নেপালে ভারতের আরও জোরদার ভূমিকা চায় যুক্তরাষ্ট্র
ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান গত জানুয়ারিতে মন্তব্য করেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেপালকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির অংশ বলে মনে করে।
তিনি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র যা আশা করছে তা হল নেপালে চীনা প্রভাব কমাতে ভারত আরও জোরদার ভূমিকা রাখুক, কারণ ঐতিহাসিকভাবেই নেপালে ভারতের প্রভাব বেশি থেকেছে।“
গত বছর নেপাল যখন মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশন নামে প্রায় ৬০ বিলিয়ন নেপালি রূপির একটি অনুদান অনুমোদন করে, তখনও যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একে অপরের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিল।
আবার ২০২০ সালের শেষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিব্বতের প্রতি সমর্থন দেখানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস করে।
আইনটি মার্কিন সরকারকে তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপকারী যে কোনও চীনা কর্মকর্তার উপর আর্থিক এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা দেয়।
নেপাল ও ভারতে তিব্বতি উদ্বাস্তুদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে।
২০২২ সালের মে মাসে, মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি অফ স্টেট আজরা জেয়া, যিনি আবার তিব্বত বিষয়ক সমন্বয়কারীও, তিনি কাঠমান্ডুতে তিব্বতি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছিলেন।
সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে এক চীনা বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছিলেন যে নেপালের উচিত ছিল আরও বিচক্ষণতা দেখানোর, কারণ এধরনে সফর নেতিবাচক বার্তা দেয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, চীনা সংবাদপত্রগুলি নেপাল সরকারের কিছু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ভারতীয় কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
চীন-নেপাল চুক্তি বাস্তবায়নে জোর
চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং যখন ২০১৯ সালে নেপাল সফর করেছিলেন তখন দুই দেশের প্রতিশ্রুতি এবং চীনের অবকাঠামো প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা এক অঞ্চল এক পথ প্রকল্প বাস্তবায়নের মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।
নেপালের জাতীয় এসেম্বলির স্পিকারের বর্তমান চীন সফরে সে বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
তিমিলসিনা বলেন, বিআরআই প্রকল্পের ১০ বছর হয়ে গেছে। এর অধীনে প্রকল্পগুলির গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা হয়েছে আমাদের মধ্যে।"
যদিও নেপাল ২০১৭ সালে বিআরআই স্বাক্ষর করেছিল, বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ এবং সরকারী সংস্থা জোর দিচ্ছে যে বড় প্রকল্পগুলি শুধুমাত্র চীনা ভর্তুকি দিয়ে তৈরি করা উচিত, কারণ চীনা ঋণ ভবিষ্যতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
জাতীয় পরিষদের স্পিকার বলেন, অতীতে করা চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় এসেম্বলিতে কোনও আইন প্রণয়ন করা উচিত কিনা তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
কবে চীন সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডা?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে কয়েক সপ্তাহ আগে দিল্লি সফর করা প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডা অদূর ভবিষ্যতে চীন সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডা বলেছেন যে গত মার্চে বোয়াও ফোরামে অংশগ্রহণের জন্য চীন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সহ অভ্যন্তরীণ ঘটনার কারণে, চীনা রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে সফরের তারিখ বদল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জাতীয় পরিষদের স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী জুলাই বা আগস্টে চীন সফর করতে পারেন এবং ওই সফরে প্রধানমন্ত্রী অতীতে করা চুক্তিগুলো বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারেন।
“আমি সেই সফরের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির কথা বলেছিলাম। তারা এতে রাজি হয়েছে কিন্তু তারিখ নিয়ে কোনও কথা হয়নি,”জানিয়েছেন তিমিলসিনা। সূত্র: বিবিসি বাংলা