প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৩, ৯:১২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
মৃৎশিল্পের তৈজসপত্র এক সময়কার জনপ্রিয় গৃহসামগ্রীর মধ্যে অন্যতম ছিল। দুই যুগ আগে খুব কম বাড়িই ছিল যেখানে মৃৎশিল্পের তৈজসপত্র ছিল না। সহজলভ্য থাকায় নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল মৃৎশিল্পীদের তৈরী করা থালা বাসনসহ নানাবিধ গৃহসামগ্রী। এক সময় কদর ছিল মাটির তৈরি, হাড়ি,পাতিল, কলস, সরা, বাসনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্রের।আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এসকল মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য।প্লাস্টিক আর এ্যালমুনিয়ামের ভিড়ে মাটির তৈজসপত্র তেমন চাহিদা নেই বললেই চলে।তাই জীবন ও জীবিকার জন্য পেশা বদলাচ্ছে অনেকে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার দরিশলই ছান্দড়া,বয়রা,গোবরা,শতপাড়া,গঙ্গারাপুর এবং পাশ্চাত্য রাঘবদাইড়,কেচুয়াডুবীসহ অনেক গ্রামের পাল পাড়ার বেশ কিছু পরিবার এখনো আকড়ে আছে এই শিল্পে। এই পেশা থেকে কোনো রকম আয় করে পরিবারের খরচ চালাচ্ছেন এখানের মৃৎশিল্পীরা। শালিখা উপজেলা সদর আড়পাড়া থেকে এক কিলোমিটার দূরে গেলেই দরিশলই পালপাড়া।শতাধিক পাল পরিবার বসবাস করে এখানে। যাদের মধ্যে ত্রিশ থেকে চল্লিশ ঘর পরিবার মৃৎশিল্পের সাথে যুক্ত বাকিরা অন্যপেশায়।
তারপরও এখানে পালেরা নিপুন হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করে তৈজসপত্র, রয়েছে মাটির তৈরি হাড়ি,সরা,কলস,ফুলের টব,দেবদেবীর মূর্তিসহ আরো অনেক কিছু। এক সময় মাগুরা জেলার বাইরেও এ সকল মাটির তৈরি তৈজসপত্রের কদর ছিল অনেক। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প।পরিবর্তে স্থান দখল করেছে স্টেইনলেস স্টিল, প্লাস্টিক, এ্যালমুনিয়ামের তৈরি সরঞ্জাম। তাই সচ্ছলতা না থাকায় জীবন-জীবিকার তাগিদে এ শিল্পের আশা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকে।
সরজমিনে দরিশলাই গ্রামের পাল পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটি সংগ্রহ করে শক্ত একটি কাঠের উপর বৃত্তাকার চাকা বসিয়ে সুনিপুণ কৌশলে তৈরি করছেন থালা বাসন, মাটির পুতুল, কলসসহ নানাবিধ জিনিস। এমনি কয়েকজন মৃৎশিল্পি সুবাস কুমার পাল, রনজিৎ পালসহ অনেকে জানান,আগে মাটি ফ্রি পাওয়া যেত কিন্তু এখন মাটি কিনে নিতে হয় তাছাড়া এসকল জিনিসপত্র পোড়ানোর জালানি কাটখড়ির দাম বেশি।তাই লাভ হয় খুব সীমিত।
আড়পাড়া ইউনিয়নের দরিশলাই গ্রামের নির্মল পাল নামে অপর একজন ভাস্কর বলেন, মৃৎশিল্পের কদর কমে যাওয়ায় এখন আমি মৃৎশিল্পের কাজ ততটা করি না আমি এখন বিভিন্ন পূজা মন্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ করি। সেখান থেকে যা আয় করি তাই দিয়েই পরিবারের ভরণ পোষণের খরচ মিটায়। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও সরা,বাসুন গড়ার কাজে সর্বক্ষণ সাহায্যে করে থাকে। আয়ের জন্য অন্য কোন উৎস না পেয়ে জীবিকার তাগিদে অনেকে পুরাতন এই পেশায় ধরে রেখেছে বলে জানান তারা। কিন্তু কাচামালের দাম বেশি হওয়ায় এবং আয় কমে যাওয়াই সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছে তারা।তাই এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতার প্রত্যাশা এসকল মৃৎশিল্পীদের। তবে নিত্য ব্যবহারের জিনিসপত্রের ব্যবহার কমলেও বেড়েছে পোড়ামাটির গৃহসজ্জার চাহিদা।সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আবারো হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
শ্রী ইন্দ্রনীল অ্যাসোসিয়েট'স এর প্রধান সংগঠক শিক্ষক ও গবেষক ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, মৃৎশিল্প আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প যার বৃদ্ধি পেলে শুধুমাত্র ঐতিহ্যকে রক্ষা করাই হবে না বরং প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্র ব্যবহার করে আমরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি তা থেকে অনেকটা পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। আর তাছাড়া আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও এক শ্রেনীর মানুষের কাছে মাটির তৈরি গৃহসামগ্রীর কদর আজীবনই থাকবে।