষ করে দেয় বঙ্গবন্ধুর আদরের রাসেলকে। মাত্র ১১ বছরের একটা শিশুকে কিভাবে তার বাবা মায়ের, ভাইয়ের লাশকে দেখানোর পর এমন নির্মমভাবে হত্যা করলো নরপশুরা।