শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: বাংলাদেশে এলো তারেক রহমানের বুলেটপ্রুফ গাড়ি, দাম কত?   হেলিকপ্টারে বিমানবন্দর যাবেন খালেদা, মধ্যরাতে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স   নড়াইল-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন মনিরুল ইসলাম   লাবিব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীরের সঙ্গে ইউএই রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ    পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন   কেরাণীগঞ্জে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া   খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সেক্রেটারিয়েট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন'র দোয়া মাহফিল    
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
আওয়ামী আমলে ব্যাংক লুটপাট: ৮৯% ঋণই এখন ঝুঁকিপূর্ণ
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫, ৫:৪১ পিএম

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার আমলে ব্যাংক দখল ও নজিরবিহীন লুটপাটের নতুন নতুন কৌশল উদ্ঘাটিত হচ্ছে। আর ব্যাংক খাতের আর্থিক ক্ষত ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। এই খাতে মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা। যা মোট সম্পদের ৯৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার ঋণই ঝুঁকিপূর্ণ। যা মোট ঋণের ৮৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বিগত সরকারের শুরুর দিকে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ও ঋণ ৫০ শতাংশের বেশ নিচে ছিল। পরবর্তী সময়ে ব্যাংকগুলোতে নজিরবিহীন লুটপাটের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ভয়াবহভাবে বেড়ে যায়। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের মধ্যে সিংহভাগই হচ্ছে বিতরণ করা ঋণ। এর বড় অংশই নেওয়া হয়েছে জালিয়াতির মাধ্যমে। যা ব্যাংক খাতের জন্য গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

ব্যাংক খাতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি হালনাগাদ একটি প্রতিবেদন থেকে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে, আগামীতে খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে গেলে, ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি আরও বাড়বে। তখন মূলধনেও টান পড়বে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের মাত্রা যেমন আরও বেড়ে যাবে। তেমনি বেড়ে যাবে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণও।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবের চেয়ে ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ প্রকৃতপক্ষে আরও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হিসাব করেছে ব্যাংকগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। বাস্তবে ব্যাংকগুলোতে আরও অনেক জাল-জালিয়াতির ঘটনা অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। যেগুলোর হিসাব এর মধ্যে নেই। অনেক ঋণের বিপরীতে জামানত যেমন নেই, তেমনি সংরক্ষিত জামানতও ভুয়া বা অতি মূল্যায়িত। জামানতের সঠিক পরিসংখ্যান উদ্ঘাটিত হলে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি অনেক বৈদেশিক ঋণের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নেই। সেগুলো ব্যাংক ও উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে গোপন করা হয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণও আছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন বন্ডে বা শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে। সেগুলোর একটি বড় অংশ এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকের বন্ডে, বেক্সিমকো গ্রুপের শেয়ারে, পদ্মা ব্যাংকে বিনিয়োগকৃত অর্থের একটি বড় অংশ ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে পরিণত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকার সম্পদই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যা মোট সম্পদের ৯৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মোট সম্পদের মধ্যে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। বিতরণ করা ঋণ বা বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর অন্যতম প্রধান সম্পদ। বিতরণ করা ঋণের মধ্যে ১৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকাই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। যা মোট ঋণের ৮৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এসব ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এগুলোর বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত নেই, ঋণ পরিশোধের সীমা পেরিয়ে গেলেও আদায় হচ্ছে না, খেলাপি হয়ে পড়েছে। খেলাপির প্রথম ধাপ নিম্নমান থেকে আদায় অযোগ্য ঋণে পরিণত হয়েছে। ঋণের বিপরীতে যথাযথ প্রভিশন নেই। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে চাহিদা অনুযায়ী মূলধনও নেই। এখন খেলাপি ঋণ যত বাড়ছে, ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদও তত বেড়ে যাচ্ছে। আগে ব্যাংকগুলোর নিট আয় ভালো ছিল। যে কারণে ঋণখেলাপি হলেও এর বিপরীতে প্রভিশন রেখে ও মূলধন বাড়িয়ে ঝুঁকি কমিয়ে ফেলত। এখন সেটি সম্ভব হচ্ছে না। কারণ গড় হিসাবে ব্যাংকগুলোর এখন আয় হচ্ছে না। উলটো লোকসান দিচ্ছে। যে কারণে উদ্বৃত্ত তহবিল থাকছে না, যে ওই তহবিল থেকে বাড়তি অর্থ নিয়ে প্রভিশন করে ঝুঁকি কমাবে। আয় কমায় ও খেলাপি ঋণ বাড়ায় ব্যাংক খাতে এখন প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। চলতি বছর শেষে এ ঘাটতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে আরও দেখা যায়, ঋণ ঝুঁকি ২০২৪ সালের মার্চে ছিল ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ। এক বছরে এ খাতে ঝুঁকি বেড়েছে দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর আগে এ ঝুঁকি আরও কম ছিল। ২০২৩ সালের মার্চে ছিল ৮৮ দশমিক ১৮ শতাংশ, ২০২২ সালের মার্চে ছিল ৮৮ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২১ সালের একই মাসে ছিল ৮৭ দশমিক ৬০ শতাংশ।

বিগত সরকারের শুরু থেকেই ব্যাংক খাতে লুটপাট শুরু হয়। ২০১৭ সালে ব্যাংক দখলের প্রক্রিয়া শুরু হলে লুটের প্রবণতা বেড়ে যায়। ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা নামে-বেনামে লুট করে সেগুলোর বড় অংশই বিদেশে পাচার করা হয়েছে। যে কারণে এসব ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় পড়েছে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ব্যাংক দখল শুরুর আগে ২০১৬ সালে ব্যাংক খাতে মোট সম্পদ ছিল ১১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মোট ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ছিল ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। যা মোট সম্পদের ৬৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ওই সময়ে মোট বিনিয়োগ ও ঋণ ছিল ৮ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ ছিল ৬ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। মোট ঋণের ৭৩ দশমিক ৫২ শতাংশই ছিল ঝুঁকিপূর্ণ।

বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ও ঋণের ওঠানামা করলেও ২০২১ সাল থেকে তা বেড়ে যাচ্ছে। এর আগে করোনার সময় ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের হার বেড়ে গিয়েছিল। ২০২০ সালের মার্চে ৮৮ দশমিক ৩০ শতাংশে ওঠেছিল। যা বর্তমানের চেয়ে কম। কারণ ওই সময়ে ঋণ আদায় হয়নি, উদ্যোক্তাদের পরিশোধের সক্ষমতা ছিল না।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com