
ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপে যখন রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় ব্যস্ত ন্যাটো, তখন চীনের সঙ্গে মস্কোর ক্রমবর্ধমান সামরিক ও কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতা নতুন করে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বে। একদিকে ইউরোপে রুশ আগ্রাসন, অন্যদিকে ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনের তৎপরতা-এই দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে পশ্চিমা জোটটি।
এদিকে, রাশিয়া ও চীনের নিবিড় বন্ধুত্ব পৃথিবীকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে।
সামরিক মহড়া, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, সাইবার সক্ষমতা ও ভূরাজনৈতিক কৌশলে এ দুই পরাশক্তির একত্র হওয়া যেন ‘নতুন শীতল যুদ্ধের’ ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে সতর্ক করছেন বিশ্লেষকরা।
চীন-রাশিয়া- উভয়ই পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া রাষ্ট্র। রাশিয়া সামরিক শক্তিতে এবং চীন অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে যে প্রভাব বিস্তার করছে, তা যদি একত্র হয়, তাহলে ন্যাটোর ওপর বড় রকমের চাপ তৈরি হয়। একদিকে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া, অন্যদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের আধিপত্য। এ দ্বিমুখী ফ্রন্টলাইন ন্যাটোর কাছে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীন ও রাশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে ভোস্টক’, জাপান সাগর এবং অন্যান্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকাগুলোতে। এতে তারা একে অপরের নৌ, আকাশ ও সাইবার সক্ষমতা নিয়ে কৌশলগত সমন্বয় করছে। এ ধরনের সহযোগিতা ন্যাটোকে আতঙ্কিত করে, কারণ এটি ভবিষ্যতের যুদ্ধপ্রস্তুতির ইঙ্গিত দিতে পারে।
ন্যাটো মনে করে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণে চীনের নীরব সমর্থন পরোক্ষভাবে আগ্রাসনকে উৎসাহ করছে। অপরদিকে, যদি চীন তাইওয়ানে আক্রমণ করে, তখন রাশিয়া তার পক্ষে দাঁড়াতে পারে। দুটি আগ্রাসী পরাশক্তির সমন্বিত পদক্ষেপ পশ্চিমা বিশ্বকে বিভক্ত করে দিতে পারে।
রাশিয়া ও চীন একত্র হয়ে মার্কিন ডলারভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও মানবাধিকার সংক্রান্ত পশ্চিমা মানদণ্ডকে চ্যালেঞ্জ করছে। তারা ব্রিকস এবং সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের মতো জোট ব্যবহার করে বিকল্প ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট তৈরি করতে চায়। এ অবস্থায় পশ্চিমা নেতৃত্বের ‘হেজেমনি’ হুমকির মুখে পড়ে।
চীন এবং রাশিয়া সাইবার নিরাপত্তা ও নজরদারি প্রযুক্তিতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াচ্ছে। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে যে, এই সহযোগিতা ভবিষ্যতের সাইবার যুদ্ধের ক্ষেত্রে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে, বিশেষত ইউরোপ ও আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু হলে।