
ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে ফেনী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দিসহ শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন নতুন রোগী ভর্তির ফলে শিশু ওয়ার্ডে তৈরি হয়েছে তীব্র চাপ। নির্ধারিত সক্ষমতার প্রায় চারগুণের বেশি রোগী বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালটিতে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শিশু ওয়ার্ডে নির্ধারিত ২৬টি বেড থাকলেও মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) দুপুর পর্যন্ত সেখানে ভর্তি ছিল ১০৫ জন শিশু। রোগীর চাপ সামাল দিতে বেডের পাশাপাশি করিডোর, এমনকি মেঝে পর্যন্ত ব্যবহার করতে হচ্ছে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পেয়েছে ৩৪ জন রোগী।
এ অবস্থায় হাসপাতালজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে মানবিক ও চিকিৎসা সংকট। চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক কর্মীদের উপর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। একদিকে রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে ওয়ার্ডের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করাও হয়ে উঠেছে চ্যালেঞ্জ।
হাসপাতালের দায়িত্বশীল চিকিৎসকরা জানান, ঋতু পরিবর্তনের এ সময়টিতে শিশুদের বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি। বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, ঠান্ডা-ধুলাবালি এড়িয়ে চলা এবং ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
এদিকে স্বজনরা অতিরিক্ত রোগীর চাপ মোকাবিলায় অস্থায়ী বেড বৃদ্ধি, অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ এবং পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
ছাগলনাইয়ার রুহতিয়া থেকে ৩ মাস বয়সী শিশু তাকরীম নুরকে নিয়ে আসা তার মা তানজিনা আক্তার বলেন, “শিশুর ঠান্ডা ও কাশির অবস্থা খারাপ হওয়ায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে বেড না পেয়ে প্রথম দিন মেঝেতে রাখতে হয়েছে। ডাক্তার-নার্স যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন, তবে রোগী বেশি হওয়ায় কষ্ট হচ্ছে।”
রাধানগর ইউনিয়ন থেকে ১ বছর বয়সী শিশু সাইমুমকে নিয়ে আসা মিজানুর রহমান বলেন, “ছেলে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। ভর্তি করাতে এসে দেখি জায়গা নেই। করিডোরে চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পরিবেশটা খুবই চাপের।”
গত তিন দিন ধরে মেঝেতে চিকিৎসাধীন সোনাগাজীর কুঠিরহাট এলাকার শিশু রাজ দাশের ঠাকুমা সূর্য রাণী বলেন, “রোগী বেশি, জায়গা কম। তবুও ডাক্তার-নার্সরা যে চেষ্টা করছেন, সেটাই বড় কথা। শুধু চাই, আরও কিছু বেড আর লোকবল দেওয়া হোক।”
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স তানিয়া সুলতানা রুমা বলেন, “রোগীর সংখ্যা নির্ধারিত বেডের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে একসাথে এত রোগীর সেবা দিতে গিয়ে স্টাফদের উপর চাপ বেড়ে গেছে। শিশুদের যেন নিরাপদে রাখা এবং সঠিক চিকিৎসা দেওয়া যায়, এটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, “ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। শিশুদের ঠান্ডা পানি ও ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। বাসি বা খোলা খাবার খাওয়ানো যাবে না, তাজা ও পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। রোগীর সংখ্যা অতিরিক্ত হওয়ায় আমরা স্বাভাবিকভাবেই হিমশিম খাচ্ছি। হাসপাতালেও জনবল সংকট রয়েছে, তারপরেও সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।”