
কথিত ‘হিন্দু নিপীড়নের’ অভিযোগে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল চলছে। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির উগ্রপন্থি কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের সমর্থনে সিভিল সোসাইটি অব দিল্লির ব্যানারে বেশ কিছু কট্টরপন্থি এই বিক্ষোভ করে। বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে দিল্লির চাণক্যপুরী থানার তিন মূর্তি চক থেকে মিছিলটি শুরু হয়। তবে তারা দূতাবাসের সামনে যেতে পারেনি।
বিবিসি বাংলার দিল্লি সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষ জানিয়েছেন, ওই মিছিলে বিভিন্ন বয়সি পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও যোগ দিয়েছেন। অংশগ্রহণকারীদের প্রায় সবার হাতেই প্ল্যাকার্ড ছিল। প্ল্যাকার্ডে বাংলা ও হিন্দিতে লেখা ছিল ‘বাংলা বাঁচাও, বাঙালি বাঁচাও, বাঁচাও সনাতন!’, ‘বাংলাদেশ, একাত্তর মনে করো, জুলুমবাজি বন্ধ করো! সেভ বাংলাদেশি হিন্দুজ’ ইত্যাদি স্লোগান।
বিবিসি জানায়, স্মরণকালে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ভারতীয়দের এমন বিক্ষোভ এই প্রথমবার।
এর আগে কলকাতা ও আগরতলার ডেপুটি হাইকমিশনে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বিক্ষোভ করা হয়। এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা হাইকমিশন ভবনে হামলা ও কর্মরতদের মারধর করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিষয়গুলো প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শিলিগুড়িতে বাংলাদেশিদের হোটেল কক্ষ ভাড়া বন্ধের ঘোষণা
এদিকে, বাংলাদেশি নাগরিকদের হোটেলের কক্ষ ভাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি শহরের হোটেল মালিকরা। এর আগে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদার হোটেল মালিকরা ঘোষণা করেছিলেন যে বাংলাদেশি নাগরিকদের তারা ঘর দেবেন না। যদিও পরে আগরতলার হোটেল মালিকরা সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন।
শিলিগুড়ি শহর ও আশপাশের অঞ্চলের হোটেল মালিকদের সংগঠন গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেলিয়ার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এ ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটির যুগ্ম সচিব উজ্জ্বল ঘোষ বিবিসিকে জানান, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক যে সংঘাতের আবহাওয়া চলছে, বিশেষত সে দেশে ভারতের জাতীয় পতাকাকে অবমাননা এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশের উসকানিমূলক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বাংলাদেশের নাগরিকদের আমাদের কোনো হোটেলে থাকতে দেওয়া হবে না।’
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এলাকার ১৮০টি হোটেল মালিকদের সংগঠন এটি।
তিনি আরও বলেন, শিলিগুড়ি ছাড়াও আমরা কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের হোটেল মালিকদের সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। তারাও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে এই ব্যাপারে। আর দার্জিলিংয়ের হোটেল মালিকদের সংগঠনও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে দার্জিলিংয়ের হোটেল মালিকরা এখনই এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না বলেই আমাদের জানিয়েছেন।
পর্যটন মৌসুমে দার্জিলিংয়ে প্রায় তিরিশ হাজার মতো বাংলাদেশি পর্যটক ঘুরতে যান। শিলিগুড়ি ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশি পর্যটকরা বেশি সংখ্যায় আসছিলেন।
এদের একটা বড় অংশ শৈল শহরগুলোতে যাওয়ার আগে শিলিগুড়ির হোটেলে ঘর নেন এক বা দুদিনের জন্য। আবার শিলিগুড়ি বৃহৎ ব্যবসায়িক কেন্দ্রও, তাই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও শিলিগুড়িতে কাজে আসেন।
বিবিসি জানায়, তবে শিলিগুড়ি এলাকার হোটেল মালিকরা বাংলাদেশিদের ঘর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তার প্রভাব খুব বেশি পড়ার কথা নয়, কারণ এমনিতেই এখন ভারতীয় ভিসা দেওয়ার কড়াকড়ি থাকায় ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশিরা ভারতে প্রায় আসছেনই না।