
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও এর মাধ্যমে তার দীর্ঘ ২৪ বছরের শাসনের অবসান হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। তবে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিশোধ নেওয়া হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, একটি প্লেনে চড়ে অজ্ঞাত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে দামেস্ক ছেড়েছেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। এর আগেই সিরীয় রাজধানীতে প্রবেশের কথা জানায় বিদ্রোহীরা। দামেস্ক উপকণ্ঠে একটি কারাগার থেকে বন্দিদের মুক্ত করে দেওয়ারও ঘোষণা দেয় তারা।
দীর্ঘদিনের শাসক পালিয়ে যাওয়ার পর সিরিয়ার সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠী ঘোষণা করেছে, আসাদ শাসনের সমাপ্তি দেশটির ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, বাথ শাসনের অধীনে ৫০ বছরের দমন এবং ১৩ বছরের অপরাধ, নিপীড়ন ও স্থানচ্যুতির পর, দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে আজ (৮ ডিসেম্বর) আমরা সেই অন্ধকার যুগের সমাপ্তি ঘটিয়েছি। আমরা সিরিয়ার জন্য নতুন যুগের সূচনা ঘোষণা করছি।
বিদ্রোহীরা বলেছে, ‘নতুন সিরিয়া’ হবে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জায়গা’, যেখানে ন্যায়বিচারের জয় হবে এবং সব সিরীয় নাগরিকের মর্যাদা রক্ষা করা হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা অন্ধকার অতীতের পাতা উল্টে দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবো।
ফ্লাইটরাডার ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে সিরিয়ার একটি বিমান উড্ডয়ন করেছে। এরপর বিমানটি সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে যায়। তবে আচমকা বিমানটি ইউ-টার্ন নিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য উল্টো দিকে উড়ে যায় এবং ম্যাপ থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
বিমানটিতে কারা ছিলেন তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
সিরিয়ার বিরোধীরা বলছেন, আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তারা আসাদ সরকারের পতনের ঘোষণা দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে সশস্ত্র বিরোধীরা বলেছেন, স্বেচ্ছাচারী শাসক আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আমরা দামেস্ককে বাশার আল-আসাদ থেকে মুক্ত ঘোষণা করছি।
বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দামেস্কে প্রবেশ করছে বিদ্রোহীরা। বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম টেলিগ্রামে বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, আমাদের সেনারা রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দামেস্কের প্রধান স্কয়ারে হাজার হাজার লোক গাড়িতে করে এবং পায়ে হেঁটে এসেছেন। তারা হাত নাড়ছেন এবং স্বাধীনতা বলে স্লোগান দিচ্ছেন।
বিদ্রোহীরা বলছেন, আমরা সিরিয়ার জনগণের সঙ্গে আমাদের বন্দীদের মুক্ত ও তাদের শিকল ভাঙ্গার এবং সেদনায়া কারাগারে অবিচারের যুগের সমাপ্তি ঘোষণা করার সংবাদ উদযাপন করছি।
সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি তার যোদ্ধাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তারা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সেবামূলক স্থাপনায় আক্রমণ না করে, লুটপাট না চালান।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারিভাবে হস্তান্তর না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কর্তৃপক্ষের অধীনেই থাকবে।
এদিকে বিজয় বার্তার মধ্যেই সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি বলেন, তিনি তার বাড়ি ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন না। কারণ তিনি নিশ্চিত করতে চান, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সঠিকভাবে কাজ চালিয়ে যায়।
আল-জালালি বলেন, আমি সবাইকে যুক্তিসঙ্গত চিন্তা করতে এবং দেশের কথা ভাবতে অনুরোধ জানাই। আমরা বিরোধীদের প্রতি আমাদের হাত প্রসারিত করছি, তারাও তাদের হাত বাড়িয়েছে এবং নিশ্চিত করেছে যে তারা এই দেশের কোনো নাগরিকের ক্ষতি করবে না।
আরও পড়ুন