#ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক ঈদ আনন্দ: অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস। #সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি তার সৃষ্টির সন্তুষ্টির মাধ্যমেই করা সম্ভব: উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার। #ধর্ম যার যার উৎসব সবার: ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়।

সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, ঈদ মোবারক। এই দিনটি আসলেই ত্যাগের মহিমায় একটি দিন। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এই ত্যাগ। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে এই ত্যাগের রীতিটি পালন করা হয়। মনে রাখতে হবে, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যেন ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারেন সেই প্রচেষ্টা থাকতে হবে। এই ঈদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের প্রিয় বস্তুকে ত্যাগ করার মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্টি করা। এখন সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্ট কিন্তু তার সৃষ্টির সন্তুষ্টির মাধ্যমেই করা সম্ভব।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৭৬১তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সংগীত শিল্পী, সেক্টর কমান্ডরস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ একাত্তরের কেন্দ্রীয় নারী কমিটির সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক, খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, ঈদ মোবারক। এই দিনটি আসলেই ত্যাগের মহিমায় একটি দিন। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এই ত্যাগ। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে এই ত্যাগের রীতিটি পালন করা হয়। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর আমল থেকেই এই রেওয়াজ চালু হয়ে আসছে। হাজার হাজার বছর পূর্বে মহান আল্লাহর নির্দেশে তিনি তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে সম্মত হন এবং প্রস্তুতিও নেন। মহান আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট ও সদয় হন। হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। আর এ কারণেই কোরবানি হচ্ছে ত্যাগের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করা। এটা ত্যাগের চূড়ান্ত নিদর্শন। ত্যাগের মধ্যেই এর সার্থকতা। ইসলামে এই যে কুরবানির শিক্ষা তা কি কেবল একটি পশু কুরবানির মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয়ে যায়? আসলে পশু কুরবানি করাটা হচ্ছে একটা প্রতীকী মাত্র। আল্লাহ-তায়ালা চান মানুষ যেন তার পশুসুলভ হৃদয়কে কুরবানি করে, তার আমিত্বকে কুরবানি করে আর সেই সাথে তার নিজের সমস্ত চাওয়া-পাওয়াকে আল্লাহর খাতিরে কুরবানি করে দেয়। ঈদে আমাদের দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি ঘটে আর পরস্পরের মাঝে ঈমানী ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয় এবং নিজেদের মাঝে হিংসা বিদ্বেষ দূর হয়ে এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যদি এমনটা হয় তাহলেই আমাদের এ ঈদ পালন ইবাদতে গণ্য হবে।
উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বলেন, প্রথমেই আমি সবাইকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই ঈদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের প্রিয় বস্তুকে ত্যাগ করার মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্টি করা। এখন সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্ট কিন্তু তার সৃষ্টির সন্তুষ্টির মাধ্যমেই করা সম্ভব। সৃষ্টিকর্তা সরাসরি সন্তুষ্ট করার সরাসরি কৌশল কিন্তু আমাদের জানা নেই। কিন্তু আমরা একটা পরম বানী জানি যে, জীবে দয়া করে যে জন সে জন সেবিছে ঈশ্বর। তার মানে কি? তার মানে হচ্ছে সৃষ্টি কর্তাকে, আল্লাহকে, ভগবানকে, শুখি করতে হলে তার সৃষ্টিকে দয়া করতে হবে, তবেই আল্লাহতালাকে খুশি করা যাবে। এই বিবেচনায় আজকের এই ঈদ সত্যিই ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। আমাদের এই দেশটিতে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পরেই তারা বুঝতে পেরেছিল যে, দ্বিজাতিবাদ তথ্যের ভিত্তিতে যে সীমান্তরেখা টানা হয়েছে সেটা যৌক্তিক হয়নি। এবং এই বিবেচনার ধারাবাহিকতায় যে বিষয়গুলো উচ্চারিত হয়েছে তা হলো সংস্কৃতি, ভাষা, তার পরিবেশ ও তার ঋতু প্রকৃতি একটি জাতি গঠনে মূল ভূমিকা রাখতে পারে। সুতরাং ধর্মের ভিত্তিতে বা দ্বিজাতিবাদ তথ্যের ভিত্তিতে যে সীমান্তরেখা টানা হয়েছিল সেটার কিন্তু ১৯৫০ এর পরেই বিরোধিতা করেছি। তারমানে জাতিবাদের ভিত্তিতে বিভেদ এবং যে বৈপিরতা সেটার বিরোধিতা বা এর বিপক্ষে আমাদের অবস্থান ছিল শুরু থেকে।
ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় বলেন, আজকে ভোরের পাতা সংলাপের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ত্যাগের মহিমায় ঈদ আনন্দ। ঈদ মানে ধনী-দরিদ্র মিলে মিশে এক সাম্যের আনন্দ। পেছনের দুঃখ দুর্দশাকে ভুলে গিয়ে আনন্দের উৎসবে মিলিত হওয়াই ঈদ। ঈদ-উল-আজহার আছে আরেকটি বিশেষ দিক। এদিন সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দেয়া হয়। ঈদ উল আজহার তাৎপর্য তাই মুসলিমদের কাছে বিশেষ অর্থ বহন করে। ঈদ আনন্দের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে: ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের নিকট উৎসবের আমেজ। বাঙালির জীবনে ঈদ সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়। ধনী-গরিবের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একই কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উৎসবের আনন্দ বাঙালির জীবনে ভিন্নমাত্রা প্রদান করে থাকে। মনে রাখতে হবে, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যেন ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারেন সেই প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বছরজুড়ে নানা প্রতিকূলতা, দুঃখ-বেদনা সব ভুলে ঈদের দিন মানুষ সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হন। ঈদগাহে কোলাকুলি সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে নতুন করে আবদ্ধ করে। ঈদ এমন এক নির্মল আনন্দের আয়োজন, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধির আনন্দে পরস্পরের মেলবন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হন এবং আনন্দ সমভাগাভাগি করেন।