বুধবার ১৫ মে ২০২৪ ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শিরোনাম: বিশ্বাস পুনর্নির্মাণের জন্য আমি গত দুইদিন ধরে বাংলাদেশ সফর করছি : ডোনাল্ড লু     ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ    রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নব নিযুক্ত তিন বিচারপতি    র‍্যাব, শ্রমিক অধিকার ও মানবাধিকার বিষয়ে অগ্রগতি দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র    সমীকরণে ছিটকে গেছে লখনৌ-দিল্লি, রইলো যারা.....    আ.লীগের কারণে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত দেশের মানুষ: ফখরুল    সরকারের নীতিগত পরিকল্পনায় বর্তমানে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে : প্রধানমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
আজ বাবা দিবস নয়...
হাসান হাফিজুর রহমান
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩, ৯:২৫ পিএম আপডেট: ২৫.০৮.২০২৩ ৯:৩০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

শহরের রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে পড়ুয়া মফস্বলের আফশীন, শিক্ষাপঞ্জি মোতাবেক প্রত্যেক ছুটির আগে বাবা শহরে গিয়ে তাকে হোস্টেল থেকে তাকে বাড়ি আনে, আবার ছুটি শেষে হোস্টেলে রেখে আসে।

এভাবে কয়েকবার ট্রেনে আসা যাওয়ার পর স্টেশন প্লাটফর্ম, টিকেটকাটা থেকে সবকিছুই চেনা হয়ে গেল তার। মনেহয় এখন সে একাই সব পারবে।

একবার ছুটিতে বাড়ি এসে সে বাবাকে বললো, “আমি তো অনেক বড় হয়েছি, তোমার আর কষ্ট করে আমাকে আনানেয়া করা লাগবে না বাবা, এবার থেকে আমি একাই আসা যাওয়া করতে পারবো।" ছেলের আত্মবিশ্বাস দেখে বাবা-মা রাজি হলো।

ছুটি শেষে, বাবা-মা দুজনেই রেলস্টেশনে এলো ছেলেকে বিদায় জানাতে, ট্রেন ছাড়া অবধি তারা সাথেই ছিল। প্লাটফরমে অপেক্ষার সময় বাবা আবারও জার্নিতে করনীয় সবকিছু একে একে আবারও বলে দিলেন। ট্রেন থেকে নেমে কি ভাবে রিক্সা ভাড়া করতে হবে, একা রিক্সায় কি করে বসতে হবে সব অদ্যপন্ত।

ঠিক আছে, বাবা, ঠিক আছে, সব পারবো।

সময়মতো ট্রেন এলো, আফশীন সিটে বসলো, বাবা ব্যাগপত্র লাগেজ কেবিনে গুছিয়ে দিলেন। ট্রেনের কামরা থেকে নেমে জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে আবারও কিভাবে যেতে হবে বলতে গেলে বিরক্ত হয়ে সে বলে উঠলো," আরে জানি, জানি তো, এক কথা হাজার বার বলতে হবে না"।

ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগ মুহুর্তে বাবা তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো, "শোনও পথে যদি খুব সমস্যা মনে হয় তবে এটা পড়ে দেখবে" বলে ছেলের পকেটে একটা চিরকূট রাখলেন। 

ট্রেন ছেড়ে দিলো, এখন আফশীন একাই, প্রথম বারের মতো একা জার্নি, ঠিক বাবা-মা ছাড়া ট্রেনে একা বসে যেভাবে যেতে চেয়েছিল।

জানালার বাইরের সবকিছু দেখতে ভালই লাগছে, দূরের গাছপালা, ফসল, মাঠ বাড়িঘর সবকিছু! 

অন্য যাত্রিরা অবাক চোখে দেখছে এই টুকু ছেলে একাই বড় শহরে যাচ্ছে, পারবে তো! 

একেক স্টেশনে ট্রেন থামছে,পুরোন যাত্রি নামছে, নতুন লোকজন উঠছে,ভালোই লাগছে, ট্রেন চলছেই...

মাঝে এক স্টেশনে তিনটা ষন্ডামার্কা ছেলে উঠলো, ওরা হৈচৈ করে করছে, নিজেদের মধ্যে নোংরা ভাষায় কথা বলছে। এরা তার পাশের সিটে বসেছে, একজন তার হুছিয়ে রাখা ব্যাগ ঠেলে সরিয়ে ওদের জিনিসপত্র রাখলো। মনে হয় শহরে লেবার জাতীয় কোনও কাজ করে। হাবভাব দেখে ভয় ভয় লাগছে। সময়ের সাথে সাথে অস্বস্তিও বাড়ছে, নিজেকে কোণঠাসা আর একা লাগছে।

সন্ধ্যার কাছাকাছি সময়ে ছোট্ট একটা স্টেশনে এসে ট্রেন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, পরের স্টেশনে কি জানি গন্ডগোল হয়েছে, লাইন ক্লিয়ার পায় নি। কখন ছাড়বে কেউ বলতে পারছে না।যাত্রিরা একে একে নেমে যাচ্ছে বিকল্প উপায়ে যার যার গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। এ স্টেশনে সে আগে কখনও নামেনি, বাইরের রাস্তা চেনে না আর এখান থেকে কিভাবে শহরে যেতে হবে তাও জানা নেই।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে তার, মাথা নিচু করে বসে আছে সে, চোখে জল আসছে, কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। 

হঠাৎ মনে পড়লো বাবা পকেটে কিছু রেখেছিল, কাঁপতে কাঁপতে খুঁজতে লাগল বাবা তাকে কি দিয়েছে। কাগজের টুকরো বের করে ভাঁজ খুলে দেখলো তাতে লেখা "ভয় পেয়ো না, আমি এই ট্রেনের শেষ বগীতে আছি, বাবা!" 

জানালা দিয়ে মাথা বাড়িয়ে আবছা আলোতে দেখতে পেলো একজন তার কম্পার্টমেন্টের দিকেই এগিয়ে আসছে, সে লোকটি অন্য কেউ নয়, সে তারই বাবা!



* বাবারা এমনই হয়, এভাবেই ছায়ার মত হয়ে সুসময়ে দুঃসময়ে আমাদের আশেপাশে থাকেন, আস্থা ও ভরসা হয়ে। ভালো থাকুক সকল বাবা, আমার মতো
যাদের বাবা জীবিত নেই, দোয়া করি সেসব বাবাকে যেন সর্বশক্তিমান ভাল রাখেন।

*বাবা দিবসে এক বন্ধু বলেছিল, বাবা নিয়ে লিখতে হবে, তবে বাবা দিবসে নয় লিখতে হবে অন্যদিনে। তারজন্যই লিখা, বন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা। 

প্রভাতকাল 
১০ ভাদ্র ১৪৩০
রাজশাহী

(ফেসবুক থেকে নেয়া)

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]