
ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা মতলব উত্তরে কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। ইনসেটে ভাঙাচোরা অংশ।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন এখন জীবন ঝুঁকির আরেক নাম। প্রতিদিনই ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সেবা দিচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিব, সদস্যসহ কর্মচারীরা। সেবা নিতে আসা শত শত মানুষও আতঙ্কে থাকেন কখন মাথার ওপর ভেঙে পড়ে ভবনের কোনো অংশ।
জানা যায়, ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের জন্মলগ্ন থেকে কার্যক্রম চলত একটি একচালা টিনের ঘরে। পরে ২০০৫ সালে পরিষদের নিজস্ব ৬৬ শতাংশ জমির ওপর একটি দ্বিতল ভবন এবং পাশে একটি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে ভবনটি বর্তমানে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
পরিষদ ভবনের ছাদ থেকে প্রতিদিনই পলেস্তারা খসে পড়ে। পোকায় খাওয়া দরজা জানালা খুলে পড়ে যাচ্ছে, জানালার গ্রিল একেবারে মরিচায় ক্ষয়প্রাপ্ত। ভবনের পিছনের পশ্চিমাংশে পিলারে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের ফাটল, এমনকি একটি পিলার মূল ভবন থেকে আলাদা হয়ে গেছে। কয়েকটি জায়গায় ফ্লোর ডেবে গেছে, যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
ভবনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ হলো পরিষদের গ্রাম আদালত কক্ষ। এজলাস কক্ষ ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ায় বিচারকার্য পরিচালনা করতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি নিয়ে।
সেবা নিতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, যে অবস্থার মধ্যে অফিস চলছে, তাতে ভয় হয় কখন ছাদ ভেঙে পড়ে আমাদের ক্ষতি হবে। আরেক বাসিন্দা নিলুফা বেগম বলেন, মাঝে মাঝেই মাথার ওপর কিছু না কিছু পড়ে। তবুও কাজের প্রয়োজনে আসতেই হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ইউনিয়ন পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা কার্যক্রম চলার পরও কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তাদের দাবি, দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করে নিরাপদ পরিবেশে সেবা নিশ্চিত করা হোক। সরকারি দপ্তরের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না হলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে এমন আশঙ্কা এখন কলাকান্দাবাসীর মনে গভীরভাবে ভর করেছে।
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মো. সোহাগ বলেন, ভবনটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে কাজ করতে হয়। কয়েকবার বড়সড় অংশ খসে পড়ে। আমরা জীবনের ঝুঁকি জেনেও মানুষকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।
ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মেহেদী হাসান বলেন, আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে চেয়ারম্যানের বসার ঘরটি কোনো রকমে সংস্কার করেছি। কিন্তু পুরো ভবন সংস্কারের মতো অর্থ আমাদের নেই। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বহুবার আবেদন করেছি, চিঠি পাঠিয়েছি কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই জরুরি ভিত্তিতে এই জরাজীর্ণ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মাণ করা হোক।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে আমরা অবগত। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে।