শনিবার ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২ ফাল্গুন ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
পুলিশ মরলে আলহামদুলিল্লাহ বলে কারা এবং কেন?
মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার)
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩, ৬:৫৭ পিএম আপডেট: ৩১.০৮.২০২৩ ৭:০৫ PM

"আমরা সবাই পাপী; আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি!!"

উল্লেখিত লেখা জাতীয় কবি নজরুলের।।

বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে বিভিন্ন ধরনের গ্রেফতারি পরোয়ানা মুলতবি আছে ৪ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩৫৬ টি, এর বাহিরে ও সার্টিফিকেট মামলা সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট মুলতুবী রয়েছে আরও কয়েক হাজার।

বর্তমানে পুলিশের নিকট মুলতবি মামলার সংখ্যা ৪৫ হাজার ৬৬৮ টি, বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৪৫টি। প্রতিদিন ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার কারণে সারাদেশে মোটরযান আইনে মামলা রুজু হয় কয়েক হাজার।
এভাবে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষকে খোঁজ করে পুলিশ। সেটা মুলতবি ওয়ারেন্ট মামলার ক্ষেত্রে হোক, মামলার আসামি হিসেবে হোক, বিভিন্নভাবে আইন ভঙ্গ করার কারণে হোক, পুলিশের কাজের ধরনের কারণেই এত সংখ্যক মানুষকে খুঁজতে হয়।

এর বাহিরে ও রয়েছে অসংখ্য মাদক সেবী, গুজব রটনাকারী, সামাজিক অশান্তি কারী ইত্যাদি। পাশাপাশি রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষের কারণেও প্রচুর সংখ্যক মানুষের উপর পুলিশের নজরদারি করতে হয়।
আইন ভঙ্গকারী মাদক সেবী, ওয়ারেন্টের আসামি, মামলার আসামি, জঙ্গি, সন্ত্রাসী ইত্যাদি ধরনের প্রতিপক্ষ তৈরি হয় প্রতিমুহূর্তে পুলিশের বিপক্ষে।

এ সকল মানুষেরা কোনভাবেই পুলিশের উপর খুশি থাকার কথা নয়। যার ফলে তারা পুলিশকে নিজেদের প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করে। যখনই পুলিশের কোন নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয় তখন এই সকল লোক সবার আগে হামলে পড়ে পুলিশের বিপক্ষে। তখন সে নিজের অপরাধ মনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ ইত্যাদি ধর্মীয় বাক্য ব্যবহার করে থাকে। এটি পুলিশের সমস্যা নয় বরং অপরাধীর অপরাধ মনের বহিঃপ্রকাশ।

লক্ষ লক্ষ ওয়ারেন্টের আসামি, চোরাকারবারি, মাদকসেবী, বেআইনি কর্মকান্ডে লিপ্ত ব্যক্তিবর্গ তাদের পক্ষে পুলিশকে ভালো বলার চিন্তা করাটাও অবাস্তব।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানার মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এই মৃত্যুতে খুশি হয়েছেন মর্মে তাদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন।

যে বা যারা এ ধরনের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন তাদের মানসিক সুস্থ্যতা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে একজন মুসলিম হয়ে আরেকজন মুসলিমের মৃত্যুতে আলহামদুলিল্লাহ বলা সেটি তার ঈমানের মারাত্মক দুর্বলতা এবং ধর্ম মতে এটি তার নিজের উপরে বর্তায়।

প্রতিদিন অসংখ্য মামলা রুজু হয়। পুলিশী কার্যক্রমে মামলার বাদী ন্যায়বিচার পেলেও বহু সংখ্যক বিবাদী পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট হয়। যিনি আইনগত প্রক্রিয়াতেই পুলিশের হেফাজতে আসেন তিনি বা তার পরিবার পুলিশের উপর খুশি থাকার কোন সুযোগ নেই। এভাবে প্রতিদিন পুলিশি সেবায়  কিছু সংখ্যক মানুষ খুশি থাকলেও বহু সংখ্যক অপরাধী এবং তাদের পরিবার পরিজন পুলিশের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

পুলিশের কাজ অত্যন্ত অপ্রিয় কাজ। সেবা ধর্মী কাজ হলেও প্রতিটি কাজে প্রতিপক্ষ সৃষ্টি হয়। আমরা যদি লক্ষ্য করি আমাদের দেশেই অনেক সেবা ধর্মী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা শুধুমাত্র সেবা করলেই সকল মানুষ খুশি থাকার কথা, নিশ্চিত করে বলা যায় সে সকল দফতরের উপর মানুষ পরিপূর্ণ খুশি নয়। অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের কাজের মাধ্যমে কোন প্রতিপক্ষ সৃষ্টি হয় না কিন্তু তাদের কাজের উপরে মানুষের সন্তুষ্টি নেই। সরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট ভূমি সংক্রান্ত সেবা সমূহ ইত্যাদি যেখানে কোন প্রতিপক্ষ নেই সেবা করলেই সবাই খুশি সেখানেও কি আমরা সবাই খুশি!!
রাস্তায় ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে জরিমানা, মামলা করলে তিনি নিশ্চয় খুশি হন না, আইন অমান্য করে রাস্তা পারাপার হলে তাকে আটক করলে তিনি নিশ্চয়ই খুশি হবেন না। হত্যা মামলার আসামি ছিনতাই কারী,ডাকাত দস্যুকে গ্রেফতার করলে তিনি বা তার পরিবার নিশ্চিত খুশি হবেন না। এভাবে প্রতিদিন অসংখ্য প্রতিপক্ষ গড়ে ওঠে পুলিশের বিপক্ষে।

