নামাজের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ
‘নামাজের মিষ্টতা’ বা প্রশান্তি বোঝাতে কোরআনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ব্যবহার হয়েছে। আর তাহলো খুশু। সুরা মুমিনুনের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘সফল তারা, যারা তাদের নামাজে খুশু অর্জন করে’। (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ২)।
খুশু মানে গভীর মনোযোগ, বিনয় ও আল্লাহর সামনে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। যখন কেউ নামাজে নিজেকে আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণ করে দিতে পারে তখন সে পৃথিবীর চিন্তা ভুলে গিয়ে শুধু আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করে। এর ফলে নামাজ হয়ে ওঠে আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যম। যেখান থেকে মনের অন্ধকার দূর হয়, হৃদয় আলোকিত হয়, আর জীবন ভরে ওঠে প্রশান্তিতে।
নামাজে কীভাবে সেই প্রশান্তি লাভ করা যায়?
নামাজে খুশু অর্জন করা অসম্ভব নয়, তবে এতে কিছুটা অনুশীলন, ধৈর্য ও সচেতন প্রচেষ্টা দরকার। নিচে এমন পাঁচটি বাস্তব পরামর্শ তুলে ধরা হলো, যা অনুসরণ করলে নামাজে মনোযোগ ও প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।
১. নামাজের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করুন
বাড়িতে নামাজ পড়লে জায়গাটিকে পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও শান্ত রাখুন। এটি এমন একটি স্থান হোক, যেখানে আপনি শুধু ইবাদতের অনুভূতি পাবেন। হালকা সুগন্ধ ব্যবহার করুন, ক্যালিগ্রাফি বা কোরআনের আয়াত টাঙিয়ে দিন, জায়নামাজ ও তসবিহ সাজিয়ে রাখুন। এটি যেন আপনার ঘরের ছোট্ট মসজিদ হয়। এমন পরিবেশে নামাজ পড়লে মনোযোগ অনেক বেড়ে যায়।
২. নামাজের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক রাখুন
নামাজের আগে অজু করে বিশেষ কোনো পোশাক পরলে মন প্রস্তুত হয়। অনেকের জন্য এটি মানসিকভাবে আলাদা প্রশান্তি দেয়। সাদা রঙেরে পোশাক পরতে পারেন। কারণ, সাদা রঙের পোশাক মৃত্যুর স্মৃতি করিয়ে দেয়। আবার সাদা রং জান্নাতেরও প্রতীক। এভাবে পোশাকের মাধ্যমেও ইবাদতের গভীরতা বাড়ে।
৩. সাদামাটা জায়নামাজ ব্যবহার করুন
নামাজে খুব সহজেই যাদের মনোযোগ ভিন্ন কোনো দিকে হারিয়ে যায়, তাদের জন্য অলঙ্কৃত জায়নামাজ বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে। তাই সাদামাটা ও রঙিন নকশাবিহীন জায়নামাজ ব্যবহার করুন। এতে চোখ ও মন দুটোই স্থির থাকে।
৪. নামাজের আগে কিছু সময় শান্ত ও নিরব থাকুন
টেলিভিশন দেখা, ফোন স্ক্রল করা বা কাজের চাপে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় হঠাৎ নামাজে দাঁড়ালে মনোযোগ আসে না। নামাজের আগে কিছুটা সময় নিরবতা ও একান্ত চিন্তার মধ্যে কাটান। ফোন দূরে রাখুন, নিজেকে প্রস্তুত করুন যেন আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে যাচ্ছেন। এতে নামাজে মনোযোগ অনেকটা বাড়বে।
৫. নামাজের বাইরেও আল্লাহকে স্মরণ করুন
নামাজে মনোযোগী হতে হলে নামাজের বাইরেও আল্লাহর স্মরণ করতে হবে। নিয়মিত কোরআন পড়ুন, জিকির করুন, প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে ভাবুন, আলেমদের সান্নিধ্যে থাকুন।
কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আমাকে স্মরণ করে, তারাই সফল। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)।
যে নামাজে খুশু থাকে, সেটিই মানুষকে বদলে দেয় এবং চিন্তায়, আচরণে ও হৃদয়ের প্রশান্তি দান করে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এমন নামাজ আদায়ের তৌফিক দিন, যেখানে আমরা তার সঙ্গে সত্যিকার অর্থে সংযুক্ত হতে পারি এবং নামাজের সেই মিষ্টতা অনুভব করতে পারি।