
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। দিন-রাত মশার উৎপাত চলছে সমান তালে। মশার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে কয়েল ও বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করেও নিস্তার মিলছে না।
মশার যন্ত্রণায় দিনের বেলায়ও স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে আরো কয়েকগুণ উৎপাত বেড়ে যায়। তখন মশারির মধ্যে কিংবা মশা তাড়ানো উপকরণ ছাড়া বসে থাকা দুরূহ হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা। মশার উৎপাতে তারা ঠিকভাবে লেখাপড়া পর্যন্ত করতে পারছে না।
মশার উপদ্রবে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি, পৌরসভার ব্যবসায়ীরাও রয়েছে বিপাকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চারপাশে ড্রেন ডোবা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বেলেপুকুর,অক্ট্রের মোড় ও আলিনগর এলাকায় রয়েছে ৪ টি পচা পুকুর । মুলত ঐসব পচা পুকুর থেকেই মশা প্রজনন হচ্ছে।
পৌরসভার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চোখের সামনে এ অবস্থার সৃষ্টি হলেও কেউ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে এগিয়ে আসছেন না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ এর শিক্ষার্থী আজিজা খাতুন বলেন, মশার কারণে রাতের বেলায় চেয়ার-টেবিলে বসে লেখাপড়া করা কষ্টকর। নিরুপায় হয়ে মশারি টাঙিয়ে বিছানায় বসে লেখাপড়া করতে হচ্ছে।
পৌর এলাকার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বাসিন্দা মো. আব্দুল মান্নান জানান , মশার অত্যাচারে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি মিলছে না। দিনের বেলায়ও কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মশা নিধনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না পৌর কর্তৃপক্ষের। এছাড়াও জনসচেতনতায় নেই প্রচারণাও। পৌর কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের যেসব সেবা দিয়ে থাকেন, তার মধ্যে মশক নিধন অন্যতম কাজ।
অন্যদিকে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক মাসের বেশি সময় তারা এলাকায় মশা নিধনের কোনো কার্যক্রম দেখেননি। নালায় কোনো কীটনাশক দেয়া হয়নি। ফগার মেশিনের শব্দ পর্যন্ত কেউ পাননি।
পৌরকতৃপক্ষের দাবী এখন মশার প্রজনন মৌসুম। এ সময় মশার উপদ্রব বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে পৌরসভা। অবসর সময়ে শহরের আদালত চত্বর, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠ, থানার মোড়, ক্লাব সুপার মার্কেটের সামনে আড্ডা দেন শহরবাসী। মশার কারণে সন্ধ্যার পর কেউ টিকতে পারে না।
বুধবার তারাবির নামাজের জন্য আদালত চত্বরে গেছিলেন জহির হাসান চৌধুরী তিনি বলেন, মশার যন্ত্রণায় দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল। মাথার উপর হাজার হাজার মশা, দলবেঁধে ভন ভন করছে। কতক্ষণ মশা তাড়িয়ে পারা যায়।
শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও আইন জীবি হামিদুল হক বলেন, ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতাল, থানা ও পৌরসভা ভবনও রয়েছে এই ওয়ার্ডে। এখানেও গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ফগার মেশিনের কোনো শব্দও পাওয়া যায়নি।
মশার উপদ্রব কোনোভাবেই কমছে না।
শহরের ব্যস্ত এলাকা বাতেন খাঁর মোড়ে। চায়ের দোকানদার আব্দুল আলিম বলেন, তারা দুই মাসের মধ্যে পৌরসভার কাউকে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেননি। সন্ধ্যার পর মশার যন্ত্রণায় মানুষ দোকানে বসে থাকতে পারে না।
যে কারণে মশক নিধন কার্যক্রম স্থবির:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় ১৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। আগে মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে শহরে মশক নিধন কর্মসূচি পালিত হতো।
গত ৫ই আগস্ট পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়েছে। মেয়র পদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি মেয়রের ক্ষমতা পেলেও আগের মতো মশক নিধন এবং জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন হচ্ছে না। মাঠপর্যায়ে নির্বাচিত কাউন্সিলররা না থাকায় ভেঙে পড়েছে মশক নিধন কার্যক্রম।
অভিযোগ উঠেছে, মশা নিধনে বাজেট থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর নেই ফলে জবাবদিহিতাও নেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক এক কাউন্সিলর বলেন, একজন কাউন্সিলর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়। এজন্য জনগণের কাছে তার কাজের জবাবদিহি করতে হয়। সে জায়গা থেকে মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এখন সেই চিত্র নেই। ফলে মশার উপদ্রব আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
এ বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুন-অর-রশিদ জানান, এখন মশার প্রজনন মৌসুম। এ সময় মশার উপদ্রব বাড়বে- এটাই স্বাভাবিক। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে পৌরসভা। তিনি বলেন, সক্ষমতার অভাবে ১৫টি ওয়ার্ডে একসঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। ৭টি ফগার মেশিনের মধ্যে দু’টি নষ্ট। শহরকে প্রাধান্য দিয়ে মশা নিধনে ৫টি ফগার মেশিন নিয়মিত কাজ করছে। মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতিবছর ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ চালানো হয়। কিন্তু এবার সম্ভব হয়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক উজ্জ্বল কুমার ঘোষ জানান গত এক সপ্তাহ থেকে দায়িত্ব পালন করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।