বিশেষ করে আমাদের মত রাজনৈতিক অস্থিরতা পূর্ণ একটি দেশে পুলিশের পক্ষে কাঙ্খিত সেবা প্রদান অত্যন্ত জটিল। রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হলে পুলিশের পক্ষে সর্বোচ্চ ভালো কাজ করা সম্ভব হয়। পুলিশ বাহিনীর যে সকল সদস্যগণ বিদেশে জাতিসংঘ বাহিনীতে অথবা অন্যান্য ডিসিপ্লিনে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তারা সর্বোচ্চ সম্মান এবং সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। বাহিনীর একই ব্যক্তি নিজ দেশে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করতে না পারার বিষয়টি গবেষণার দাবি রাখে।

তবে আমরা যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির শুরু থেকে আজকে পর্যন্ত লক্ষ্য রাখি তাহলে আমাদের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে এবং রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে বাংলাদেশ পুলিশ সর্বাগ্রে অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছে।

যেমন আমরা যদি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি, তাহলে দেখতে পাবো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে পুলিশ বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যগণ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র দিয়ে, প্রশিক্ষণ দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অতুলনীয় অবদান রেখেছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রক্ষা করার জন্য পুলিশ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছে।

জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযানে বাংলাদেশ পুলিশের অবদান বিশ্বের মধ্যে ঈর্ষণীয়। ২০১৩-১৪ সালে দেশবিরোধী আন্দোলনে মানুষ পুড়িয়ে মারার মহোৎসবে বাংলাদেশ পুলিশ সাধারণ মানুষের পাশে থেকে মানুষকে রক্ষা করেছে।

করনা মহামারীর সময় বাংলাদেশ পুলিশ নিজেদের জীবন বিসর্জন করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

এভাবে আমরা যদি লক্ষ্য করি প্রাতিষ্ঠানিক এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহে পুলিশের অসামান্য অবদান রয়েছে এবং সেটি সর্বজন স্বীকৃত।

প্রায় দুই লক্ষ বারো হাজার সদস্যের এই বাহিনীতে ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকের অপরাধ থাকতে পারে। বাংলাদেশ পুলিশের নৈতিক ঘোষণা রয়েছে--ব্যক্তির অপরাধের দায়ভার বাহিনী নিবে না"" এবং সেটি কখনো নেয়নি।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর যে সকল সদস্যগণ বিভিন্ন বেআইনি কার্যক্রমে অথবা বাহিনীর নিয়ম শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করেছে তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে এসেছে। এজন্য অনেকেই চাকরিচ্যুত হয়েছেন, আসামি হয়ে জেল খাটছেন, এমনকি অনেক সদস্য মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে ফাঁসিতে ঝুলেছেন।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ পুলিশ কখনো এ বাহিনীর সদস্যদের অপরাধের দায়ভার গ্রহণ করেনি।
২৪ ঘন্টা মানুষের নীরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার বাহিনী বাংলাদেশ পুলিশ। মানুষ অসহায় অবস্থায় সর্বপ্রথম পুলিশের শরণাপন্ন হয়। মানুষ নিজেদের আস্তার জায়গা ভাবতে চায় পুলিশকে। মানুষ পুলিশকে নায়কোচিত ভূমিকায় দেখতে চায়। মানুষ চায় পুলিশ নিজেরা থাকবে সকল অপরাধের ঊর্ধ্বে। যার ফলে যখনই এর ব্যত্যয় দেখতে পায় তখনই মানুষের মনজগতে ধাক্কা দেয় এবং যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। তবে নেতিবাচক বহিঃপ্রকাশ কখনো ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনতে পারেনা। বাহিনীর সদস্যগণ সমাজের অংশ, সমাজেরই পরিচয় বহন করে। ইতিবাচক ও গঠনমূলক চিন্তাভাবনার মাধ্যমেই কাঙ্খিত পুলিশ বাহিনী গঠন করা সম্ভব। পাশাপাশি পুলিশের কাজের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে আমাদের সকলকে ভাবতে হবে। বাহিনীর ভিতর থেকে সর্বোচ্চ ভালো করার তাগিদ রয়েছে এবং সেভাবে চেষ্টা করা হয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সামাজিক সহযোগিতার মাধ্যমে ইতিবাচক বাহিনী গড়ে উঠতে পারে।

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ সকলের প্রচেষ্টায় সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠুক এটাই প্রার্থনা।

(লেখাটি চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের ফেসবুক থেকে নেওয়া)



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com