
সংগৃহীত ছবি
সাতক্ষীরার স্বনামধন্য পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ইনচার্জ এবং কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে মিথ্যা, বানোয়াট ও মানহানিকর ভিডিও বক্তব্য প্রচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সচেতন মহলের অভিযোগ, জেলার আলোচিত ‘লেডি ডাকাত’ মাসুরা বেগম ও তাঁর সহযোগীরা যোগসাজশে ওই ভিডিও তৈরি করে প্রচার করছেন, যাতে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মানহানি করে নির্বিঘ্নে তাঁদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া যায়। এতে জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে চুরি ও ডাকাতি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা শ্রমিক লীগ কর্মী ও মানবাধিকার কর্মী পরিচয়ে মাসুরা বেগম (৩২) নামের এক নারী দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে অজ্ঞান পার্টি, চুরি, ডাকাতি, ব্ল্যাকমেইল ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের কিছু অসাধু সদস্য, ভুয়া সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তির সহযোগিতায় তিনি ও তাঁর সহযোগীরা আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বারবার ছাড় পাচ্ছেন। এমনকি গ্রেপ্তারের পরও ১০–১৫ দিনের মধ্যে জামিনে মুক্তি পান।
থানা সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কালিগঞ্জ উপজেলার মধুসূদন কর্মকারের বাড়িতে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনায় মাসুরা বেগমের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায় পুলিশ। তাঁর মোবাইল ফোনের তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে সাতক্ষীরা শহর থেকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, ডাকাতির সময় চুরি হওয়া প্রায় ১০ ভরি স্বর্ণ তিনি সাতক্ষীরায় বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন। দাম কম প্রস্তাব পাওয়ায় পরে তিনি শ্যামনগর সদরের একটি জুয়েলার্সে স্বর্ণগুলো বিক্রি করেন। এসব তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
আরও জানা গেছে, বর্তমানে সাতক্ষীরা শহরের জামায়াত অফিসসংলগ্ন একটি ভাড়া বাসা থেকে মাসুরা বেগম ও তাঁর সহযোগীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, শ্যামনগরের দুই সন্তানের জননী, ডর্জন খানেক বিয়ের হোতা মোছাঃ মাসুরা বেগম (৩২) ভেটখালি এলাকার কুখ্যাত চোর সুবান-এর স্ত্রী। সুবান একসময় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আহত হয়ে পঙ্গু হন। ২০১৮ সালে শ্যামনগর বিআরটিসি কাউন্টার মালিক মতির সঙ্গে সুন্দরবনের ডাকাত দলের সদস্য তাঁর দেবরের জন্য ইয়াবা সরবরাহের সময় পুলিশ তাঁকে আটক করে। ২০২৩ সালেও তাঁর বাড়ি থেকে ইয়াবাসহ আটক করে থানা পুলিশ।
তাঁর বাবা আবু বক্কর ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে মাদক ও চুরির একাধিক মামলা রয়েছে। একইভাবে তাঁর মামা রেজাউল ও রফিকুলের বিরুদ্ধেও জেলার বিভিন্ন থানায় চুরি, ডাকাতি, হত্যা ও চাঁদাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, মাসুরা বেগম অতীতে নাসির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন। ব্যর্থ হয়ে তিনি ২০১৮ সালে নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে কালিগঞ্জ থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করেন, যা পরবর্তীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দেয়।
সচেতন মহল দাবি করেছে, মাসুরা বেগমের মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করে তাঁর সহযোগীদের শনাক্ত করা এবং দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে চুরি, ডাকাতি, ব্ল্যাকমেইল ও মাদক ব্যবসাসহ সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।