
গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চাওয়া রিটকারী আইনজীবী ইউসুফ আলীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ (ফ্রিজ) করা হয়েছে।
এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় রিটকারীদের এই আইনজীবীর বিরুদ্ধে ১২ কোটি টাকা ফি’র বিনিময়ে সমঝোতার অভিযোগ ওঠে।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুতদের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকার বেশি ফি নেওয়ার কথা ‘পরোক্ষভাবে’ স্বীকার করেছেন আইনজীবী ইউসুফ আলী। তিনি বলেছেন, সমঝোতা করে নয়, মামলায় মুহাম্মদ ইউনূসকে পরাজিত করে চাকরিচ্যুত কর্মচারীদের ৪৩৭ কোটি টাকা আদায় করে দিয়েছি। সেখান থেকে মোটা অঙ্কের ফি ক্লায়েন্টরা আমাকে দিয়েছেন।
রোববার (৩ জুলাই) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এসব কথা বলেন। ইউসুফ আলী বলেন, ১২ কোটি টাকার কথা যে বলা হচ্ছে, তা টোটালি একটি ইমাজিনারি ফিগার। তবে আমি বড় অঙ্কের ফি পেয়েছি। আমার ক্লায়েন্টরা বড় অঙ্কের টাকা পেয়েছেন, আমাকে বড় অঙ্কের ফি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ক্লায়েন্টদের মধ্যে যারা তিন কোটি বা তার বেশি পেয়েছেন, তারা নিজেরা ঠিক করেছিলেন ১৫-২০ লাখ টাকা করে দেবেন। আমার ১০০ জন ক্লায়েন্ট তিন কোটি টাকার বেশি পেয়েছেন। এটা থেকে আপনারা ধারণা করতে পারেন আমি কত টাকা পেয়েছি। ক্লায়েন্টরা আমাকে হাসি মুখে ফি দিয়েছেন। তারা কারো কাছে অভিযোগ করেননি।
হিসাব অনুযায়ী ১০০ জন ক্লায়েন্ট যদি ১৫ লাখ করে ফি দেন, তাহলে আইনজীবী ইউসুফ আলী পেয়েছেন ১৫ কোটি টাকা। ১০০ ক্লায়েন্ট ২০ লাখ টাকা করে ফি দিলে আইনজীবী ইউসুফ আলী পেয়েছেন ২০ কোটি টাকা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইউসুফ আলী বলেন, জব্দ হওয়া সব অ্যাকাউন্টে কত টাকা ছিল, তা সঠিকভাবে বলতে পারব না। তবে চেম্বারের অ্যাকাউন্টে সোয়া দুই কোটি টাকা ছিল।
এদিকে মামলা সমঝোতার জন্য নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকম থেকে ১২ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠা আইনজীবী ইউসুফ আলীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। রোববার অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী নিজেই বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, আমার ছয়টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।
গত ৩০ জুন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় রিটকারীদের আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে সমঝোতার প্রসঙ্গ তোলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, আমরা শুনেছি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে তাদের মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে।
হাইকোর্ট বলেন, আদালতকে ব্যবহার করে অনিয়ম যেন না হয়ে থাকে। যদি সবকিছু আইন অনুযায়ী না হয়, তবে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হবে। কোর্ট ও আইনজীবীর সততা নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে।
এ সময় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে আরও বলেন, বাংলাদেশ কেন, উপমহাদেশের এমন কোনো আইনজীবী জন্ম নেননি যার ফি ১২ কোটি টাকা হবে।
এক পর্যায়ে আদালত ড. ইউনূসের আইনজীবীকে বলেন, আপনি কত টাকা ফি নিয়েছেন? তখন আইনজীবী বলেন, আমি ২০ লাখ টাকা নিয়েছি। আদালত বলেন, আপনি তো ২০ লাখ নিয়েছেন, কিন্তু চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আইনজীবী কীভাবে ১২ কোটি টাকা নেন?
পরে শ্রমিকরা কে কত টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, আদালত সেই তালিকা দাখিল করার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত নথিও দাখিল করতে বলা হয়। এ সময় আইনজীবীরা আদালতকে জানান চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা এখন পর্যন্ত ৩৮০ কোটি টাকা পেয়েছেন। বাকি ৮ শ্রমিকের মধ্যে ৪ জন দেশের বাইরে থাকায় তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। আর ৪ জন শ্রমিক মারা যাওয়ায় তাদের ওয়ারিশ জটিলতা নিরসন না হওয়ায় অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। শ্রমিকদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১২ কোটি টাকা নেওয়ার খবর একটা গুজব। অখ্যাত নিউজপোর্টাল কোনো তথ্য ছাড়া নিউজ ছেপেছে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন দায়ের করা হয়। সেসময় আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কাছে শ্রমিকদের পাওনা আড়াইশ কোটি টাকার বেশি। পাওনা টাকার দাবিতে কোম্পানিটির অবসায়ন চাওয়া হয়েছে।