আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী থেকে কোরবানির পশুর হাট, যেকোনো অপতৎপরতা রুখতে তৎপর র্যাব

গোয়েন্দা তৎপরতা ও সারাদেশের ব্যাটালিয়নগুলোর মাধ্যমে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম র্যাব নজরদারি করছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীর মুখপাত্র উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা ও সারাদেশের ব্যাটালিয়নগুলোর মাধ্যমে আমাদের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের স্বাভাবিক যে কার্যক্রম সেটি চলমান রয়েছে। ইনশাল্লাহ যদি কোনো রকমের অপতৎপরতা আমাদের নজরে আসে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, পবিত্র ঈদ-উল-আজহা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উৎসবমুখর ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পশুর হাট, কোরবানি, ঈদের জামায়াত, চামড়া বেচা-কেনাসহ বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে যে কোনো ধরণের অপতৎপরতা রুখতে সচেষ্ট রয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব। কোরবানির হাটে পশু ক্রয়/বিক্রয়ে প্রচুর আর্থিক লেনদেন হয়। এক্ষেত্রে অসাধু চক্রের মাধ্যমে জাল টাকার ছড়াছড়ির আশঙ্কা থাকে। জাল টাকা তৈরি ও সরবরাহের সাথে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্তে হাটে স্থাপিত র্যাব ফোর্সেস এর কন্ট্রোল রুমে জাল নোট শনাক্তের মেশিন স্থাপন করে সহায়তা করছে। সবাইকে র্যাবের এই সেবা গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হলো। এছাড়াও এ সময়ে কোরবানির হাট কেন্দ্রিক ও মার্কেটে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতারক চক্র, দালাল, মলম পার্টি এবং অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা রুখতে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অসুস্থ গবাদি পশু, কৃত্রিম উপায়ে রাসায়নিক দ্রব্য অথবা ইনজেকশন ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে মোটাতাজা করা ও অস্বাস্থ্যকর গবাদি পশু শনাক্তকরণে র্যাবের নজদারি চলমান থাকবে। পাশাপাশি পশু চিকিৎসকের সহায়তায় এসকল গবাদি পশু শনাক্ত করে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেটগণ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। পশুর হাটগুলোর হাসিল ঘরে সিটি কর্পোরেশন/স্থানীয় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হাসিল তালিকা আকারে প্রদর্শিত থাকতে হবে। নির্ধারিত হারের বেশি হাসিল নেয়া প্রতিরোধে র্যাবের নজরদারি থাকবে। কেউ নির্ধারিত হারের বেশি হাসিল আদায় করলে/করতে চাইলে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গৃহিত হবে। এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ থাকলে র্যাব কন্ট্রোল রুমের সহায়তা গ্রহণের জন্য সকলকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
এছাড়াও এক হাটের গরু জোর করে অন্য হাটে নামানোসহ পশুর হাট কেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরণের চাঁদাবাজি ঠেকাতে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, ঢাকামুখী পশু বহণে চাঁদাবাজি রুখতে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও নিয়মিত টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সড়কপথে নিরাপত্তা বিধানে র্যাবের টহল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বছর অনলাইনে প্রচুর কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম ও প্রতারণা প্রতিরোধে র্যাব সাইবার মনিটরিং সেল সার্বক্ষণিক ভার্চুয়াল জগতে নজরদারী করছে। অনলাইনে পশু কেনা বেচার লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য র্যাব ফোর্সেস সকল পরামর্শ দিচ্ছে। এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ থাকলে র্যাব কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ করা জন্য অনুরোধ করা হলো। কোরবানির পশুর চামড়ার বাজার ধস নামাতে মুনাফালোভী সিন্ডিকেটের কারসাজির বিরুদ্ধে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী রয়েছে। তাদের এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গৃহিত হবে।
তিনি বলেন, কোরবানির পশুর হাটে আগত মহিলাদের উত্যক্ত/ইভটিজিং হয়রানি রোধকল্পে মোবাইলকোর্টসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ কোন ধরণের হেনস্থার শিকার হলে অবশ্যই র্যাব কন্ট্রোল রুম ও র্যাব টহল দলকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। র্যাব ফোর্সেস কঠোর হস্তে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়াও পশুর হাট/তৎসংলগ্ন এলাকায় র্যাবের নিয়মিত টহলের পাশাপাশি যে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা রোধকল্পে আশে পাশের এলাকায় র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সাদা পোশাকে বিভিন্ন জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, দেশের সকলের ঈদ-উল-আজহা নির্বিঘ্নে উদ্যাপন ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ যে কোন উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে র্যাব। যে কোন জরুরি প্রয়োজনে পশু ব্যবসায়ীসহ দেশের সকল জনগণকে র্যাবের কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করার পরামর্শ প্রদান করা হলো।