
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে প্রতিদিনই দেখা যায় ফুটপাতের খাবারের স্টলে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। আতাতুর্ক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাগনভূঞা উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, একাডেমী হাই স্কুলসহ নানা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাসের আগে-পরে এবং বিরতির ফাঁকে ছুটে আসে এমন খাবারের দিকে। স্বল্পমূল্য, সহজলভ্যতা এবং স্বাদের বৈচিত্র্য—এই তিন কারণেই শিক্ষার্থীদের ফুটপাতমুখী ঝোঁক বাড়ছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, তাদের অনেকেরই বাজেট সীমিত। ফলে অল্প টাকায় পেট ভরানোর জন্য চটপটি, ফুচকা, ঝালমুড়ি, সিঙ্গারা, বেলপুরি কিংবা ভাজাপোড়া—এসব খাবারই সহজ সমাধান। রেস্টুরেন্টে গিয়ে সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই; ফুটপাতেই দাঁড়িয়ে দ্রুত খাবার পাওয়া যায়। ঝাল-টক-মশলাদার স্বাদ তরুণদের কাছে যেভাবে আকর্ষণীয়, ঠিক ততটাই আকর্ষণ তৈরি করে নতুন স্টল, নতুন স্বাদ, নতুন ট্রেন্ড। ছোটবেলা থেকেই এসব খাবারের প্রতি অভ্যস্ত অনেক শিক্ষার্থী কলেজ-ইউনিভার্সিটিতেও সেই অভ্যাসটিই ধরে রাখে।
তবে খাবারের এই লোভের পেছনে লুকিয়ে আছে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি। ফুটপাতের বেশিরভাগ খাবারই দীর্ঘক্ষণ খোলা অবস্থায় রাখা হয়। রাস্তার ধুলোবালি, গাড়ির ধোঁয়া, মাছি বা নোংরা পরিবেশের সংস্পর্শে খাবার সহজেই দূষিত হতে পারে। কোথায়, কীভাবে, কোন উপকরণ দিয়ে খাবার তৈরি হচ্ছে—তার ওপর নজর রাখার সুযোগ নেই ভোক্তাদের। নোংরা পানি, বাসি কিংবা নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগও প্রায়ই শোনা যায়।
চিকিৎসকদের মতে, ফুটপাতের এমন খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে পেটের জটিলতা, ফুড পয়জনিং, ডায়রিয়া, স্টোমাক ইনফেকশন, গ্যাস্ট্রিকসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশু-কিশোরদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম হওয়ায় তাদের ঝুঁকি আরও বেশি। এ ধরনের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
স্বাদ, সস্তা দাম আর সহজলভ্যতার আকর্ষণে ফুটপাতের খাবার শিক্ষার্থীদের জীবনের অংশ হয়ে উঠলেও এর পেছনে যে উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যঝুঁকি লুকিয়ে আছে—তা অনেকেই বুঝতে পারলেও উপেক্ষা করছে। স্থানীয়দের মতে, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্টল মালিকদের নিয়মিত মনিটরিং এবং স্কুল-কলেজের পাশে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে।